বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষিত যুবক-যুবতীদের মধ্যে বেকার বেশি। প্রাথমিক বা এর নিম্নস্তরের শিক্ষা নিয়েছেন এমন তরুণসমাজের মধ্যে বেকারত্ব সবচেয়ে কম। প্রতি এক শ জন উচ্চশিক্ষিত যুবক-যুবতীর মধ্যে বেকারত্বের হার ২৬ দশমিক ১ শতাংশ। মাধ্যমিক শিক্ষায় শিক্ষিতদের মধ্যে ১২ দশমিক ৩ শতাংশ এবং প্রাথমিক বা এর কম শিক্ষিতদের ৫ শতাংশের কিছু বেশি বেকার আছেন। এর মানে হলো স্বল্পশিক্ষিত তরুণ-তরুণীরাই এ দেশে বেশি কাজ পান। এটি হলো বাংলাদেশের যুবসমাজের বেকারত্বের চিত্র।
তবে সুখবর হলো সারা বিশ্বে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে যে হারে বেকারত্ব রয়েছে, বাংলাদেশের এর চেয়ে কম। বাংলাদেশি যুবশক্তির সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ বেকার। সারা বিশ্বে এ হার ১৩ শতাংশের বেশি।
সম্প্রতি প্রকাশিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) বিশ্ব যুব কর্মসংস্থান প্রবণতা, ২০১৫ (গ্লোবাল এমপ্লয়মেন্ট ট্রেন্ডস ফর ইয়ুথ) শিরোনামের প্রতিবেদনে এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে।
আইএলও বলছে, এ যুবশক্তিই দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। যুবশক্তিকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে—এমন ২৮টি দেশের একটি তালিকা দিয়েছে আইএলও। সেই তালিকায় বাংলাদেশ আছে। এ দেশগুলোর জন্য আইএলও পাঁচ বছরের জন্য প্রায় দেড় শ কোটি ডলারের কর্মসূচি নিয়েছে। আগামী বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে এ কর্মসূচি শুরু হবে। যুব কর্মসংস্থান একদিকে বাংলাদেশসহ এসব দেশের জন্য চ্যালেঞ্জ, অন্যদিকে সম্ভাবনা হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। এ তালিকায় এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার, নেপাল ও সামোয়া—এ ছয়টি দেশ রয়েছে। এ ছাড়া জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলোতে (এসডিজি) যুবশক্তির কর্মসংস্থানকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
স্কুল টু ওয়ার্ক ট্রানজিশন সার্ভিসকে (এসডব্লিউটিএস) ভিত্তি ধরে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে আইএলও। এসডব্লিউটিএসে মোট ২৮টি দেশের ওপর সমীক্ষা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক রুশিদান ইসলাম রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী যুবশক্তির কর্মসংস্থানে শ্রমঘন শিল্প ও সেবা খাতের দ্রুত উন্নয়ন করতে হবে। শিক্ষিত যুবশক্তিকে কাজে লাগাতে শিক্ষিত, শ্রমভিত্তিক খাত যেমন তথ্যপ্রযুক্তিকে গুরুত্ব দিতে হবে। আর স্বল্পশিক্ষিতদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে এ প্রশিক্ষণ দিতে হবে চাহিদার দিকে লক্ষ রেখে, তা না হলে সম্পদের অপচয় হবে। তিনি মনে করেন, নারী যুবশক্তিকে কাজে লাগাতে গ্রামীণ ও জেলা শহরের কাজের সুযোগ তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া তাঁদের সন্তানদের জন্য দিবাযত্ন কেন্দ্র করতে হবে।
বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরীরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে। আইএলওর প্রতিবেদনে ১৫-১৭ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত আছে এমন শীর্ষ নয়টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। এ দেশের কিশোর-কিশোরীদের ১৬ দশমিক ৭ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত আছে। ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত থাকার কারণে তারা প্রায়ই শারীরিক অসুস্থতা ও দুর্ঘটনার শিকার হয়।
সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কাজে থাকে ভিয়েতনামের কিশোরেরা। সেখানে এ হার ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। এ তালিকায় আরও আছে টোগো, ব্রাজিল, উগান্ডা, রাশিয়া, কিরগিজস্তান ও জ্যামাইকা।
আইএলওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে কর্মরত তরুণদের মধ্যে ৪৩ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ বা অনিশ্চিত কর্মসংস্থানে নিয়োজিত আছেন। আর তরুণীদের মধ্যে এ হার ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ। তাঁদের বেশির ভাগই গৃহস্থালির কাজে সহায়তা করেন, কিন্তু স্থায়ী কোনো কাজ করেন না। তাই তাঁদের এ ধরনের কর্মসংস্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়েছে। এ হিসাবে ইউরোপের তরুণ-তরুণীরা অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেন। আর আফ্রিকার যুবসমাজের মধ্যে এ ধরনের কাজ করার প্রবণতা বেশি।
২৫-২৯ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীরা কর্মজগতে প্রবেশ করে তাঁদের কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট কি না, এমন ২৫টি দেশের মধ্যে তুলনা করা হয়েছে আইএলওর প্রতিবেদনে। সেখানে দেখা গেছে, বাংলাদেশের এ বয়সী প্রায় ৭০ শতাংশ তরুণ-তরুণীই স্থায়ী কিংবা সন্তোষজনক কাজ করেন। আইএলওর তালিকায় থাকা ২৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। বাংলাদেশের সামনে রয়েছে রাশিয়া, ভিয়েতনাম, মাদাগাস্কার ও ইউক্রেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারা বিশ্বের ২০ কোটি ১৬ লাখ বেকারের মধ্যে মধ্যে ৭ কোটি ৩৪ লাখই তরুণ-তরুণী।
আইএলওর বিশ্ব যুব কর্মসংস্থান প্রবণতা ২০১৫ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের চিত্র
উচ্চশিক্ষিত তরুণ তরুণীদের ২৬.১% বেকার
যুবশক্তির ১১% বেকার
যুবসমাজই দেশের অর্থনীতি এগিয়ে নিয়ে যাবে, এমন ২৮ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ
১৫-১৭ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের ১৬.৭% ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত
৪৩% যুবক ও ৪১% যুবতী স্থায়ী কাজ করেন না
সারা বিশ্বে যুব বেকারের হার
১৩.১%