শুধু ট্রেড লাইসেন্সে চলছে পিজাহাট-কেএফসি’র জরিমানা সাড়ে ২১ লাখ টাকা

শুধু ট্রেড লাইসেন্সে চলছে পিজাহাট-কেএফসি’র জরিমানা সাড়ে ২১ লাখ টাকা

আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড করায় দৈনিক প্রথম আলো’র স্বত্বাধিকারী ট্রান্সকম গ্রুপের মালিকানাধীন ‘কেএফসি রেস্টুরেন্ট’ ও ‘পিজা হাট’ নামের দুটি প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ২১ লাখ টাকা জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদফতর।
পরিবেশ অধিদফেতরের ছাড়পত্র বিহীন রাজধানীর উত্তরার ১৩নং সেক্টরে অবস্থিত এ দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পরিবেশ দূষণ ও আবাসিক এলাকার বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত করার অভিযোগে এ দণ্ড প্রদান করা হয়।

সোমবার পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের পরিবেশ অধিদপ্তরে তলব করে এ দণ্ড প্রদান করেন এবং সকল অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা দূর করার নির্দেশ দেন।

এ নির্দেশ পালনে ব্যর্থ হলে প্রতিষ্ঠান দুটির গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং প্রতিষ্ঠান দুটি বন্ধ করে দেয়া হবে মর্মে জানিয়ে দেওয়া হয়।

সোমবার বিকেলে পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরীর পক্ষে সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ট্রান্সকম গ্রুপের মালিকানাধীন কেএফসি রেস্টুরেন্ট ও পিজা হাট নামের এ দুটি প্রতিষ্ঠান উত্তরা মডেল টাউনের ১৩ নং সেক্টরের ১৩ নং প্লটে ২০১১ সালের নভেম্বরে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া চালু করা হয়।

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর আওতায় হোটেল ও রেস্টুরেন্ট এর জন্য পরিবেশ ছাড়পত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক। পরিবেশ ছাড়পত্র গ্রহণের পূর্বে এসব প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে অবস্থান ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হয়। অবস্থান ছাড়পত্র প্রদানের পূর্বে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ওই এলাকায় স্থাপনের উপযোগী কিনা, তা পরিবেশ অধিদপ্তর নির্ধারণ করে।

পরিবেশ আইন মোতাবেক, উত্তরা আবাসিক এলাকায় এ জাতীয় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার কোনো অবকাশ নেই।

পরিবেশ অধিদফতর জানায়, কিন্তু ট্রান্সকম গ্রুপ পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে গত ২০১১ সালের নভেম্বরে একটি বহুতল ভবনের ৩টি পৃথক ফ্লোরে (মোট আয়তন ৯০০০ বর্গফুট) গড়ে তোলে এ দুটি বিশাল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি এখানে শত শত গ্রাহকের সমাগম ঘটে।

গত নভেম্বরেই এলাকার বাসিন্দারা এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে উচ্চমাত্রার শব্দদূষণের অভিযোগ দায়ের করলে পরিবেশ অধিদফতরের তদন্তে তা প্রমাণিত হয়।

বিশেষ করে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর, এগজস্ট ফ্যান এবং বিশাল আকারের এয়ার কন্ডিশনার প্রতিষ্ঠানের আউটডোরে (আবাসিক ভবনগুলির সন্নিকটে) স্থাপন করায় তা মারাত্মক শব্দদূষণ সৃষ্টি করছে। এ শব্দ দূষণে এলাকার শিশু-বৃদ্ধসহ সাধারণ নাগরিকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে এলাকাবাসীর পক্ষে লিখিত অভিযোগে জানা যায়।

পরিবেশ অধিদফতর জানায়, এ ব্যাপারে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতোপূর্বে রাজউক ও উত্তরা থানাকে অবহিত করা হয়েছিল।

এ অসহনীয় অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে পরিচালক(এনফোর্সমেন্ট) এর নির্দেশে গত ১৮ মার্চ রোববার রাত ১০টায় অধিদফতরের একটি টিম ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের সৃষ্ট শব্দ পরীক্ষা করে মাত্রা পায় ৭৫.৪ ডেসিবল।

একইভাবে এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছরের (২০১১) ২৯ নভেম্বর শব্দের মাত্রা পরীক্ষা করে পাওয়া যায়, যথাক্রমে ৭৯,৮৯,৮০.৬ ও ৮৩.৮ ডেসিবল।

উল্লেখ্য, পরিবেশ আইনে ওই এলাকায় শব্দের সহনীয় মাত্রা দিবাভাগে ৪৫ ও রাতে ৪০ ডেসিবল।

সবশেষে সোমবার পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের পরিবেশ অধিদপ্তরে তলব করে ২১ লাখ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন।

এ দণ্ড প্রদানের পর রাজউকের চেয়ারম্যানকে এ ভবনে ওই দু্টি প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অনুমতি আছে কি না, সে সম্পর্কে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠান দুটির ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া আর কোনও কাগজপত্র নেই মর্মে কর্মকর্তারা জানান।

প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা পরিবে অধিদফতরের পরিচালকের (এনফোর্সমেন্ট) কাছে তাদের অপরাধ স্বীকার করেন এবং আগামী ১০ দিনের মধ্যে পরিবেশ আইনের নির্দেশনা প্রতিপালনের অঙ্গীকার করেন।

বাংলাদেশ