বিশ্বে সবচে বেশি অস্ত্র কেনে ভারত। এদিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে দক্ষিণ কোরিয়া। যৌথভাবে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান ও চীন।
আন্তর্জাতিক অস্ত্র স্থানান্তর বিষয়ে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরই) এক জরিপে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেছে, ২০০৭-১১ সালে পরিমাণের দিক থেকে ২০০২-০৬ সালের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি অস্ত্র কেনা-বেচা হয়েছে। ২০০৭-১১ সালে অস্ত্র কেনায় পাঁচটি শীর্ষ দেশই এশীয়।
প্রতিষ্ঠানটির সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তে দেখা যাচ্ছে, গত কয়েক বছরের মধ্যে এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলো অস্বাভাবিক হারে অস্ত্র কিনেছে। এসময় বিশ্বে মোট কেনা-বেচা হওয়া অস্ত্রের ৪৪ শতাংশই কিনেছে তারা। ১৯ শতাংশ কিনেছে ইউরোপ, ১৭ শতাংশ মধ্যপ্রাচ্য, আমেরিকা কিনেছে ১১ শতাংশ আর আফ্রিকা কিনেছে মাত্র ৯ শতাংশ।
ওই তথ্য-উপাত্তে দেখা যাচ্ছে, ২০০৭-১১ সালে ভারত সবচে বেশি অস্ত্র কিনেছে। তারা বিশ্বেজুড়ে মোট অস্ত্র কেনা-বেচার ১০ শতাংশ একাই আমদানি করেছে।
একই সময় অস্ত্র আমদানি করা অন্য শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া কিনেছে ৬ শতাংশ, পাকিস্তান ও চীন উভয়ে ৫ শতাংশ করে আর সিঙ্গাপুর ৪ শতাংশ।
এসআইপিআরই’র এক জ্যেষ্ঠ গবেষক পিটার ওয়েজম্যান এ বিষয়ে বলেন, ‘এশিয়ার বড় আমদানিকারক দেশগুলো অবশ্য নিজেদের দেশেই অস্ত্র শিল্প গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা করছে আর সরবরাহের জন্য বাইরের উৎসের ওপর নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করছে।’
উল্লেখ্য, ২০০২-০৬ সালে চীন বিশ্বে অস্ত্র আমদানিকারকদের মাঝে ছিল শীর্ষে। তবে ২০০৭-১১ সালে সে চতুর্থ স্থানে নেমে গেছে।
এর কারণ, উল্লেখিত সময়ের মধ্যে চীন অস্ত্রশিল্পে প্রভূত উন্নতি করেছে। তারা ২০০৭-১১ সালে এসে ২০০২-০৬ সালের তুলনায় অস্ত্র রফতানি বাড়িয়েছে ৯৫ শতাংশ। এরই ধারাবাহিকতায় চীন এখন বিশ্বে অস্ত্র রফতানিতে ষষ্ঠ।
এ প্রসঙ্গে এসআইপিআরই’র পরিচালক পল হলটোম জানিয়েছেন, চীন যে সময়ের মধ্যে অস্ত্র রফতানি বাড়িয়েছে সে সময় আবার পাকিস্তান তার কাছ থেকেই বেশিরভাগ অস্ত্র কিনেছে।
তবে তারপরও চীন বিশ্বে অস্ত্রের বাজারে তেমন আহামরি কোনো অবস্থানে যেতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন পল।
প্রতিষ্ঠানটি তাদের পর্যবেক্ষণে দেখেছে, গত বছর বিশ্বে অস্ত্র কেনা-বেচার ক্ষেত্রে আরব বসন্তের যথেষ্ট প্রভাব ছিল। অবশ্য এটা সহজ কথা যে, বিশ্বে রাজনৈতিক অস্থিরতা সব সময়ই অস্ত্রের স্থানান্তরকে (কেনা-বেচা) উৎসাহিত করেছে।
তবে ২০১১ সালে ‘আরব বসন্ত’ প্রভাবিত অঞ্চলে অস্ত্র স্থানান্তর কৌশল মূলত যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্যেই ছিল। এসময় তারা মিশর এবং তিউনিসিয়াতে সবচে বেশি অস্ত্র সরবরাহ করেছে। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র এম-১এ১ মডেলের ৪৫টি ট্যাঙ্ক দিয়েছে মিশরকে এবং আরো ১২৫টি দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।
এসআইপিআরই আরো জানিয়েছে, ২০১১ সালে সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এফ-১৫এসএ মডেলের ১৫৪টি জঙ্গি বিমানের অর্ডার দিয়েছে। উল্লেখ্য, সৌদি আরবের এযাবতকালের সবচে বড় আকারের অস্ত্রের ফরমায়েশ এটি, এমনকি গত দুই দশকের মধ্যেও সর্বোচ্চ।