আকস্মিক ঝড়ের কবলে পড়ে বঙ্গোপসাগরে ১১টি ফিশিং ট্রলার ডুবে গেছে এতে এখনো নিখোঁজ রয়েছে দেড়শো জেলে ও ৪টি ফিশিং ট্রলার। উত্তাল সাগর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় অর্ধ-শতাধিক জেলেকে। আজ রোববার ভোরে সাগরের ১নং ফেয়ারবয়ার গাংরাইল ও হিরনপয়েন্ট এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
শরণখোলা, বাগেরহাট, বরগুনা,পাথরঘাটা, মহিপুরও তুষখালী মৎস্য আড়ৎদার সমিতি ও ব্যাবসায়ী সুত্রে জানা যায়, আজ রোববার ভোর ৪টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যে আকস্মিক ঝড়ে ওইসব এলাকার ১১টি ফিশিং ট্রলার ডুবে গেছে। শরণখোলা মৎস্য আড়ৎদার ও ইউপি সদস্য মজিবর রহমান তালুকদার জানান, তার এলাকার রাজৈর গ্রামের কামাল হোনে হাওলাদারের এফবি আরিফ ট্রলারটি ঝড়ের কবলে পড়ে ১৬ জন জেলেসহ ডুবে যায়। ১৩ জেলেকে অন্য ট্রলার উদ্ধার করলেও এমাদুল (৩০), কালাম (৬০) সহ ৩ জেলে নিখোঁজ রয়েছে। দিকচর গ্রামের মন্নান মিয়ার এফবি মন্নান ট্রলার একই সময়ে ১৫ জেলেসহ ডুবে গেলেও সকলে উদ্ধার হয়েছে।
বাগেরহাটের মৎস্য আড়ৎদার মিজানুর রহমান জানান, তার এফবি সজল ও একই এলাকার সালাম মিয়ার এফবি সাগর ট্রলার দুটি ডুবে যায়। এতে ২৮ জেলে নিখোঁজ রয়েছে। তিনি আরো জানান, বাগেরহাটের ৪৫ জেলেসহ এফবি ভাই ভাই, এফবি রূপক ও এফবি শাহজালাল নামক ৩টি ফিশিং ট্রলারের কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছেনা। মঠবাড়িয়া উপজেলার তুষখালীর মৎস্য ব্যবসায়ী আলমগীর পেসকার জানান, তার এলাকার ৪৫ জেলেসহ রাহান মিয়ার এফবি খানজাহান, মন্টু মিয়ার এফবি তামান্না ও মোফাজ্জেল হোসেনের একটি ফিশিং ট্রলার (নাম জানা সম্ভব হয়নি) ডুবে গেছে। এর মধ্যে খানজাহান ট্রলারের ১৫ জেলে উদ্ধার হলেও অপর দুটি ট্রলারের ৩০ জেলে নিখোঁজ রয়েছে।
পটুয়াখালী জেলার মহিপুরের মৎস্য ব্যবসায়ী শাহাজাহান মিয়া জানান, ওই ঘটনায় তার আড়তের এফবি হাসিনা-সামাদ ফিশিং ট্যলারটি ১০ জেলেসহ ডুবে যায়। ৭ জেলে উদ্ধার হলেও ৩ জেলে নিখোঁজ রয়েছে। তিনি আরো জানান, তার এলাকার এফবি ইমরান ট্রলার ১৬ জেলেসহ ডুবে সব জেলে নিখোঁজ রয়েছে। বরগুনা জেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, তার এলাকার ২৬ জেলেসহ সোহরাব মিয়ার এফবি মায়ের দোয়া ও সোহাগ মিয়ার এফবি সোহাগ ট্রলারটি ডুবে যায়। এর মধ্যে এমাদুল ও কালাম এখনো নিখোঁজ রয়েছে।
বরগুনা জেলা ফিশিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আ. মান্নান জানান, পাথরঘাটার ১৯ জেলেসহ শিপন দাসের একটি ফিশিং ডুবে গেছে। এদের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের এসিএফ (সহকারী বন সংরক্ষক) মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ ট্রলারডুবির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, কি পরিমাণ ট্রলার ডুবেছে এবং কতো জেলে নিখোঁজ হয়েছেন তার সঠিক তথ্য জানা সম্ভব হয়নি। বনবিভাগের কর্মীরা এসব তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। দুর্যোগের কবলে পড়ে শত শত ট্রলার সুন্দরবনের কচিখালী, সুপতি, কটকা, নারকেলবাড়িয়াসহ বিভিন্ন খালে আশ্রয় নিয়েছে। এসব ট্রলার ও জেলেদের সার্বিক নিরাপত্তায় বনবিভাগ নিয়োজিত রয়েছে। মংলা কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের কমান্ডার ক্যাপ্টেন মেহেদী মাসুদ জানিয়েছেন, তারা সাগরে ট্রলার ডুবি ও জেলে নিখোঁজের ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন। এব্যাপারে নৌবাহিনীর সাথেও যোগাযোগ করা হচ্ছে।