আজ মঙ্গলবার শুরু হয়েছে পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। সোমবার রাত থেকেই মসজিদুল হারাম থেকে মিনা অভিমুখে যাত্রা করেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজিরা। পবিত্র কাবা শরিফ থেকে ৯ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে মিনা। কেউ পায়ে হেঁটে আবার কেউবা গাড়িতে চড়ে পৌঁছে গেছেন হাজিরা। তাদের দেহ মোড়ানো এহরামের শুভ্র দুই খণ্ড কাপড়। হজের নিয়তে ইহরাম পরিধান করে মিনার পথে যাত্রা করেছেন এবারের হজে অংশ নেয়া প্রায় ২২ লাখ মুসল্লি। এদিন ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হবে পবিত্র মিনা।
আমির-গরিব, আশরাফ-আতরাফ সকলেরই দীন-হীন এক বেশ। তাদের ভিতুু কম্পিত হৃদয় মথিত কণ্ঠে অখণ্ডভাবে উচ্চারিত হচ্ছে তালবিয়া। লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নি’মাতা, লাকা ওয়াল মুলক,লা শারিকা লাক (আমি হাজির, ও আল্লাহ! আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সমস্ত প্রশংসা এবং নিয়ামত শুধু তোমারই, সমগ্র সাম্রাজ্যও শুধুই তোমার, তোমার কোন শরিক নেই)। এ মধু ধ্বনি মিনা’র আকাশ বাতাসে এক স্বর্গীয় আবহ রচনা করে চলেছে। মিনায় আজ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় এবং সকাল অবধি অবস্থান করবেন তারা। এখানে তালবিয়া, জিকির-আসকার নফল নামাজ, দোয়া-আমলের মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করছেন হাজিরা। অত:পর ৯ জিলহজ ফজরের পর হাজিরা যাত্রা করবেন নতুন গন্তব্যে। যেখানে হবে হজের মূল অনুষ্ঠান, সেই আরাফাতের ময়দানে।
মিনা থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে আরাফাতের এই আ-দিগন্ত প্রান্তরে ৯ জিলহজ (বাংলাদেশে ৮ জিলহজ) সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করবেন। মক্কার অদূরে এই আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের দিনকেই হজের দিন বলা হয়।আরাফাত থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে মুজদালিফায় রাত যাপন ও পাথর সংগ্রহ করবেন হাজিরা। সেখানে যত রাতই হোক মাগরিব ও এশার নামাজ এক সঙ্গে আদায় করবেন তারা। পরদিন ভোরে সেখান থেকে আবার মিনায় ফিরবেন। মিনায় এসে জামারায়ে আকাবায় (বড় শয়তানকে) কংকর বা ছোট পাথর মারা, কোরবানি ও মাথা মুড়িয়ে বা চুল ছেঁটে কাবা শরিফ ফিরে তাওয়াফ করবেন।
নিয়ম অনুযায়ী, আজ মিনায় ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় ও রাত্রি যাপনের পরদিন ৯ জিলহজ ফজরের নামাজ আদায় করে, ভোরে আরাফাতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন তারা। হজ নির্বিঘ্ন করতে এ বছর ১ লাখ নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে এবার অংশ নিচ্ছেন ১ লাখ ৩ হাজার ৯৬৯ জন হাজি। হাজিদের সেবা দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ হজ মিশন। জরুরি সেবা দেয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা হয়েছে মেডিকেল ক্যাম্পগুলো।
মিনা এখন যেন তাঁবুর শহর। যেদিকে চোখ যায়, তাঁবু আর তাঁবু। চৌচালা ঘরের মতো এসব স্থায়ী তাঁবুতে থাকছেন তাঁরা। এ সময় মিনায় আগুন জ্বালানো নিষেধ। কারণ, এতে তাঁবুতে আগুন লেগে যেতে পারে। এজন্য এত লোকের খাবারও বাইরে থেকে রান্না করে নিয়ে আসতে হয়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এসব তাঁবুতে বাতি আছে। আছে বাথরুম। কিছুদূর পর পর আছে খাবারের দোকান। এই দোকানগুলো বছরে পাঁচ দিনের জন্য খোলা থাকে। মোয়াল্লেমের কাছ থেকে দরপত্রের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা দোকান নেন। অল্প সময়ের দোকান বলে জিনিসপত্রের দামও কয়েক গুণ বেশি। বেশির ভাগ দোকানদার ভারতীয় ও পাকিস্তানি। হাজিদের সেবায় মিনায় কিছুদূর পরপরই রয়েছে হাসপাতাল। সেখানে চলছে সার্বক্ষণিক সেবাদান। হাজিদের যেন কষ্ট না হয় সে জন্য মিনায় যাওয়ার সব রাস্তা যানজটমুক্ত রাখা হয়েছে। হজের এই পাঁচ দিন ছাড়া মিনার পুরো এলাকা খালি পড়ে থাকে। চারপাশের প্রবেশদ্বারও তখন বন্ধ করে দেয়া হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় বৈদ্যুতিক সংযোগ, পানির লাইন, টেলিফোন সংযোগ। হজের দুই দিন আগে মিনা এলাকার ফটক খোলা হয়। হজের দুই দিন পর আবার সব বন্ধ করে দেয়া হয়।