বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বৈষম্য বাড়ছে। সেকারণে সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পণা এবং ২০১৫ পরবর্তী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে বৈষম্য কমাতে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকতে হবে। বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং আর্থিক খাতের বৈষম্য কমাতে হবে। এজন্য নীতিগত, প্রাতিষ্ঠানিক সংশোধন ও পুনর্গঠন প্রয়োজন। আজ সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলানগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ (এসডিজি) অর্জনের পথনির্দেশ : অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ এবং সরকারি নীতির যথার্থ প্রয়োগ’ শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠকে এমন মতামত উঠে আসে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ ও একশনএইড বাংলাদেশ যৌথভাবে এই আলোচনার আয়োজন করে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য কিছু সুপারিশ আসে আলোচনা সভায়। সুপারিশসমূহ হলো: সবার জন্য ন্যুনতম সামাজিক সুরক্ষা ও অত্যাবশ্যক নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে; স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা খাতগুলোতে বেশি বিনিয়োগ করতে হবে। নিজস্ব নীতির ভিত্তিতে অভ্যন্তরীন সম্পদ সংগ্রহ বাড়াতে হবে।
এ অনুষ্ঠানের শুরুতেই সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অভ্যন্তরীন সম্পদ সংগ্রহের কৌশল তুলে ধরেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ে পৌঁছানো, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বাস্তবায়ন, এমডিজি’র সাফল্য-ব্যর্থতা মাথায় রেখেই সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, পরিকল্পনার বাস্তবায়নে অর্থায়ন একটি বড় সমস্যা। এমডিজি বাস্তবায়নে আমাদের প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের বৈশ্বিক অর্থায়ন প্রয়োজন ছিল। তবে আমরা পেয়েছি দেড় বিলিয়ন ডলার। দিন দিন আমাদের বিদেশেী অর্থায়ন কমছে। সেকারণে অভ্যন্তরীণ অর্থায়ন বাড়ানো প্রয়োজন।সপ্তম পঞ্চবার্ষীকি বাস্তবায়ন করতে প্রয়োজন হবে প্রায় ৩২ হাজার বিলিয়ন টাকা। যার মধ্যে ২৯ হাজার বিলিয়ন টাকা-ই সরকারকে তুলতে হবে দেশ থেকে। এজন্য বেসরকারি বিনিয়োগকে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
আলোচনার শেষ ড. শামসুল আলম বলেন, বৈষম্য সমাজে সমস্যা সৃষ্টি করে। বৈষম্য কমাতে পরিল্পনায় আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে সামাজিক সমস্যা সমাধানের জ্ঞানে ঘাটতি আছে। মানুষের সচেতনতা কম। মানুষ সচেতন হলে অনেক সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে প্রযু্িক্তকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
আলোচনা অনুষ্ঠানে অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় আমাদের অর্জন হয়েছে। তবে গুণগত মান অর্জন হয়েছে কম। স্কুলে ভর্তি হওয়া নিশ্চিত হলেও গুণগত শিক্ষা আমরা দিতে পারিনি। স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। আমাদের দেশে ধনী-গরীবের বৈষম্য বাড়ছে। গরীব মানুষের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা, চিকিৎসা বা আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করতে পারছি না। জাতিসংঘের নতুন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় বৈষম্য ঘোচাতে কাজ করার কথা বলা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে আমাদের কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য আর আর্থিক সুবিধা দিয়ে গরীর মানুষের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন আসবে। দেশে বিনিয়োগ বাড়বে। পরিকল্পনার বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, অভ্যন্তরীন সম্পদ সংরক্ষণ বৃদ্ধির জন্য দুর্নীতি বড় বাধা। আমাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও নীতির বাস্তবায়নে বৈষম্য বাড়ছে। বৈষম্য কমাতে নীতিগত, প্রাতিষ্ঠানিক সংশোধন প্রয়োজন। দুর্নীতি ও বৈষম্যের জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে না পারলে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে না। বেসরকারী বিনিয়োগও নিরুৎসাহিত হবে।
একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, ২০১৫ সাল আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ২০১৬ সাল থেকে বিশ্ব নেতারা নতুন পরিকল্পনা করছে। যাকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি বলা হচ্ছে। ২০৩০ সাল পর্যন্ত উন্নয়ন পরিকল্পনায় সুশাসন, বৈষম্য কামানোর প্রতি জোর দিতে হবে। সেটি না হলে অভ্যন্তরীন অর্থায়ন বিনিয়োগ বাড়বে না।
অধ্যাপক সেলিমুল হক বলেন, পঞ্চবার্ষীকি পরিকল্পনা বা এসডিজি বাস্তবায়নে অবশ্যই দেশীয় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। ক্রমান্বয়ে বিদেশী সহযোগিতা কমতে থাকবে দেশে। তবে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক অর্থায়ন বেশি আসবে। তাই এই বিষয়ে জোর দিতে হবে। কারণ জলবায়ু অর্থায়ন পাওয়া আমাদের অধিকার।