বোনের দায়ের করা অর্থ প্রতারণার মামলায় বিব্রত হয়েছেন অভিনেতা দম্পতি তৌকির আহমেদ ও বিপাশা হায়াত। তৌকির আহমেদ বলেছেন, বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত ও অস্বস্তিকর।
তিনি বলেন, ‘স্রেফ আমাদের সুনামের ওপর আঘাত হানতেই এই মামলা দায়ের।’
বোন তানজিন হায়দারের কাছ থেকে `নক্ষত্রবাড়ি` রিসোর্ট নির্মাণে দেড় কোটিরও বেশি টাকা গ্রহণের কথা স্বীকার করলেও সে অর্থের সবটাই তাদের ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তৌকির।
তিনি বলেন, ‘সব অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রমাণও আমার কাছে রয়েছে।’
তৌকির পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠিত একটি ব্যবসায়ে নিজেরাও অংশীদার হতে চান বলেই আমার বোন ও দুলাভাই এমন একটি কাজ করলেন।’
তিনি বলেন, `পারিবারিক বিষয়টি নিয়ে বাইরে কথা বলা লজ্জার। কিন্তু এখন যেহেতু সবকিছুই প্রকাশ্য তখন আর রাখ-ঢাক করার সুযোগ নেই। পুরো বিষয়টি আদালতেই মোকাবেলা করা হবে।`
সোমবার সকালে এই দম্পতির বিরুদ্ধে তাদের মালিকানাধীন ‘নক্ষত্রবাড়ি’ রিসোর্ট ও কনভেনশন সেন্টার নির্মাণে অর্থ প্রতারণার মামলাটি দায়ের করেন তৌকিরের সুইডেনপ্রবাসী মেঝ বোন তানজিন হায়দায়।
দেড় কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলাটি করেছেন তিনি।
Nokkhotrobariআদালত মামলাটি আমলে নিয়ে শুনানি শেষে আগামী ৪ এপ্রিল তৌকির আহমেদ ও বিপাশা হায়াৎকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন।
নির্দেশ মেনে ৪ এপ্রিল আদালতে হাজির থাকবেন বলেই জানান তৌকির। তবে এর আগে আগামীকাল মঙ্গলবার তিনি ও বিপাশা হায়াৎ একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেবেন বলেও জানান এই অভিনেতা।
শ্যুটিংয়ের কাজে সোমবার কক্সবাজারে অবস্থান করছিলেন তৌকির। সেখান থেকে তিনি বলেন, `ঢাকায় ফিরেই এ বিষয়ে কাজ শুরু করবো।`
তবে এরই মধ্যে আইনি লড়াইয়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে নিশ্চিত করে তৌকির আহমেদ জানান, তার বন্ধু ব্যারিস্টার ওমর সা`দাত আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন।
তৌকির বলেন, `আমি জানি সত্যই এখানে টিকে থাকবে।`
বোন ও দুলাভাইয়ের কাছ থেকে দেড় কোটির বেশি টাকা নিয়ে `নক্ষত্রবাড়ি` বানিয়েছেন সে কথা স্বীকার করে তৌকির বলেন, `তাদের সব টাকা আবার ফেরতও দেওয়া হয়েছে।`
`তারা কি ব্যবসার অংশীদার হিসেবে অর্থ দিয়েছিলেন?`– এ প্রশ্নের জবাবে তৌকির আহমেদ বলেন, `তারা অর্থ দিয়েছিলেন আমাকে সহায়তা করার জন্যই। সহায়তা নিয়ে সে অর্থ আবার ফেরত দিয়েছি। এর মধ্যে কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই। `
এত বিপুল অংকের অর্থ নিশ্চয়ই কেউ কাউকে এমনি এমনি দেয় না। তাদেরও নিশ্চয়ই ব্যবসায় অংশ হওয়ার আগ্রহ ছিলো`– একথার জবাবে তৌকির আহমেদ বলেন, ‘আমি ছোটভাই হিসেবেই তাদের কাছ থেকে অর্থ নিয়েছিলাম।’
এদিকে, মামলাটি দায়েরের পরপরই তানজিন হায়দার অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলেন, ‘আমি শিক্ষকতা করে তৌকিরের পড়াশুনার খরচ চালিয়েছি। তাকে মাতৃস্নেহে লালন-পালন করেছি। বিপাশাকেও অত্যন্ত স্নেহ করি। তারা আমার সাথে প্রতারণা করবে এমনটা কখনও চিন্তাও করিনি।’
‘তৌকিরের সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক, অথচ আমার সঙ্গে এই প্রতারণা! ’– বিস্ময়ের সঙ্গে বলেন তানজিন হায়দার।
তার বোনের এই খেদোক্তির কথা তৌকির আহমেদকে জানালে তিনি বোনের ভালোবাসা ও স্নেহের দাবি অস্বীকার করে বলেন, ‘৮০’র দশকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি দেশ ছেড়ে চলে যান তার পক্ষে আমাকে শিক্ষকতা করে মাতৃস্নেহে লালন-পালন করার সুযোগ ছিলো না।’
` অথচ ভালোবাসা থেকেই তো বোন ও দুলাভাই আপনাকে দেড় কোটি টাকা দিয়েছেন, তা কি অস্বীকার করবেন?`– এ প্রশ্নে তৌকির বলেন, `অস্বীকার করছি না। সময়মতো তা ফেরতও দিয়ে দিয়েছি।`
মামলার বিবরণে জানা যায়, বাদিনী তানজিন হায়দার ও তার স্বামী সৈয়দ আলী হায়দার সুইডেনপ্রবাসী। বাদিনী, তার স্বামী, তৌকির ও বিপাশা মিলে ঢাকার অদূরে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার রাজেন্দ্রপুরের রাজবাড়ী নক্ষত্রবাড়ী রিসোর্ট অ্যান্ড কনভেনশন সেন্টার নির্মাণের জন্য সম্মত হন।
বাদিনীর স্বামী আলী হায়দার জমি ক্রয়, রিসোর্ট ও কনভেনশন সেন্টার নির্মাণের জন্য টাঙ্গাইল জেলায় তার পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করেন ও বিদেশে উপার্জিত টাকা এ খাতে বিনিয়োগ করেন।
বাদিনীর স্বামী ট্রাস্ট ব্যাংকে বিদেশি মুদ্রা হিসাব (এফসি অ্যাকাউন্ট) খোলেন। উক্ত অ্যাকাউন্টের নমিনি ও এককভাবে টাকা উত্তোলনের ক্ষমতা দেওয়া হয় তৌকির আহমেদকে।
ওই অ্যাকাউন্ট থেকে তৌকির বাদিনী ও তার স্বামীর পাঠানো ১ লাখ ৭৭ হাজার ৪৮২ মার্কিন ডলার উত্তোলন করেন। এছাড়াও বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৫ লাখ টাকা নগদ হিসেবেও আসামিদের দেওয়া হয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশি মুদ্রায় এ অর্থ ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকারও বেশি।
এ বিষয়ে তৌকির আহমেদের বক্তব্য, তিনি ২৪ কিস্তিতে তার বোন ও দুলা ভাইয়ের কাছ থেকে ওই অর্থ নেন। এবং পরে চারটি কিস্তিতে তা পরিশোধ করেন।
কত টাকা ফেরত দিয়েছেন জানতে চাইলে তৌকির বলেন এক কোটি ৪০ লাখ টাকা।`
তৌকির আহমেদরা দুই ভাই তিন বোন। তানজিন হায়দার তার মেঝ বোন।
তৌকির দাবি করেন, `মেঝ বোনের এই আচরণে তার অন্য ভাইবোনরাও মর্মাহত।`
`যে বোন দেড় কোটি টাকা দিলেন তাকে কি কোনোভাবে ব্যবসার সঙ্গে রাখা যেতো না?`– এ প্রশ্নের জবাবে তৌকির আহমেদ বলেন, `আমি মনে করেছি তাদের সঙ্গে ব্যবসা করা যায় না।`
বোনের চেয়ে তার স্বামীকেই গোটা বিষয়র জন্য বেশি দোষারোপ করছেন তৌকির। তিনি বলেন, `বেশ কিছুদিন ধরেই তারা মানসিক হয়রানি করে আসছিলেন। এখন সুনাম ক্ষুণ্ন করতেই এই মামলার উদ্যোগ।`
তার স্ত্রী বিপাশা হায়াতের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তৌকির জানান, ‘ও(বিপাশা) বিষয়টিতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমি নিজেও কিছুটা পাজল্ড।’