পবিত্র হজ পালনকালে সৌদি আরবের মিনায় পদদলিত হয়ে নিহত ৭১৭ জন হাজির মধ্যে অন্তত ৪জন বাংলাদেশী রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে। সৌদি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, শয়তানের দিকে কংকর নিক্ষেপের সময় মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটেছে। কর্মকর্তারা জানান, তারা এখনো মৃতের সংখ্যা গণনা করছে। এতে অন্তত ৮৬৩ জন আহত হয়েছে। হজ পালনকারীরা কর্তৃপক্ষের নিয়ম অনুসরণ করেনি বলে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলেও তাদের দাবি। হজের সময় গতকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মিনায় দুর্ঘটনায় জামালপুর ও সুনামগঞ্জের ২ নারী এবং ফেনীতে ভাই-বোন মিলে মোট ৪ বাংলাদেশী প্রাণ হারিয়েছেন। বাংলাদেশ দূতাবাস হতাহতদের চিহ্নিত করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া জামালপুরের নিহত ফিরোজা খানম শহরের হাটচন্দ্রা মোল্লাবাড়ি এলাকার খন্দকার সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী। আর সুনামগঞ্জের নিহত জুলিয়া হুদা শহরের হাজিপাড়া এলাকার মুকুল হুদার স্ত্রী।
এছাড়া ফেনীর নিহত তাহেরা বেগমের স্বামীর বাড়ি সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের সুলাখালি গ্রামে। আর তার ভাই নিহত নূর নবী মিন্টু থাকেন একই উপজেলার বগাডানা ইউনিয়নে। এদিকে আমাদের স্থানীয় প্রতিনিধি জানান, জামালপুরের ফিরোজা হাটচন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শেষে অবসরে ছিলেন বলে তার ছোট ছেলে খন্দকার ফরিদুল ইসলাম জানিয়েছেন। এছাড়াও ফিরোজ, শফিউল আজম, ইকবাল বাহার চৌধুরী ও সাইফুল ইসলাম নামে তাদের কয়েকজন আত্মীয়ও আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
পক্ষান্তরে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের হজ কাউন্সিলর এম আসাদুজ্জামান টেলিফোনে জানিয়েছেন, ৬০ বছর বয়সী বাংলাদেশী মহিলা ফিরোজা বেগমসহ মোট ৪ জন কাংলাদেশী মিনায় পদদলনের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়াও অনেক বাংলাদেশী এতে আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, নিহতদের আত্মীয় স্বজন মিনায় বাংলাদেশ হজ ক্যাম্পের কর্মকর্তাদের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন। তবে তারা জানান, সৌদি কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থল থেকে অন্য লাশের সাথে তাদের লাশও সরিয়ে নিয়ে গেছে।
এদিকে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সৌদি কর্তৃপক্ষ মিনায় নিহতদের চিহ্নিত করবে বলে তারা অপেক্ষায় রয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, জাতীয়তার ভিত্তিতে সকল লাশ সনাক্ত করতে কমপক্ষে ৪৮ ঘন্টা লেগে যেতে পারে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম এশিয়া শাখার মহাপরিচালক নাজমুল ইসলাম বলেছেন, নিহতদের মধ্যে বাংলাদেশীও রয়েছে। তবে আমাদের ধারণা, সকল লাশ সনাক্ত করতে সৌদি কর্তৃপক্ষের দুদিন লেগে যেতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন, মক্কায় ২ সপ্তাহ আগে ক্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ১১৭ জন হজ পালনকারীকে চিহ্নিত করতে তাদের ৩ দিন সময় লেগেছিল।
সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মশি এর আগে জানিয়েছেন, তিনি অসমর্থিত খবরে জেনেছেন যে, বেশ কিছু বাংলাদেশী পদদলিত হওয়ার ঘটনায় আহত হয়েছেন এবং মিনায় রাষ্ট্র পরিচালিত হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। টেলিফোনে ঢাকায় আলাপকালে তিনি জানিয়েছেন, আমাদের ফার্স্ট সেক্রেটারী এবং দূতাবাসের কয়েকজন কর্মকর্তা হাসপাতালের প্রবেশ মুখে অবস্থান করছেন। বিস্তারিত জানার জন্য এখনো কেউ ভিতরে যাওয়ার সুযোগ পাননি। আমি এখন সেখানে যাচ্ছি এবং আমাকে তারা হাসপাতালের ভিতরে যাওয়ার সুযোগ দিবে বলে আশা করছি। মিনায় বাংলাদেশের অস্থায়ী হজ ক্যাম্পের দুটি ফোন নম্বর হচ্ছে- +৯৬৬৫৩৭৩৭৫৮৫৯ এবং +৯৬৬৫০৯৩৬০০৮২।