পাক বিরোধিতা করতে গিয়ে ফের বিতর্কে শিবসেনা। তাদের ‘কথা’ না শুনে ‘শাস্তি’র মুখে পড়তে হল বিজেপি-র প্রাক্তন উপদেষ্টা তথা প্রাক্তন কূটনীতিবিদ সুধীন্দ্র কুলকার্নিকে। দিন কয়েক আগে সেনার হুমকির চোটে বাধ্য হয়ে পাকিস্তানের গায়ক গুলাম আলির অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন আয়োজকেরা। এ বার প্রাক্তন পাক বিদেশমন্ত্রী খুরশিদ কাসুরির একটি বই প্রকাশের আয়োজন করে সেনা-বিক্ষোভের মুখে পড়লেন সুধীন্দ্র। সেনা নিষেধ না শুনে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করার ‘শাস্তি’ হিসেবে তাঁর মুখে কালি মাখিয়ে দিল সেনার কর্মী-সমর্থকেরা।
কাসুরির লেখা নতুন বইয়ের নাম ‘নাইদার আ হক, নর আ ডাভ’। মুম্বইয়ে ওরলির নেহরু সেন্টারে সোমবার তা প্রকাশ পাওয়ার কথা। এই অনুষ্ঠানেরই আয়োজক সুধীন্দ্র। কিন্তু, অনুষ্ঠানের কয়েক ঘণ্টা আগে তার মুখে কালি মাখিয়ে ফের তা বন্ধের ‘নির্দেশ’ দিল সেনা। দিন কয়েক আগেই তারা পাক লেখকের বই প্রকাশ অনুষ্ঠান করতে নিষেধ করেছিল সুধীন্দ্রকে। তিনি তাতে রাজি না হয়ে উল্টে রবিবার উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে দেখা করেন। উদ্ধব তাঁকে সেনার অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেন। তার পরেও নিজের অবস্থান থেকে সরে আসেননি সুধীন্দ্র। নেহরু সেন্টারের ডিরেক্টরকে চিঠি লিখে এই অনুষ্ঠান বাতিল করার কথাও বলা হয় সেনার তরফে। পাশাপাশি কুলকার্নিও স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এই অনুষ্ঠান তারা করবেনই।
মহারাষ্ট্রে বিজেপি সরকারের জোট সঙ্গী শিবসেনা। সেনা-হুমকিতে গুলাম আলির অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তাই মুখ পুড়েছিল বিজেপি-র। এ বারেও যাতে তেমনটা না হয়, তাই বইপ্রকাশ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস কড়া নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু, তা সত্ত্বেও এড়ানো গেল না এই অপ্রীতিকর ঘটনা। সুধীন্দ্র জানান, এ দিন সকালে তার বাড়ির সামনেই কয়েক জন সেনা সমর্থক তাকে আক্রমণ করে। এর পরই তাঁর মুখে কালি লেপে দেয় তারা। তার অভিযোগ, কালি মাখানোর সময় তারা বলেছিল, ‘আমাদের কথা না শুনলে আমরা এমনটা করতে পারি।’
এই ঘটনার জন্য তারা গর্বিত বলে সেনার তরফে দাবি করা হয়েছে। সেনা নেতা সঞ্জয় রাউত বলেন, ‘ওটা কালি নয়, আমাদের সৈনিকদের রক্ত। মানুষের আবেগকে বিদ্বজ্জনেদের গুরুত্ব দিতে হবে। না হলে এমন ঘটনার সাক্ষী হতে হবে।’’ পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘‘কাসুরির বিরুদ্ধে আমাদের কোনও শত্রুতা নেই। আমরা পাকিস্তান বিরোধী।’ সঞ্জয়ের মতে, কালি ছিটিয়ে প্রতিবাদ জানানোটা একটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিমাত্র।
গুলাম আলির পর ফের পাক লেখকের বই প্রকাশ অনুষ্ঠানকে ঘিরে জোট সঙ্গী সেনার এমন ব্যবহার যথেষ্ট অস্বস্তিতে ফেলেছে বিজেপিকে। তার উপর সুধীন্দ্র নিজে বিজেপি-র প্রাক্তন উপদেষ্টা। বিজেপি সূত্রে খবর, একটা সময়ে তিনি আডবাণীর খুবই কাছের লোক ছিলেন। এ দিন সুধীন্দ্রের মুখে কালি মাখানোর ঘটনায় তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘গণতন্ত্রে ভিন্ন মতামতের জায়গা থাকা উচিত।’ তবে ফডণবীস এ দিনের ঘটনার পর জানান, কোনও অনুষ্ঠানে ভারত বিরোধী প্রচার বরদাস্ত করা হবে না। এমনটা কোনও অনুষ্ঠানে হলে আয়োজকদের তার দায়িত্ব নিতে হবে।
কংগ্রেসও ঘটনার নিন্দা করেছে। দলীয় নেতা সচিন সামন্ত বলেন, ‘সেনার এই ঘৃণ্য রাজনীতির তীব্র নিন্দা করছি।’