সরকারি চাকরির আবেদনে কোনো সনদের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে না। লাগবে না সত্যায়িত ছবিও। মৌখিক পরীক্ষার সময় মূল সনদ দেখাতে হবে। সচিব কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন পদস্থ কর্মকর্তা জানান, সরকার ধীরে ধীরে ভর্তি, ঋণ গ্রহণ, ব্যাংক হিসাব খোলাসহ বিভিন্ন কাজে সত্যায়নের বাধ্যবাধকতা তুলে দেয়ার কথা ভাবছে। তবে পাসপোর্টসহ কিছু স্পর্শকাতর বিষয়ের ক্ষেত্রে এটা বহাল থাকবে। পাসপোর্টের আবেদন এখন সপ্তম বা তদূর্ধ্ব গ্রেডের কর্মকর্তা সত্যায়ন করতে পারেন। এ ছাড়া সাংসদ, মেয়র বা স্থানীয় সরকারের চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান, অধ্যক্ষ, অধ্যাপক বা প্রধান শিক্ষক, সম্পাদকসহ কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তিকে পাসপোর্টের আবেদন ও ছবি সত্যায়নের এখতিয়ার দেয়া হয়েছে।
অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে সরকার ‘শ্রেণী’ তুলে দিয়ে গ্রেডের ভিত্তিতে কর্মীদের মর্যাদা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয়ায় প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা বলে কিছু থাকছে না। সে জন্য সত্যায়নের কাজটি কোন গ্রেডের কর্মকর্তা করবেন, তা এখন পর্যন্ত নির্ধারণ করেনি সরকার।
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ-সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সব কাজে সত্যায়নের যে বাধ্যবাধকতা তা তুলে দেয়া উচিত। জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র, অনলাইনে শিক্ষা সনদ দেয়া, পাসপোর্টসহ নাগরিক তথ্য ‘ডিজিটালাইজড’ হয়ে গেলে কয়েক বছর পর এসব সত্যায়নের আর প্রয়োজন হবে না।
দেশে শিশু থেকে বয়স্ক পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রায় সব নাগরিককে লেখাপড়া, চাকরি বা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা নেয়ার জন্য ছবি, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদসহ বিভিন্ন কাগজপত্র সত্যায়িত করতে হয়। এ জন্য প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তার স্বাক্ষর নেয়া বাধ্যতামূলক। তবে অপরিচিত হলে কেউ সত্যায়িত করতে চান না। ফলে বিড়ম্বনা এড়াতে মিথ্যা সত্যায়নের হিড়িক পড়ে যায়।
মূল সনদ যাচাই-বাছাই না করে শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ দেয় না কোনো বিশ্ববিদ্যালয়। তবু ভর্তিসহ সব ক্ষেত্রে আবেদনের সময় মূল সনদের ফটোকপি করে তা সত্যায়িত করার জন্য ঘুরতে হয় প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তার পেছনে। তাদের অনেকেই আবার চেনাশোনা না থাকলে সই দিতে চান না। ফলে অনেক ক্ষেত্রে সত্যায়িত করা হয় ভুয়া সিল ও জাল সই ব্যবহার করে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলেছে, এখন থেকে নির্ধারিত একটি ফরমে আবেদন করতে হবে চাকরিপ্রার্থীদের। চার কপি রঙিন ছবি ছাড়া আবেদনের সময় আর কোনো কাগজপত্র দিতে হবে না। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার সময় ছবি ও মূল কাগজপত্র দেখা হবে।
আবেদনের সঙ্গে সত্যায়িত কাগজপত্র দিতে হবে না। শুধু অঙ্গীকারনামায় প্রার্থীকে স্বাক্ষর করতে হবে, যেখানে বলা থাকবে, ‘ওপরে বর্ণিত তথ্যাবলি সম্পূর্ণ সত্য। মৌখিক পরীক্ষার সময় উল্লিখিত তথ্যগুলো প্রমাণের জন্য সব মূল সনদ ও রেকর্ডপত্র উপস্থাপন করব। কোনো তথ্য অসত্য প্রমাণিত হলে আইনানুগ শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য থাকব।’
সরকারি চাকরির বাইরে অন্য ক্ষেত্রেও তা অনুসরণ করা হবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। ওয়েবসাইট।