কোরবানির দিন ঘনিয়ে আসায় সরগরম হয়ে উঠেছে রাজধানীর গবাদি পশুর হাটগুলো। সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিটি হাটেই চলছে পুরোদমে পশু বেচা-কেনা। ক্রেতারা জানিয়েছেন, পশুর দামও স্বাভাবিক। তবে নাখোশ বিক্রেতারা।
আরও দেখা গেছে, প্রায় একই ওজনের গরু বিভিন্নজন ভিন্ন ভিন্ন দামে কিনছেন। বয়োবৃদ্ধদের মতে, গরু বাজারে কেউ হারে, কেউ জেতে, কেউবা রশি কেনে।
আগারগাঁওয়ে পশু হাট বসতে না দেয়ায় প্রথমবারের মতো হাজারীবাগ বাজারে গরু কিনতে এসেছেন আতিক রহমান। তিনি মণ তিনেক ওজনের লাল রঙের একটি গরুর দাম কত জানতে চাইলে বিক্রেতা জানালেন, ৭০ হাজার।
জবাবে মুখ কুঁচকে তিনি বললেন, ৪০ হাজার। শেষ পর্যন্ত ওই গরু ৫৫ হাজার দফা-রফা হয়।
একটু এগিয়ে দেখতে পেলাম একই ধরনের আরেকটি গরু অন্য একজন টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। দাম কত জানতে চাইলে বয়স্ক ক্রেতা জানালেন, ৪৫।
দাম শুনে একটু মন খারাপ হলো আতিকের। তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে একটু ভেতরে গিয়ে দেখলাম, একটি গরু সবাইকে তটস্থ করে রেখেছে। চার মণ ওজনের এই গরু ষাট হাজার টাকায় বিক্রি হলেও তাকে কিছুতেই বের করা যাচ্ছে না।
ঐতিহ্য অনুযায়ী, আগামী পরশুই মূল কোরবানি। তাই গরু কেনার জন্য বাকি আছে মাত্র দুইদিন। পশু হাটের সাথে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই দুই দিনই পশু বেচাকেনা মূল সময়। তবে আজই সবচেয়ে বেশি পশু বিক্রি হবে।
বাজরে দেখা গেছে, গোবর কাদার মাখামাখির মাঝে ক্রেতা ও পশু সমানে সমান, দর্শনার্থীও কম নয়।
কমলাপুর হাটে চুয়াডাঙ্গা থেকে সাতটি নিয়ে এসেছেন রহিম নামের এক ব্যাপারী। এ পর্যন্ত তিনটি গরু বিক্রি করেছেন তিনি। তবে দাম নিয়ে নাখোশ তিনি।
রহিম জানালেন, কেনা দামেই গরু বিক্রি করতে হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে বিক্রি কম হয়েছে তাই গরু ছেড়ে দিতে হচ্ছে।
তবে দাম নিয়ে সন্তুষ্ট গরু ক্রেতারা। এই হাট থেকে ৮৫ হাজারে পাঁচ মণ ওজনের একটি জাফর নামের এক ব্যবসায়ী। তার মতে, গরুর দাম বাড়েনি। গত বছরেও একই দামে একই ওজনের গরু কিনেছিলেন বলে জানালেন তিনি।
এই হাটে প্রচুর ভারতীয় গরুও রয়েছে। আছে ছাগল-মহিষ। তবে এসব পশুর বিক্রি কম। সবার ঝোঁক দেশি গরুর দিকে।
কমলাপুর হাটেই কথা হলো ষাটোর্ধ্ব পশু ব্যবসায়ী গফুর আলীর সাথে। প্রায় ৩০ বছর ধরে এ ব্যবসা চালিয়ে আসছেন তিনি।
তার মতে, কোরবানির হাটে কখন কী হয় বলা যায় না, শেষ দুদিনে বারবার রঙ পাল্টায়।
রসিকতার হাসি হেসে তিনি আরও বললেন, এ হাটে কেউ জেতে, কেউ হারে। কেউ বা রশি কেনে। তবে মূল মজা দেখা যাবে আগামীকাল।