কুরুচিপূর্ণ, অসংসদীয় বক্তব্যে আবারো উত্তপ্ত সংসদ

কুরুচিপূর্ণ, অসংসদীয় বক্তব্যে আবারো উত্তপ্ত সংসদ

সরকার ও বিরোধীদলের পাল্টাপাটি কুরুচিপূর্ণ এবং অসংসদীয় বক্তব্যে আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠলো জাতীয় সংসদ। উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামলাতে স্পিকারকে কয়েক দফা হাতুড়িও পেটাতে হয়েছে।

সোমবার মাগরিবের নামাযের বিরতির আগে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনার সময় এ ঘটনা ঘটে। বিরোধীদলের সৈয়দা আশিফা আশরাফী পাপিয়ার বক্তব্যের সময় পরিস্থিতি বেশি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

এ সময় অধিবেশন কক্ষে তুমুল হৈচৈ শুরু হলে স্পিকারকে হাতুড়ি পিটিয়ে পরিস্থিতি সামলাতে হয়েছে।

পাপিয়া রাষ্ট্রপতির ভাষণের সমালোচনা করে বলেন, আওয়ামী লীগের আজ্ঞাবহ মেরুদণ্ডহীন রাষ্ট্রপতি বাস্তবতা বিবর্জিত ভাষণ দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্যে দেশের বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ে সত্য তথ্য আসেনি।

এ সময় স্পিকার ‘মেরুদণ্ডহীন রাষ্ট্রপতি’ শব্দটি এক্সপাঞ্জ করার ঘোষণা দেন।

পাপিয়া বলেন, দেশের মানুষ আজ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের কবলে। আজ পুঁজিবাজারের ক্ষতিগ্রস্তরা আত্মহত্যা করছেন। দেশে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’এর দৌরাত্ব্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বিরোধীদলের হরতালের সময়ে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদীন ফারুকের ওপর হামলা হলেও সরকার কোনো সহানুভূতি দেখায়নি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশে পাপিয়া বলেন, ‘সরকারের এক মন্ত্রী রোববার সংসদে বলেছেন, আমরা নাকি নিষিদ্ধপল্লীর ভাষায় কথা বলেছি। আসলে নিষিদ্ধপল্লীর সদস্যরাই জানেন সেখানে কী ভাষায় কথা হয়।’

পাপিয়া প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যও অশ্লীল কটূক্তি করেন। তিনি বলেন,‘ খালেদা জিয়া লং ড্রাইভ বা কারো কোলে বসে দোল খায় না। আপনাদের নেত্রীই সেটা করে।’

এ সময় সরকারি দলের ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি এবং পিনু খান ‘বেয়াদব’ বলে চিৎকার শুরু করেন। সরকারি দলের দিক থেকেও সিনিয়র সদস্যরা তখন চিৎকার শুরু করেন।

সরকারি ও বিরোধীদলের তুমুল হৈ চৈ ও বাক-বিতণ্ডার মধ্যে স্পিকার পাপিয়ার মাইক বন্ধ করে দেন। তিনি ‘কোলে ওঠা’ শব্দটি এক্সপাঞ্জ করে বলেন, কেউ কোলে ওঠা এ ধরনের বক্তব্য দেবেন না। এ ধরনের কথা বলা উচিত নয়।

পরে আবার মাইক চালু হলে পাপিয়া সামরিক শাসন জারির পেছনে প্রয়াত জিয়াউর রহমানের হাত ছিলো না উল্লেখ করে বলেন, জেলে চার নেতা হত্যকাণ্ডের ঘটনায় খালেদ মোশাররফের মরণোত্তর বিচার হওয়া উচিত।

তিনি আরো বলেন, যারা তারেক ও কোকোর দুর্নীতি নিয়ে বড় বড় কথা বলেন, তাদের বলতে চাই সজীব ওয়াজেদ জয় দেশে থাকতে একজন মাদকাসক্ত ছিলেন। কয়েকবার গুলশান থানায় এ কারণে আটক হয়েছেন। এ ধরনের মাদকাসক্তকে দিয়ে আর যাই হোক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া কখনো সম্ভব নয়। যুক্তরাষ্ট্রেও মাতাল অবস্থায় ও অবৈধ অস্ত্র নিয়ে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে জয়ের কয়েক দফায় জেল জরিমানা হয়েছে।

পরে স্পিকার বিরোধীদলীয় চিফ হুইপকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমি আপনাকে বলেছিলাম সিনিয়র সদস্যদের নাম দেন। যাতে সুন্দর বক্তব্য দিয়ে সংসদ চালাতে পারি।’

এর আগে বিরোধীদলীয় এমপি রাশেদা বেগম হীরা বলেন, রাষ্ট্রপতিকে ব্যবহার করা হচ্ছে খুনি ও সন্ত্রাসীদের ক্ষমা করার কাজে। এটা ক্ষমতার অপব্যবহার। রাষ্ট্রপতি নিজের মান সম্মানের দিকে তাকাচ্ছেন না।

তিনি বলেন, এখন আর দেশের নদীতে মাছ পাওয়া যায় না, পাওয়া যায় শুধু লাশ। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, এদেশে হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রী আছেন। তিনি বিরোধীদলীয় নেতা সম্পর্কে অসত্য বক্তব্য দিয়ে রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি ভারত থেকে বস্তায় বস্তায় টাকা এনে নির্বাচন করেছেন। এ সত্য ঢাকার জন্য খালেদা জিয়ার নামে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এ ধরনের বক্তব্য দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন তিনি।

হীরার পরে সরকারি দলের নাজমা আক্তার বিরোধীদলের উদ্দেশে বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষক বলে চিৎকার না করে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ইতিহাস ভিক্ষা করুন।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সমুদ্রসীমা অর্জন করেছে। অথচ বিরোধীদলের কেউ একবারও এ বিষয়টির উল্লেখ না করে আবোল-তাবোল বলছেন।’

আইএসআই’র কাছ থেকে টাকা নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনাদের কোনো কথা থাকলে পাকিস্তানের আদালতে যান। লজ্জা হয় এটা ভেবে, আপনাদের নেত্রী নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের স্ত্রী দাবি করেন। অথচ যে আইএসআই-কে পাকিস্তানের জনগণ ঘৃণা করেন তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন।’

বাংলাদেশ রাজনীতি