এ পি জে আব্দুল কালামের মতো কে না হতে চায়! আপত্তি শুধু তার চুলের কায়দা নিয়ে। আজকের পড়ুয়ারা ওই ‘স্টাইল’ মানতে নারাজ।
মহর্ষি বিদ্যামন্দিরের শিলচর শাখা আজ প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালামের জন্মদিন ‘আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী দিবস’ হিসেবে পালন করে। তিনটি বিভাগে বিভক্ত হয়ে ছাত্রছাত্রীরা কালাম ও তাঁর বিজ্ঞান ভাবনা নিয়ে আলোচনা করে। নানা কথায় একটিই ইচ্ছে প্রকাশ পায়— এক দিন যদি কালামের মতো হতে পারি! এমন মানুষটির মর্যাদায় পৌঁছতে হলে যে কঠোর পরিশ্রম আর নিরন্তর সাধনার প্রয়োজন, তা-ও তাদের অজানা নয়। অস্মিতা মজুমদার, রাজশ্রী রায়রা সব করতে রাজি বলে জানিয়ে দেয়। অষ্টম শ্রেণির অমিশা সিংহ বড় হয়ে চিকিৎসক হতে চায়। তবে আর কালামকে ছোঁবে কী করে! চটজলদি জবাব তার, ‘‘ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বড় কথা নয়, কালামের মতো মানুষ হতে চাই।’ একই লক্ষ্য অভয় শর্মার। কালামের অনুকরণেই নিজের জীবন গড়তে চায় সে।
কতটা অনুকরণ করার ইচ্ছে? ওই চুলের স্টাইলটাও? ধন্দে পড়ে যায় অভয়। পরে বলেই ফেলে মনের কথাটা, ‘ওই রকম চুল আঁচড়ালে সবাই খেপাবে। হাসাহাসি করবে।’
কিন্তু কালামকে নিয়ে কি খুব হাসাহাসি হতো? ধীরে ধীরে শোনায়, ‘না, তা নয়। তার মতো মানুষকে চুল নিয়ে কে বলবে! দ্বিতীয়ত, তার স্কুলজীবনে সেটা মেনে নেওয়া গিয়েছে। আজকের দিনে মুশকিল। চুল ওই রকম রেখে আমাদের পক্ষে ঘর থেকে বের হওয়া কঠিন।’ উপস্থিত ছাত্ররা সবাই তার কথায় সায় দেয়। কোনও ছেলের কালামের মতো চুল যে মেয়েদেরও পছন্দ নয়, হেসে তা প্রকাশ করে ছাত্রীরাও।
মহর্ষি বিদ্যামন্দিরের শিলচর শাখার অধ্যক্ষা সমিতা দত্ত বলেন, ‘কালামকে শুধু ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী বা মিসাইলম্যান বলে শেষ করা যায় না। তিনি আসলে আজীবন এক শিক্ষক ছিলেন। প্রতি বছর তার জন্মদিন এভাবে উদযাপনের অঙ্গীকার করেন অধ্যক্ষা। ছাত্রছাত্রীদের আলোচনায় প্রশ্নকর্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দিব্যেন্দু দত্ত ও শর্বরী দেবরায়। বিভিন্ন বিভাগে অংশ নেয় অদ্রিশ বিবেক সিংহ, শুভম মজুমদার, ময়ূরাক্ষী পাল, পরেথ্রম্বা হুড্রম, দেবদত্তা গোস্বামী, জ্ঞানেন্দ্র দাস, মণিসীতা দাস কানুনগো, সৃঞ্জয়কুমার ভরদ্বাজ, প্রশান্ত পুরকায়স্থ, রোহিতাশ্ব দত্তচৌধুরী, সত্যজিৎ কুন্ডু, স্বর্ণালী মজুমদার, তুহিন দাস ও দিব্যতনু দেব। তারা মূলত বিজ্ঞানভিত্তিক প্রজেক্ট উপস্থাপন করে কালামের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। ছবিটা এক ছিল করিমগঞ্জেও। দেখতে অনেকটা মানবশৃঙ্খলের মতো। কিন্তু আসলে মানবশৃঙ্খল নয়। এক ছাত্র অপর ছাত্রের পাশে দাঁড়িয়ে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালামের ‘ইন্ডিয়া ভিশন ২০২০’ সার্থক করার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে দাঁড়াল। শহরের স্টেশন রোড এলাকার গাঁধীজির মূর্তির পাদদেশ থেকে ব্রিজ রোড পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীরা প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। প্ল্যাকার্ডগুলোতে সমাজের বিভিন্ন ধরণের দাবি তুলে ধরা হয়। হাজারখানেক ছাত্রছাত্রী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। স্টেশন রোড এলাকায় ছাত্রছাত্রীরা সাফাই অভিযান পালন করে। এ পি জে আব্দুল কালামের স্বপ্ন ছিল ‘সুপার ইন্ডিয়া’ গড়ার। তাই ভারতের প্রতিটি নাগরিক যাতে কালামের এই স্বপ্নপূরণে এগিয়ে আসে, সেই আহ্বান জানায় ছাত্ররা। অনুষ্ঠানে আব্দুল কালামের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন পরিষদীয় সচিব কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, ডেভেলপমেন্ট চেয়ারম্যান উত্তম মজুমদার, অতিরিক্ত জেলাশাসক অরুণাভ দে।