১৬ বছরের নাজিন মুস্তফা। একটি হুইল চেয়ারে চড়ে রওয়ানা দিয়েছে সিরিয়া থেকে, গন্তব্য জার্মানি। সেখানে রয়েছে তার ভাই। এরই মধ্যে সে হাঙ্গেরি ও ক্রোয়েশিয়া পাড়ি দিয়ে পৌঁছেছে স্লোভেনিয়ায়। কিন্তু শেষতক কি ভাইয়ের সঙ্গে মিলিত হতে পেরেছে চলৎশক্তিহীন এই কিশোরী?
দুই দিন আগে হাঙ্গেরির সীমান্তে তার সঙ্গে কথা হয় সংবাদদাতার। সেখানে আরও বহু শরণার্থীর সাথে সীমান্তে আটকে ছিল নাজিন। তার সঙ্গে কথা বলে সংবাদদাতা জানতে পারেন, দারুণ স্বপ্নবাজ সে। নাজিন বলছিল, ‘আমি মহাকাশচারী হতে চাই। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড দেখতে চাই। আমি এলিয়েন খুঁজে বের করতে চাই। আর আমি রানীর সাথে দেখা করতে চাই।’ পরে অবশ্য একটি ট্যাক্সিতে চেপে ক্রোয়েশিয়ার উদ্দেশে রওয়ানা হতে পারে সে। সংবাদদাতা তাদেরকে অনুসরণ করেন। এক পর্যায়ে তাদেরকে ট্যাক্সি ছেড়ে দিয়ে হেঁটে একটি ভুট্টার ক্ষেত অতিক্রম করতে দেখেন তিনি। তারা এ সময় এক সীমান্ত থেকে আরেক সীমান্তে ছুটে বেড়াচ্ছিল। নাজিনের ভাই এর আগেই জার্মানিতে পৌঁছেছে। সেখানে সে রাজনৈতিক আশ্রয়ও প্রার্থনা করেছে।
কথিত ইসলামিক স্টেট জঙ্গিরা সিরিয়ার কাবানে অধিকার করে নেবার পর সেখান থেকে পালিয়ে আসে পরিবারটি।
নাজিনের ভাই বলছিল, ‘আমি জানি তারা ক্রোয়েশিয়াতে পৌঁছেছে এবং সেখানে আটকে রয়েছে। কিন্তু আমি তার জন্য এই মুহূর্তে কিছু করতে পারছি না।’
নাজিন অবশ্য ক্রোয়েশিয়া থেকে শেষ পর্যন্ত বেরিয়ে যেতে সক্ষম হয় এবং স্লোভেনিয়ায় গিয়ে পৌঁছায়। দেশটি জার্মানি থেকে খুব দূরে নয়। কিন্তু এখানে এসে তার যাত্রা আবার থমকে যায়। আরও কয়েকশ’ শরণার্থী এবং অভিবাসীর সাথে পুলিশের হাতে আটক হয় নাজিন। কিন্তু তারপরও হাল ছাড়ে না সে।
সে জানায়, আমি এখনো হাল ছাড়ছি না। আমার মনে হয় জার্মানিতে পৌঁছাতে হয়তো আর কিছু বেশি সময় লাগবে। এখান থেকে পরে অবশ্য তাদের আরেকটি শিবিরে নিয়ে আটকে রাখা হয় বলে সংবাদদাতা জানতে পারেন এবং পথিমধ্যে নাজিনের সাথে কথা বলে দেখা যায়, সে এই পর্যায়ে এসে কিছুটা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
স্লোভেনিয়াতে অবশ্য আপাতত শেষ হলো নাজিন মুস্তফার ইউরোপ যাত্রা। শেষ পর্যন্ত ভাইয়ের কাছে জার্মানিতে পৌঁছতে পারবে কিনা, সেটা থাকল একটা বিরাট প্রশ্ন হয়ে। সূত্র : বিবিসি বাংলা