জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে যোগদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর ৮ দিনের সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডনের উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক ত্যাগ করেছেন। বৃটিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীরা নিউয়র্কের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকালে জন এফ কে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি একে আবদুল মোমেন বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান। লন্ডনের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় ফ্লাইটটি হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেখানে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোঃ আবদুল হান্নান বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন। বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হোটেল ক্ল্যারিজে নিয়ে যাওয়া হবে। লন্ডনে সংক্ষিপ্ত সফরকালে তিনি সেখানে অবস্থান করবেন। শুক্রবার বিকেলে লন্ডনে একটি হোটেলে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী লন্ডনের স্থানীয় সময় প্রায় ৮ টা ৩৫ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ালাইন্সের একটি ফ্লাইটে দেশের উদ্দেশ্যে লন্ডন ত্যাগ করবেন। প্রধানমন্ত্রী সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সংক্ষিপ্ত যাত্রা বিরতির পর শনিবার বাংলাদেশ সময় ১টা ৩০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
নিউইয়র্কে অবস্থানকালে শেখ হাসিনা গত ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭০ তম অধিবেশনের সাধারণ বিতর্কে তাঁর দেশের বিবৃতি পাঠ করেন। প্রধানমন্ত্রী গত ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউনেপ) নির্বাহী পরিচালক আচিম স্টেইনারের কাছ থেকে মর্যাদাপূর্ণ ‘চ্যাম্পিয়নস অব দি আর্থ এওয়ার্ড’ গ্রহন করেছেন। তিনি গত ২৬ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) মহাসচিব হুলিন ঝাওয়ের কাছ থেকে ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’ গ্রহন করেছেন। ২৮ সেপ্টেম্বর অন্যান্য রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। সেদিন তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এবং রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মানে আয়োজিত ভোজসভায় যোগ দেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্কে যোগদান ছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সদও দফতরে ২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সাউথ-সাউথ কোঅপারেশন বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের গোলটেবিল আলোচনায় যোগ দেন। পরের দিন তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর আমন্ত্রণে জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন সংক্রান্ত বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সভায় যোগ দেন। একই দিন তিনি বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ‘ফস্টারিং সাসটেইন্যাবল ইকোনমিক গ্রোথ, ট্রানসফরমেশন এন্ড প্রোমোটিং সাসটেইন্যাবল কনজামপশন এন্ড প্রডাকশন’ শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
এছাড়াও তিনি গত ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের অগ্রাধিকার তুলে ধরে ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডা গ্রহন করার জন্য জাতিসংঘ শীর্ষ সম্মেলনের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ভাষণ দেন। যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর সফল উপলক্ষ্যে গত ২৭ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনাকে যুক্তরাষ্ট্রের হিলটন মিডটাউন হোটেলে প্রবাসী বাংলাদেশীরা সংবর্ধনা প্রদান করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৮ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে শান্তিরক্ষা বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের শীর্ষ সম্মেলনে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন। ২৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আয়োজিত কাউন্টারিং আইএসআইএল এন্ড ভায়োলেন্ট এক্সট্রিমিজম বিষয়ক বৈশ্বিক নেতৃবৃন্দের সম্মেলনে যোগ দেন তিনি। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ‘এমডিজি থেকে এসডিজিতে উত্তরণ: বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানেও যোগ দেন। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তৃতা করেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের পাশাপাশি শেখ হাসিনা গত ২৫ সেপ্টেম্বর কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের ফোরামে ‘গার্লস লীড দি ওয়ে’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। একই দিন তিনি নিউইয়র্কে হোটেল ওয়ালডর্ফ এস্টোরিয়ায় বিজনেস কাউন্সিল ফর ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারস্ট্যানডিং অব ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকার সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে, এবং নেদারল্যান্ডের রাণী ম্যাক্সিমা সহ বেশ কিছু রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭০ তম অধিবেশনে যোগ দেয়ার জন্য গত ২৪ সেপ্টেম্বর লন্ডন হয়ে নিউইয়র্ক পৌঁছান।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পরারাষ্ট্রমন্ত্রী এইচ মাহমুদ আলী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভি, নারী ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফেরোজ চুমকি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি, সাবেক বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, এবং প্রধানমন্ত্রী প্রেস সচিব ইহসানুল করিম অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছিলেন। এছাড়া এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমেদের নেতৃত্বে ১১৯ সদস্যের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রে সফরকালে শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হয়েছিলেন।