প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপে ইতিহাস গড়ার হাতছানি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সামনে। মঙ্গলবার লিগের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারাতে পারলেই পাকিস্তানের সঙ্গে ফাইনাল খেলবে তারা। ক্রিকেটাররা সুযোগটা কাজে লাগাতে পারবে কি না তার উত্তর জানতে চাওয়া হয়েছিলো মাশরাফি বিন মুর্তজার কাছে। সোমবার সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফির প্রশ্নত্তোর পর্বের গুরুত্বপূর্ণ অংশ তুলে ধরা হলো:
প্রশ্ন: শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আপনাদেরকে তো জিততেই হবে। কি মনে হচ্ছে?
মাশরাফি: আমাদের সামনে জয়ের বিকল্প নেই। ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখছি। ভারতের বিপক্ষে জেতার পর মানসিকভাবে আমরা উজ্জীবিত। এখন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাঠে নামার অপেক্ষায়। আশা করি ভালো কিছু হবে।
প্রশ্ন: তিন বছর আগে ত্রিদেশীয় সিরিজে এমনই এক ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ফাইনাল খেলেছিলেন। এবারও কি সম্ভব?
মাশরাফি: আমি এসবে বিশ্বাস করি না। শ্রীলঙ্কার সাথে খারাপ খেলে থাকি বা ভালো খেলে থাকি, কালকে ভালো খেলতে হবে। আগে কি করেছিলাম ওটা টেনে এনে লাভ নেই। মাঠে আমাদেরকে ওটা সাহায্য করবে না। আমাদের কালকে ভালো খেলতে হবে। আর যদি ভালো খেলতে পারি, পাকিস্তান বা ভারতের সঙ্গে যেটা খেলেছি, সেটা করতে পারলেই সুযোগ থাকবে।
প্রশ্ন: ফাইনাল খেলতে হলে অবশ্যই জিততে হবে। কাল কি শ্রীলঙ্কাকে হারানো সম্ভব হবে?
মাশরাফি: টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আমি প্রেসে এসেছিলাম, বলেছিলাম আমরা ফাইনালে খেলার জন্য আসিনি। আমরা ভাল খেলতে চাই। আমরা আগেও প্রমাণ করেছি এদেরকে (ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা) হারাতে পারি। আমরা যদি আমাদের প্রক্রিয়া ঠিক রাখি এবং সামার্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারি, তাইলে ম্যাচ জিততে পারবো। শেষ দু’টো ম্যাচে ভালো খেলেছি বলে এখন আমরা ওইরকম অবস্থানে দাঁড়িয়ে। আমার মনে হয়, এখানে এসে উল্টো-পাল্টা চিন্তা করার কোন কারণ নাই। আমরা যেভাবে টুর্নামেন্ট শুরু করেছিলাম ওই ভাবেই খেলবো। ভাগ্য সহায় থাকলে অবশ্যই সুযোগ থাকবে।
প্রশ্ন: এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কাকেই কি সবচেয়ে দুর্বল দল মনে হচ্ছে?
মাশরাফি: হয়তো বা পাকিস্তান-ভারতের কাছে হেরেছে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কা এই টুর্নামেন্ট নেওয়ার জন্য অন্যতম ফেভারিট ছিলো। আমাদের কাছে আসলে কেউই দুর্বল না। আমাদেরকে জিততে হলে সামর্থ্যরে চেয়েও ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে।
প্রশ্ন: কারও কাছ থেকে বাড়তি কিছু আশা করছেন?
মাশরাফি: সবসময়ই বলে আসছি আমরা ওরকম দল না যে, এক-দু’জন ক্রিকেটার ভালো পারফর্ম করলে আমরা জিততে পারবো। ১১ জনের ভেতর অন্তত ৫-৬ জন ক্রিকেটারকে ভালো করতে হবে, যেমন আমরা ভারতের বিরুদ্ধে করেছি। কাজেই প্রতিটি ক্রিকেটারকেই ভাল খেলতে হবে। আমি আশাবাদী যে, আমাদের প্রতিটি খেলোয়াড়ের ওই সামর্থ্য রাখে।
প্রশ্ন: আপনাদের ওপর প্রত্যাশার চাপ থাকবে। এই চাপটা কিভাবে নিচ্ছেন?
মাশরাফি: আমরা যখন আসর শুরু করেছিলাম তখনও ফাইনাল খেলার চিন্তা করিনি। আমরা চেয়েছি ইতিবাচক মনোভাব দেখাতে, ভুল থেকে কিছু শিক্ষা নিতে এবং ভাল খেলার জন্য সচেষ্ট থাকতে। এখন আমরা বেশ ভাল অবস্থায় আছি। আমরা চিন্তা করছি ভাল খেলা ধরে রাখতে এবং আগামিকাল তা করে দেখাতে। সেটা করতে পারলেই হয়তো আমরা ফাইনালে যেতে পারবো।
প্রশ্ন: এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠার সুযোগ পেলে দেশের ক্রিকেটে কি ধরণের উপকার হবে?
মাশরাফি: ফাইনাল খেলতে পারলে অনেক বড় একটা অর্জন হবে। আমাদের খেলোয়াড়দের জন্যও অনেক ভালো হবে। সবার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে। এরপর যখন এমন বড় টুর্নামেন্ট আসবে তখন হয়তো প্রথম থেকেই আমরা চিন্তা করতে পারবো যে, আমরা ফাইনাল খেলবো। তবে আমরা এসব ভেবে চাপ নিতে চাইনা। আমরা যেভাবে খেলেছি সেভাবেই খেলতে চাই। নিজেদের উন্নতি ঘটাতে চাই। কারণ, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমরা ভালো খেলেছি কিন্তু ওই ম্যাচটা ভালভাবে শেষ করতে পারিনি। সেদিকে লক্ষ্য রাখছি। তা করতে পারলে দিনশেষে হয়তো ভাল ফলাফল চলে আসবে।
প্রশ্ন: রান দেখে মনে হচ্ছে এশিয়া কাপ ব্যাটসম্যানদের টুর্নামেন্ট। এখানে বোলারদের কি করার আছে?
মাশরাফি: আমার মনে হয় এখানে বোলারদের বোলিংয়ে বৈচিত্র্যের দিকেই বেশি তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে। কারণ, যে উইকেটে খেলা হচ্ছে অনেক বড় বড় রান হচ্ছে। আমার মনে হয় এর ভেতর যদি বোলাররা ভাল করতে পারে, সেক্ষেত্রে দলের জন্য খুব সহজ হবে জেতা। অধিকাংশ ম্যাচেই ৩০০ রানের মতো তাড়া করতে হচ্ছে। তো বোলাররা যদি ভাল করতে পারে এবং তাদেরকে ২৬০-২৭০ রানের মধ্যে রাখতে পারে ব্যাটসম্যানদের জন্য কাজটা সহজ হবে।