দেশবাসীর ঈদ আনন্দ নির্বিঘœ করতে ঈদ পূর্ববর্তী, ঈদের সময় এবং ঈদ পরবর্তীকালের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত মহা পুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) মোঃ মোখলেসুর রহমান এ কথা জানিয়েছেন। রবিবার পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ঈদ নিরাপত্তা সংক্রান্ত সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন তিনি। সাংবাদিক সম্মেলনে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ডিআইজি (অপারেশনস্) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, ডিআইজি (এইচআর) মোঃ আতিকুল ইসলাম, এআইজি (মিডিয়া) মোঃ নজরুল ইসলাম, এআইজি (কনফিডেন্সিয়াল) মো. মনিরুজ্জামান এবং এআইজি (প্রশাসন) রখফার সুলতানা খানম উপস্থিত ছিলেন।
ভারপ্রাপ্ত আইজিপি বলেন, মানুষের চলাচলের জন্য স্থল, রেল ও নৌপথে পুলিশী প্রহরা থাকছে। সারাদেশের পশুর হাটে পশু পরিবহন সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশ বিভিন্ন পশুর হাটে দায়িত্ব পালন করছে। কোথাও কোন অস্বাভাবিক পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তাৎক্ষণিকভাবে তা নিরসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রধান প্রধান ঈদ জামাতস্থলে পুলিশ সদস্যরা সম্মানিত মুসল্লিদের নিরাপত্তা প্রদান করবে।
অজ্ঞান/মলমপার্টির অপতৎপরতার ব্যাপারে সজাগ থাকার জন্য তিনি সচেতন নাগরিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা ঠেকাতে অপরিচিত লোক/হকারের কাছ থেকে খাবার ও পানীয় গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য তিনি যাত্রীসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানান। ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য অপরাধ দমনে পুলিশকে সহযোগিতা করার জন্য সমাজের সব মহলের সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।
পরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গরু ব্যবসায়ী, হাট ইজরাদার এবং স্থানীয় কমিউনিটি পুলিশের সমন্বয়ে পশু পরিবহন এবং পশুর হাটে পাহারাসহ পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পশুর হাটে জাল নোট শনাক্তকরণ যন্ত্র স্থাপন করে জাল টাকা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কেউ যেন নির্ধারিত হাসিলের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতে না পারে সেজন্য পুলিশ সদস্যরা সজাগ ও তৎপর রয়েছে।
পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’। তিনি বলেন, দু’একজন সদস্যের বিচ্যুতির কারণে গোটা পুলিশ বাহিনী কলঙ্কিত হতে পারে না।
স¤প্রতি টাঙ্গাইলে সংগঠিত ঘটনাকে দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এ ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, তদন্ত রিপোর্ট হাতে এলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রোএকটিভ পুলিশিংয়ের কারণে সমাজে বর্তমানে অপরাধ হ্রাস পাচ্ছে। ঈদ উপলক্ষে এ ধরনের পুলিশি কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে আসন্ন ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে দেশব্যাপী কয়েক স্তরে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র্যাব। নিরাপত্তা নিশ্চিত কল্পে রাজধানীসহ সারাদেশে পর্যাপ্ত সংখ্যক র্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে উল্লেখ করে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ইতোমধ্যেই র্যাব গোয়েন্দা নজরধারী বৃদ্ধি করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। র্যাবের বিশেষ আভিযানে গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে অভিযান চালিয়ে টিকেট কালোবাজারি চক্রের সদস্য মো. জাহাঙ্গীর মিয়া (২৫), মো. বাবুল সিকদার (৪৭), মো. আবুল কালাম (৩৬), মো. সেলিম (৪০), দুলাল বাবু (৬০), মো. তৌহিদুল ইসলাম বাপ্পি (১৪), মো. শরীফ (২৫) ও শফিকুল ইসলামকে (২৮) গ্রেফতার করা হয়। গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ ১০ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে র্যাব।
আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ দেশব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ পশুর হাট, পশু পরিবহন, গার্মেন্ট শিল্প, বিপণী বিতান, বাস ও রেলষ্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল এবং ফেরী ঘাটে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে যাতে নির্ভয়ে বিভিন্ন গরুর হাটে কোরবানীর পশু কেনা-বেচা করতে পারে সে জন্য র্যাব সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি ইউনিফর্মে নিরাপত্তা প্রদানের মাধ্যমে চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী এবং টিকেট কালোবাজারীদের গ্রেফতারের ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং ঢাকা শহরের বড় বড় কোরবানীর পশুর হাটে র্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপনের মাধ্যমে নিরাপত্তা কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে।
শহরে প্রবেশ ও বাহির পথসমূহসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পেট্রোল জোরদার করার পাশাপাশি মাঝে মাঝে মোবাইল চেকপয়েন্ট স্থাপন করে তল্লাশী পরিচালনা এবং স্থানভেদে মোটরসাইকেল টহল বা পায়ে চলা টহল দল নিয়োগ করা হবে। র্যাবের বো¤¦ ডিসপোজাল ইউনিট ও র্যাব ডগ স্কোয়াড সার্বক্ষণিকভাবে বিভিন্ন বাস, ট্রেন, লঞ্চ ষ্টেশন ও বিভিন্ন স্থানে আকস্মিক স্যুইপিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এছাড়াও যে কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা রোধকল্পে র্যাবের প্রতিটি ব্যাটালিয়নে বিশেষ ষ্ট্রাইকিং রির্জাভ ফোর্স সার্বক্ষণিকভাবে ষ্ট্যান্ডবাই থাকবে। জাতীয় ঈদগাহ্ ময়দান এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সিসিটিভি বা ক্যামেরা স্থাপন করে সার্বক্ষণিক সকল কার্যক্রম সদর দপ্তর থেকে মনিটর করা হচ্ছে। ঈদের আনন্দে যখন সমগ্র জাতি উদ্বেল থাকবে র্যাব তখনও শান্তি শৃংখলা ও নিরাপত্তা রক্ষায় সারা দেশব্যাপী অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে নিয়োজিত থাকবে।