ঈদ ও পূজাকে সামনে রেখে অগ্নিবীণার ব্যানারে প্রকাশ পেলো উত্তমকুমারের ভক্তিমূলক নজরুল সঙ্গীতের একক এলবাম ‘এলো রে শ্রীদুর্গা ’। এতে গান রয়েছে আটটি। বাছাই করা কাজী নজরুলের অবিস্মরণীয় কীর্তন, ভজন, বাউল, শ্যামা বিষয়ক ভক্তিগীতি। উত্তম ভক্তির চন্দনচর্চ্চিত ফুলের সুগন্ধ ও মননশীলতায়তার চর্চিত কণ্ঠে গেয়েছেন গানগুলো। আধুনিক যন্ত্রানুষঙ্গে কিন্তু শুদ্ধ বাণী ও সুরে স্বকীয়ভাবে আধ্যত্মলোকের স্পন্দনে ভক্তিগীতিগুলোকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। যা শ্রোতাদের ভালো লাগবে বলে আশা করা যায়। সম্প্রতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু জিসিরিজ-অগ্নিবীণার অন্যান্য এলবামের সঙ্গে তার এলবামটিরও মোড়ক উন্মোচন করেন মহাধূমধামে। ওইদিন সন্ধ্যায় টিসিবি মিলনায়তনে এই উপলক্ষে শিল্পী-গণমাধ্যমকর্মীদের এক মহামিলনমেলা বসে।
নতুন এই এলবামের রেকর্ডিং কোলকাতা ও ঢাকায় করা। মিউজিক শিল্পীর নীজের, কোলকাতার সাহেব-সুমন, লিটন দাস প্রমুখের। গানগুলো হচ্ছে, এলো রে শ্রীদুর্গা, ওরে নীলযমুনার জল, সখি আমি না হয় মান করেছিনু, দেখে যারে রুদ্রাণী মা, খেলিছ এ বিশ্বলয়ে, এ-কূল ভাঙ্গে ও-কূল গড়ে এই তো বিধির খেলা, আমি বাউল হলাম ধূলির পথে ও গোঠের রাখাল বলে দে রে। এই প্রসঙ্গে সঙ্গীতশিল্পী উত্তম এই প্রতিবেদককে জানান, ইতিহাস বলছে, কাজী নজরুল তার পিতার মতোই ছিলেন ধর্মপ্রাণ। পাশাপাশি ছিল সকল ধর্মের প্রতি তার শ্রদ্ধা, সহনশীলতা।
নজরুল-জীবন-চিন্তায়, কাব্যে ও সঙ্গীতে সকল ধর্মের অন্তর্নিহিত স্বরূপ প্রকাশ পেয়েছে। যা দ্বারা অনির্বচনীয় এইসব ভক্তিগীতির জন্ম হয়েছে। এমনটি ইতোপূর্বে বা পরে আর কোনো কবি বা সঙ্গীতজ্ঞের মধ্যে এতো বিস্তৃতভাবে প্রকাশ ঘটেনি। তিনি বলেন, নজরুলকে সর্বধর্মের সমন্বয়কারী সাধকরূপে গণ্য করতে হবে। এই এলবাম শুনলে এটি স্বীকার করতে হবে নতুন করে। নজরুলের দৃষ্টিতে ও অনুভবে আল্লাহ, শ্রীকৃষ্ণ, কালা-কালি একইরূপ পরিগ্রহ করে মনোলোকে অধিষ্ঠিত হয়। গানগুলোতে সেই শাশ্বত ধর্মবিশ্বাস ফোটে ওঠেছে যা আমরা সাধু-সš‘, ফকির দরবেশদের কাছ থেকেও পেয়ে থাকি।
উত্তমের গান গাওয়ার শুরু ছেলেবেলা থেকেই। স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। সবখানেই সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে জুটেছে সম্মান আর পুরষ্কার। উত্তমের পড়াশুনা চট্ট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বিষয় সমাজবিজ্ঞান। নজরুল ইন্সটিটিউট থেকে ডিপ্লোমায় প্রথম শ্রেণি প্রাপ্ত ও সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটির নজরুলের প্রশিক্ষক হিসেবে সার্টিফিকেটধারী। দীর্ঘদিন শিখেছেন ওখানে। এছাড়া রবীন্দ্রভারতী থেকে বিমিউজ সম্পন্ন করেছেন। তালিম নিয়েছেন বাংলাদেশ ও ভারতের খ্যাতিমান সব সঙ্গীতজ্ঞের কাছে। এখন নিজেও গান শেখান। উত্তম একটি বেসরকারি মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের সহকারি অএপক। গণমাধ্যমকর্মী হিসেবেও কাজ করছেন দীর্ঘদিন।
সুর-লয়-ছন্দে প্রাণবন্ত আর সুররৃদ্ধ পরিশীলিত পরিবেশনার পরিচ্ছন্ন নিবেদন শিল্পীর এই এলবামটি। বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের নজরুলসঙ্গীত ও আধুনিক গানের এ গ্রেডের তালিকাভূক্ত শিল্পী উত্তম। গভীর আবেগী গায়নভঙ্গীর অনন্যতার জন্য এরইমধ্যে উত্তম সঙ্গীতজনদের দৃষ্টি কেড়েছেন। বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে তিনি লাইভ অনুষ্ঠান করছেন। প্রচারিত হচ্ছে মিউজিক ভিডিও। সমানতালে স্টেজ শো-ও করে যাচ্ছেন নিয়মিত। বর্তমানে নজরুলসঙ্গীত শিল্পী পরিষদের যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। কেননা নজরুল ও তার সঙ্গীতের প্রতি রয়েছে উত্তমের বিশেষ ভালবাসা। তবে সব ধরণের সঙ্গীতেই উত্তমের আগ্রহ। শুনেনও শাস্ত্রীয় সঙ্গীত থেকে শুরু করে পাশ্চাত্য রক-ফিউশন নির্বিচারে। গানের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকারও করেছেন তিনি। আজ আর গান গাওয়ার কোনো বিকল্পই খুঁজে পান না।
ভালোলাগা, বিশ্বাস, জীবনবোধ তার সঙ্গীতকে ঘিরেই। গত কয়েকবছর ধরে নানা ধারার বেশ ক’টি এ্যালবামের কাজ করছেন নিজের হোম স্টুডিওতে। উত্তম দীর্ঘদিন নজরুল চর্চা করেছেন সঙ্গীতজ্ঞ সুধীন দাশ ও সোহরাব হোসেনের কাছে। উত্তমের সঙ্গীতের প্রথম শিক্ষক স্থানীয় শিশু একাডেমিতে প্রয়াত দেলোয়ার হক। বিশুদ্ধ মার্গসঙ্গীত শিখেছেন উস্তাদ মিহির লালা, অনিলকুমার সাহা, গৌতম ভট্টাচার্য, উস্তাদ মাশকুর আলী খান, শুভ্রা গুহ, বিদুষী শান্তি শর্মা প্রমুখের কাছে। বর্তমানে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে তালিম নিচ্ছেন পন্ডিত তুষার দত্তের কাছে। প্রিয় দর্শক-শ্রোতা, মিডিয়াসহ সংশ্লিষ্টদের দোয়া ও ভালবাসা চান উত্তম। চান আমৃত্যু গান গেয়ে যেতে।