রাশিয়া কোনওরকম আগাম ঘোষণা না করেই সিরিয়ার এক বিশাল অঞ্চল-সহ আশেপাশে ‘নো-ফ্লাই জোন’ বা উড়ান-নিষিদ্ধ অঞ্চল গড়ে তুলছে। একটি ইজরায়েলী সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার ওয়েবসাইট এই তথ্য ফাঁস করেছে। তাদের দাবি, রাশিয়ার গড়ে-তোলা এইসব উড়ান-নিষিদ্ধ অঞ্চলগুলোর মধ্যে রয়েছে গোলান পার্বত্য ভূমি, তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চল ও সাইপ্রাস।
সিরিয়ায় আইএস জঙ্গিঘাঁটির উপর ব্যপক বিমান হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। ফলে আইএস-সহ সিরিয়ার আসাদ সরকার-বিরোধী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির বহু জঙ্গি নিহত হয়েছে। এই অবস্থায় রাশিয়া এই অঞ্চলে নো-ফ্লাই জোন বা উড়ান-নিষিদ্ধ অঞ্চল গড়ে তোলায় জঙ্গিদের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে পড়ল। এ ছাড়াও রাশিয়া সিরিয়ার লজাকিয়া বন্দরে ‘মস্কোকাভা’ নামের একটি ডেস্ট্রয়ারে ৬৪টি বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত ‘এস-থ্রি হান্ড্রেড’ নামের অত্যাধুনিক সিস্টেম মোতায়েন করেছে। ফলে সিরিয়ার আকাশে বিমান হামলা চালাতে হলে তুরস্ক, ব্রিটেন, ইজরায়েল ও জর্ডনকে রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা করতে হবে। তা না হলে তাদের জঙ্গি বিমানগুলো যে কোনো সময় ভূপতিত হতে পারে। (সিরিয়ায় রাশিয়ান বিমান হামলা অব্যাহত)
কেবল স্টেলথ জঙ্গি বিমান অত্যাধুনিক রেডার ও ক্ষেপণাস্ত্র-সজ্জিত বিমান এই রুশ সিস্টেমকে ফাঁকি দিতে সক্ষম। তুরস্কে মোতায়েন মার্কিন জঙ্গি বিমানগুলি হল এফ-সিক্সটিন মডেলের। অন্যদিকে তুরস্ক, জর্ডন, ব্রিটেন ও ইজরায়েলের কাছে এই রেডার এড়ানোর মত স্টেলথ বা উন্নত জঙ্গি বিমান নেই। ওয়েবসাইটটির দাবি, নো-ফ্লাই জোন বা উড়ান-নিষিদ্ধ অঞ্চল গড়ে তোলা ও সিরিয়ায় এস-৩০০ মোতায়েনের কারণে রুশ বিমান হামলার পরিধি ও তীব্রতা বেড়ে যাবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার এইসব পদক্ষেপের কারণে সিরিয়াকে টুকরো টুকরো করার ও ইজরায়েল-বিরোধী সংগ্রামের অন্যতম প্রধান ফ্রন্টের নেতা হিসেবে খ্যাত প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার যে স্বপ্ন পাশ্চাত্য দেশগুলি (পড়ুন ইজরায়েল ও আরব বাদশাহ-সহ) দেখছিল তা মরীচিকায় পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিক্রিয়াশীল এই জোটের সরাসরি সামরিক সংঘাতও বেধে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। (রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে আমেরিকা)
রাশিয়ার বিমানগুলি যদি সিরিয়ায় আইএস জঙ্গি ছাড়াও সিআইএ-র সমর্থিত অন্যান্য জঙ্গি বা কথিত ‘মধ্যপন্থী’ বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর উপর হামলা চলায় তাহলে ওয়াশিংটনকেও প্রতিশোধমূলক হামলা চালাতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছেন প্রাক্তন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ব্রেজনস্কি। এইসব গোষ্ঠী রাশিয়া ও তার আঞ্চলিক মিত্র শক্তিগুলির হামলায় পুরোপুরি নির্মূল হয়ে যেতে পারে বলে পাশ্চাত্য ও আরব প্রতিক্রিয়াশীল সরকারগুলো আশঙ্কা করছে।