গণতান্ত্রিক সমাজের মতো বাংলাদেশের জাতীয় সংসদকে আরও কার্যকর করার পরামর্শ দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। তিনি সংসদ কার্যকরে সরকার ও বিরোধীদলকে আরও বেশি ভূমিকা পালনেরও আহ্বান জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে ‘বিশেষ সমাবর্তনে’ এ আহবান জানান। সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যায়ের চ্যান্সেলর মো. জিল্লুর রহমান বান কি মুনকে সম্মনসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি (ডক্টর অব লজ) প্রদান করেন।
বান কি মুন তার বক্তব্যে বলেন, ভবিষ্যতে ব্যালট স্বচ্ছ ও বিশ্বসযোগ্য করা অত্যাবশ্যকীয়। ডিজিটাল ভোটার লিস্ট প্রণয়নে বাংলাদেশকে সাহায্য করতে পারায় জাতিসংঘ গর্ববোধ করে। তিনি ডিজিটাল ভোটার লিস্টকে ‘স্বচ্ছতার পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ বলে অবহিত করেন।
বাংলাদেশে দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাসের জন্য জাতীয় পর্যায়ে বিপুল বিনিয়োগ দরকার উল্লেখ করে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, টেকসই উন্নয়ন একুশ শতকের প্রধান অগ্রাধিকার। বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই এক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয়। দরিদ্র মানুষের জন্য আরও অনেক কাজ করতে হবে। বিশ্ববাসীর জন্য কাজের সুযোগ, উন্নত স্বাস্থ্যসেবা, বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানি, খাদ্যপণ্যের স্থির মূল্য নিশ্চিত করতে হবে।
একটি নিরাপদ বিশ্ব গড়ে তোলা জাতিসংঘের দ্বিতীয় অগ্রাধিকার উল্লেখ করে বান কি মুন বলেন, এখানেও বাংলাদেশের অবদান অনুসরণীয়। জাতিসংঘের শান্তি মিশনে প্রতি ১০ জন শান্তিরক্ষীর মধ্যে একজন বাংলাদেশি। তারা আইভরি কোস্টে গণতন্ত্র রক্ষায় সাহায্য করেছে।
বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের সহযোগিতায় বিশ্বের বুকে দক্ষিণ সুদান নামে একটি নতুন রাষ্ট্রের জš§ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মুন বলেন, ‘লেবানন, পূর্ব তিমুর, দক্ষিণ সাহারা, সর্বত্রই বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা। জাতিসংঘ যে সময় পর্যাপ্ত শান্তিরক্ষী পাচ্ছিল না, সেসময় বাংলাদেশ অনন্য নেতৃত্ব ও বিশ্ব নাগরিকত্ব দেখিয়েছে।’
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক জাতিসংঘের মান্যবর মহাসচিব বান কি মুনকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রি প্রদান উপলক্ষে বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দ অনুভব করছি। আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি, সম্মনসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রি গ্রহণকারী জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনকে, যিনি বিশ্বসংঘের প্রধান নির্বাহী হিসেবে মানবসভ্যতা ও বিশ্ব শান্তিরক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আজকের দিনটি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান বান কি মুনকে সম্মান সূচক ডিগ্রি ‘ডক্টর অব লজ’ প্রদান করায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদ।