রাজধানী ঢাকার গুলশানে ইতালীয় নাগরিককে হত্যা করার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর ইন্টারনেটভিত্তিক তৎপরতা নজরদারি করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এমন ওয়েবসাইট ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ’ গতকাল সোমবার এ তথ্য জানায়।
সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের তথ্য অনুযায়ী আইএসের দাবির ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে পুলিশের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। পুলিশের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা চলছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া গতকাল বলেন, কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, এ ব্যাপারে পুলিশ এখনো নিশ্চিত নয়। পুলিশ মনে করছে, এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
গতকাল সন্ধ্যার দিকে গুলশানের কূটনৈতিক পাড়ায় দুর্বৃত্তের গুলিতে ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজার (৫০) নিহত হন। গুলশানে অনেক লোকের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
তাবেলা সিজার নেদারল্যান্ডসভিত্তিক আইসিসিও-বাংলাদেশ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রুফস প্রকল্পের ব্যবস্থাপক বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। আইসিসিও সারা বিশ্বে খাদ্যনিরাপত্তা ও দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে কাজ করে।
পুলিশ সূত্র নিশ্চিত করেছে, নিহত ব্যক্তির কিছু খোয়া যায়নি। তার কাছে মোবাইল ফোন ও একটি কাপড়ের ব্যাগে জগিংয়ের কাপড় পাওয়া গেছে।
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় গুলশান ২ নম্বরের ৯০ নম্বর সড়ক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন সিজার। এ সময় তিন যুবক মোটরসাইকেলে তাকে অনুসরণ করে। একপর্যায়ে দুজন মোটরসাইকেল থেকে নেমে তাকে লক্ষ্য করে পরপর তিনটি গুলি ছোড়ে। তিনটি গুলিই তার শরীরে বিদ্ধ হয়। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। লোকজন ধরাধরি করে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যায়। সন্ধ্যা সাতটার দিকে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাতে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ ঘটনাস্থলটি হলুদ ফিতা দিয়ে ঘিরে রেখেছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অপরাধ শনাক্তকরণ দল আলামত সংগ্রহ করছে।
পুলিশের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান বলেছেন, সম্ভাব্য আলামত সংরক্ষণ করা হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে। নিহত ব্যক্তির কাছ থেকে কিছু খোয়া যায়নি বলে মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা পূর্বপরিকল্পনা থেকে ঘটে থাকতে পারে।
পুলিশ জানায়, তাবেলা সিজার আইসিসিও-বিডির যে কার্যালয়ে চাকরি করতেন, সেটি গুলশান-২-এর ৩০ নম্বর সড়কে অবস্থিত। ৫৪ / ৫১ নম্বর সড়কের একটি ফ্ল্যাটে তিনি একাই থাকতেন।
গত রাতে ওই ভবনে গিয়ে দেখা যায়, গোয়েন্দা পুলিশ সিজারের কাছে কারা কারা এসেছে, তাদের নামের তালিকা সংগ্রহ করেছে। আইসিসিও-বিডির একজন প্রতিনিধির কাছ থেকে পুলিশ জানতে পারে, সিজার গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে অফিস থেকে বের হয়ে যান। এরপর তিনি কোথায় ছিলেন, তা কেউ বলতে পারেননি। তবে তার কাছে পাওয়া জগিংয়ের ব্যাগ দেখে পুলিশ মনে করছে তিনি জগিং করে বাসায় ফিরছিলেন।
এর আগে ২০১২ সালের ৫ মার্চ মধ্যরাতে গুলশানের ১১৭ নম্বর সড়কে নিজের বাসার কাছে গুলিবিদ্ধ হন সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা খালাফ আল আলী। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় গুলশান থানার উপপরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেন। ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বর এ মামলায় পাঁচ আসামিকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেন আদালত। আসামিরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন।