প্রথা মতো বিয়ের সব আয়োজন সারা। অতিথিরা এসে গিয়েছেন। ঝলমলে অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে জমজমাট হুল্লোড়।
ক্যাথলিক বিবাহ রীতি অনুযায়ী বর আগেই হাজির অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণের বিবাহ মঞ্চে। শুভ্র পোশাকে তৈরি কনেও। লাল কার্পেটে ঢাকা সিঁড়ি বেয়ে তিনি নেমে আসছেন বিয়ের মঞ্চের দিকে। হাতে সাদা ফুলের তোড়া। পার্টিতে উপস্থিত সব অতিথি সোল্লাসে স্বাগত জানালেন কনেকে। পকেট থেকে মোবাইল বার করে ছবি তুলে রাখলেন অনন্য মুহূর্তের।
এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। মাহেন্দ্রক্ষণে পৌঁছে তাল কাটল। ভিড় ঠেলে বিয়ের মঞ্চের একবারে সামনে হাজির এক তরুণ। বরকে লক্ষ্য করে চিৎকার করে জানালেন, তার সঙ্গে বহুদিনের প্রেম হবু বরের। কাণ্ড দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লেন কনে। ফুলে তোড়া ছুঁড়ে ফেলে চলে গেলেন বিয়ের মঞ্চ ছেড়ে। তার পর দুই যুবক পরস্পরের সঙ্গে বাঁধা পড়লেন বিয়ের বাঁধনে।
এই ঘটনা আজকাল আকছার ঘটছে আর্জেন্টিনায়। একের পর এক বিয়ের পার্টিতে ভেস্তে যাচ্ছে নির্ধারিত বিয়ে। আসরেই আচমকা বদলে যাচ্ছেন পাত্র কিংবা পাত্রী।
চমকে উঠছেন নাকি? ভাবছেন কী দিনকাল এল? আসল কথা শুনলে চোখ কপালে উঠবে। এ সবই আসলে খেলা। মানে খেলা খেলা বিয়ে আর কি। বর-কনে নকল। উড়ে এসে জুড়ে বসা বরের প্রেমিকও নকল। বাকি সবই অবশ্য আসল। আয়োজন, ক্যাটরার, খাওয়া-দাওয়া এবং তুমুল হই-হুল্লোড়।
হিসেব বলছে, দিন দিন বিয়ের সংখ্যা কমে যাচ্ছে আর্জেন্টিনায়। বয়স বেড়ে যাওয়ার পর কেউ কেউ বিয়ে করছেন। তবে যৌবন থাকতে বিয়ের কথা ভাবতেই পারছে না আর্জেন্টিনা। বুয়েনাস আইরেসের মতো বিশাল শহরে ২০১৩ সালে বিয়ের সংখ্যা মাত্র ১১ হাজার ৬৪২। পরের দু’বছরে আরও কমেছে। ১৯৯০ সালে ২২ হাজার বর-কনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন আর্জেন্টিনার এই রাজধানী শহরে। কিন্তু কমতে কমতে বছরে বিয়ের সংখ্যা এখন অর্ধেক। প্রেমিক-প্রেমিকা এক সঙ্গে থাকছেন, পরস্পরের সঙ্গ ঘনিষ্ঠভাবে উপভোগ করছেন যত দিন মন চায়। কিন্তু, বিয়েতে রাজি নন কেউই। যারা প্রবণতার বাইরে গিয়ে বিয়েটা সেরেই ফেলছেন, তাদের অর্ধেকের বেশিই খুব দ্রুত বিচ্ছেদের পথে এগোচ্ছেন। বছরে ৬৫০০ বিবাহ বিচ্ছেদের সাক্ষী হচ্ছে বুয়েনাস আইরেস। তাই বিয়ে এড়িয়ে থাকাই আর্জেন্টিনায় এখন রেওয়াজ।
তা বলে কি বিয়ের মতো একটা রোম্যান্টিক ইভেন্টের স্বাদ নেওয়া ভুলে যাবে আর্জেন্টিনা? তা তো হতে পারে না। তাই নকল বিয়ের আয়োজন। পার্টির মজা আর বিয়ে বিয়ে পরিবেশে সামিল হওয়াটাই আসল উদ্দেশ্য। প্রতিটি পার্টিতে ৬০০-৭০০ তরুণ-তরুণী অংশ নিচ্ছেন। কম-বেশি ৫০ ডলার করে চাঁদা দিতে হচ্ছে। তাতেই মিলছে রাতভর পার্টির মজা আর ক্রমশ বিরল হতে থাকা বিবাহ নামের অভিজ্ঞতার শরিক হওয়ার সুযোগ।
বছর দু’য়েক আগে থেকে বুয়েনাস আইরেসে এই বিয়ে বিয়ে খেলার শুরু। এক দল বন্ধু মিলে হুল্লোড়ে অভিনবত্ব আনতে চেয়েছিলেন। তার থেকেই নকল বিয়ে আয়োজনের কথা মাথায় আসে। বুয়েনাস আইরেস থেকে বেশ খানিকটা দূরে তারা এই পার্টির আয়োজন করেন প্রথম বার। বন্ধুমহলে এত উৎসাহ দেখা গিয়েছিল সেই পার্টিকে ঘিরে, যে নকল বিয়ে আয়োজনের ব্যবসা খুলে ফেলেন আয়োজকরা। গত দু’বছরে একের পর এক বরাত পেয়েছে তাদের সংস্থা। আর্জেন্টিনায় ক্রমশ নতুন সামাজিক উৎসবের মর্যাদা পাওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে বিয়ে বিয়ে খেলা। – সংবাদসংস্থা