বাংলাদেশে ঈদ সামনে রেখে চামড়া ব্যবসায়ীরা গতবারের তুলনায় এবার ত্রিশ শতাংশ কমে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের মূল্য নির্ধারণ করেছে। এনিয়ে এবছরও বিতর্ক দেখা দিয়েছে।
বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, চামড়ার বাজার প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নয়, এটি নিয়ন্ত্রিত বাজার। ফলে চামড়ার দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে রপ্তানিকারক এবং বড় ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখা হয়।
তবে চামড়া শিল্পের প্রধান সংগঠনগুলো বলেছে, সরকারের সাথে আলোচনা করে তাদের সংগঠনগুলো দাম নির্ধারণ করলেও তারা সব পক্ষের স্বার্থ বিবেচনায় নেয়।
৩ বছর ধরে ঈদে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করা হচ্ছে কম দামে।
চামড়ার বাজার নিয়ন্ত্রিত হয় রপ্তানিকারক এবং এই শিল্পে বড় ব্যবসায়ীদের স্বার্থে।
কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতি, ট্যানারি ওনার্স এসোসিয়েশন এবং রপ্তানিকারকদের সমিতি, চামড়া শিল্পের এই তিনটি সংগঠন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করে দাম নির্ধারণ করে থাকে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, কোরবানির পশুর বাজারে যোগান বা কেনার ক্ষেত্রে যতটা প্রতিযোগিতা হয়, সেটা চামড়ার বাজারে দেখা যায় না। চামড়ার বাজার নিয়ন্ত্রিত হয় রপ্তানিকারক এবং এই শিল্পে বড় ব্যবসায়ীদের স্বার্থে।
এছাড়াও তিনি মনে করেন, চামড়ার যোগানদাতারা সংগঠিত নয়।
অন্যদিকে ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির টাকা সাধারণত মাদ্রাসা এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠানে দান করা হয়। ফলে চামড়ার যোগানদাতারা দাম নিয়ে দর কষাকষিতে যান না।
চামড়া পচনশীল হওয়ায় দ্রুত বিক্রির তাগিদও থাকে। এই সুযোগও বড় ব্যবসায়ীরা নিয়ে থাকেন।
চট্টগ্রামের মিরেরসরাই এলাকা থেকে চামড়ার একজন পাইকারি ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেছেন, চামড়া সংগ্রহের দাম তাদের সংগঠনগুলো ঢাকা থেকেই নির্ধারণ করে দেয় এবং সেটিই তাদের মানতে হয়।
এসব বক্তব্য মানতে রাজি নন ট্যানারি ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ।
তার বক্তব্য হচ্ছে, সংগ্রহ করা চামড়ার বেশিরভাগই রপ্তানি করা হয়, সেজন্য আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার বিষয়কে তারা অগ্রাধিকার দেন।
তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, বছরে একবার ঈদে কোরবানির পশু থেকে তাদের শিল্পের বড় যোগান আসে। আর মাঠপর্যায়ে মূলত মৌসুমী ব্যবসায়ীরা সরাসরি চামড়া সংগ্রহ করে।
সেকারণে বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার সম্ভবনা থাকে আর সেই পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্যই দাম নির্ধারণ করা হয় বলে ঐ ব্যবসায়ী নেতা বলেছেন।
বছরে প্রায় ২৪কোটি বর্গফুট চামড়ার চাহিদার ষাট শতাংশই আসে ঈদে কোরবানির পশু থেকে। এর বিশ শতাংশ ব্যবহার হয় দেশের জুতা তৈরির কারখানাসহ চামড়াজাত বিভিন্ন পণ্য তৈরির কাজে । আর বাকি আশি শতাংশ চামড়া ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়।
চামড়া শিল্পের সংগঠনগুলো বলছে ঈদে প্রায় ৪২ লাখ গরু এবং প্রায় ৫ লাখ মহিষ ও ছাগল কোরবানির মাধ্যমে চামড়া সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।