অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে বিদেশি ঋণ-সহায়তা হিসেবে ৬৫৮ দশমিক ৯৭ মিলিয়ন ডলার (৫ হাজার ৩৩৭ দশমিক ৬৬ কোটি টাকা) পাওয়া গেছে, যা পুরো অর্থবছরের প্রত্যাশার ২৯ শতাংশের সমান।
চলতি অর্থ বছরের বাজেটে সরকার আশা করেছে, বিদেশি উৎস থেকে মোট ১৮ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা ঋণ-সহায়তা পাওয়া যাবে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন ঋণদাতা সংস্থা ও দেশের কাছ থেকে আরো ৩২ হাজার ৩৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা (৩ হাজার ৯৫৫ দশমিক ০৪ মিলিয়ন ডলার) ঋণ-সাহায্যের অঙ্গীকার পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে ঋণ হিসেবে ২৯৯২ দশমিক ৮৮ মিলিয়ন ডলার (২৪ হাজার ২৪১ দশমিক ৩৩ কোটি টাকা) এবং অনুদান হিসেবে ৯৬২ দশমিক ২৯ মিলিয়ন ডলার (৭ হাজার ৭৯৪ দশমিক ৫৫ কোটি টাকা) পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন মুহিত।
বিকাল সোয়া ৫টার পর ডেপুটি স্পিকার শওকত আলীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। দিনের কার্যসূচির শুরুতেই টেবিলে প্রশ্নোত্তর উত্থাপিত হয়। এক প্রশ্নের জবাবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের অগ্রগতির চিত্রও জাতীয় সংসদে তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী।
তিনি জানান, জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৩৪ শতাংশ। ২৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে দুটি ছাড়া কোনোটিই মোট কর্মসূচির ৫০ শতাংশও বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
এর মধ্যে পরিসংখ্যান বিভাগ সর্বোচ্চ ১৪৪ শতাংশ এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সর্বনিু ১ শতাংশ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে।
অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে) পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয় ৪১ শতাংশ, কৃষি মন্ত্রণালয় ৪৭ শতাংশ, মৎস্য ৩৬ শতাংশ, পরিবেশ ২৬ শতাংশ, ভূমি ৫১ শতাংশ, পানি সম্পদ ২৯ শতাংশ, খাদ্য ২৬ শতাংশ, দুর্যোগ ৪৭ শতাংশ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৪৬ শতাংশ, নৌ পরিবহন ১৫ শতাংশ, বিমান ১ শতাংশ, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ৪৬ শতাংশ, সড়ক ৪২ শতাংশ, রেল ৩০ শতাংশ, সেতু ৯ শতাংশ, অর্থ ৩৮ শতাংশ, ব্যাংক ও আর্থিক বিভাগ ৩৫ শতাংশ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ ২৭ শতাংশ, পরিকল্পনা ৩৬ শতাংশ, আইএমইডি ৩৫ শতাংশ, যুব ও ক্রিড়া ৩ শতাংশ, জাতীয় সংসদ সচিবালয় ২৯ শতাংশ, সংসদ বিষয়ক বিভাগ ৫৩ শতাংশ, জনপ্রশাসন ৩২ শতাংশ, পিএসসি ২১ শতাংশ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৩৮ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে।
চলতি অর্থবছরের শুরুতে সরকার ৪৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মসূচি ঘোষণা করলেও পরে তা ৪০ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেনের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রবৃদ্ধির পরিমাণ গত কিছু দিনে কিছুটা বাড়লেও তা আমানতের চেয়ে বেশি নয়।
স¤প্রতি সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের ঋণ প্রবৃদ্ধি আমানতের প্রবৃদ্ধির তুলনায় কিছুটা বাড়লেও রাষ্ট্রায়াত্ত চারটি ব্যাংকেই ঋণ আমানত অনুপাত সহনীয় মাত্রায় রয়েছে বলে মন্তব্য করেন মুহিত।
তিনি বলেন, “এ ব্যাংকগুলোতে বর্তমানে কোনো ঝুঁকি নেই।”
কামাল আহমেদ মজুমদারের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, গত কিছু দিনে টাকার বিপরীতে ডালারের হারে স্থিতিশীলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কিছুটা বাড়ায় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে আসায় আগামীতে মূল্যস্ফীতিও কমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী।