তদবির করতেই আসেন ৯০ শতাংশ মানুষ

অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. আবদুল মান্নানের কাছে যত লোক আসেন, তার মধ্যে ৯০ শতাংশ আসেন তদবিরের কাজ নিয়ে। মোট তদবিরের মধ্যে আবার ৮৯ শতাংশই অবৈধ (আনফেয়ার) তদবির।

সচিবালয়ে গতকাল সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বার্ষিক কর্মসম্পাদন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি এ অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেন। প্রতিমন্ত্রী এ সময় বলেন, ‘তদবিরের কারণে বড় ঠেকায় আছি। দেখা গেছে, ইসমাইলের (কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. ইসমাইলকে ইঙ্গিত করে) মোবাইল নম্বর আমার কাছে নেই। তদবিরকারীরাই নম্বর নিয়ে এসে আমাকে ফোন করতে বলেন। অনেকে তাঁদের নম্বর দিয়ে ফোন করে আমাকে ধরিয়ে দেন।’

গ্রামে-গঞ্জে ‘ডিও’ এখন একটি পরিচিত শব্দ উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কৃষকেরাও এখন ডিও বোঝেন। ডিও দেওয়ার জন্য একশ্রেণির লোক কম্পিউটারে তাঁর প্যাড ছাপিয়ে নিজেরাই বিভিন্ন কথা লিখে নিয়ে আসেন, বলেন দুই টন গম বা একটা টিউবওয়েলের জন্য সুপারিশ করতে।

তদবিরকারীদের আগ্রাসী আচরণের কথা তুলে ধরে আবদুল মান্নান আরও বলেন, ‘রাত ১২টায়ও ফোন আসে। এমনকি তাঁরা নিজেরাও চলে আসেন। তদবির করতে না চাইলে অনেকে বলেন, দলের জন্য কাজ করেছেন তাঁরা, দেশ স্বাধীন করেছেন ইত্যাদি ইত্যাদি।’

মন্ত্রী অবশ্য তাঁর কাছে দিনে কত লোক আসেন বা অনুমতি ছাড়া প্যাড ছাপিয়ে নিয়ে এলে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেন কি না, তা উল্লেখ করেননি। তবে তিনি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের উদ্দেশে বলেন, তদবির করলেও তাঁরা যাতে তা না শোনেন।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম আসলাম আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবুল কাসেম বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফজলুল হক।

অনুষ্ঠানে মোট সাতটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারের সমঝোতা চুক্তি সই হয়। এর মধ্যে পাঁচটি বিশেষায়িত ব্যাংক ও দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। চুক্তিতে সই করেন সরকারের পক্ষে সচিব এম আসলাম আলম এবং প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা (এমডি)।

ব্যাংকগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব), কর্মসংস্থান ব্যাংক, আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক ও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। দুই আর্থিক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফিন্যান্স করপোরেশন (বিএইচবিএফসি) ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)।

সচিব আসলাম আলম জানান, আগে যে যাঁর মতো প্রতিষ্ঠানের অর্জন মূল্যায়ন করতেন, কোনো মানদণ্ড ছিল না। পরীক্ষামূলকভাবে গত অর্থবছর থেকে ছয় মাসের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি হয়। এতে ১০০-এর মধ্যে ৭৫ থেকে ৯৮ পর্যন্ত নম্বর পেয়েছে তারা।

বিএসইসি চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজে সরকারের রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিফলন থাকা উচিত বলে মনে করেন। আর আইসিবির এমডি ফায়েকুজ্জামান ভালো অর্জন করতে হলে কর্মকর্তাদের জন্য প্রণোদনা চান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবুল কাসেম বলেন, প্রতিবছর মূলধন ঘাটতি পূরণে সরকার যে টাকা দেয়, তা জনগণের করের টাকা। এর সমালোচনাও সইতে হয় সরকারকে। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা উচিত।

যেখানে ব্যাংকসহ আর্থিক খাতের খারাপ অবস্থার কথাই সবাই জানেন, সেখানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ৭৫ থেকে ৯৮ নম্বর কীভাবে পেল। এই অর্জন তো সরকারের অর্জনকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো—অনুষ্ঠানের শেষ দিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব বলেন, প্রথম চুক্তিতে তাদের কোনো কিছুই চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ সহজ শর্ত দেওয়ায় ভালো অর্জন সম্ভব হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে কঠিন করা হচ্ছে।

সচিবের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত সচিব ফজলুল হককে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হলে তিনি জানান, ঋণ বিতরণ বৃদ্ধি, খেলাপি ঋণের হার, লোকসানি শাখা ও নিরীক্ষা আপত্তির নিষ্পত্তি কমানো, স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় (অটোমেশন) আসা ইত্যাদি ছিল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্ণায়ক। এগুলোতে তারা ভালো করেছে।

Featured অর্থ বাণিজ্য