‘রাজনীতিতে নেতিবাচকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে তরুণরা’

‘রাজনীতিতে নেতিবাচকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে তরুণরা’

দেশের রাজনৈতিক চর্চায় তরুণদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়গুলো গুরুত্ব পাচ্ছে না। রাজনীতিতে asd8asidalsতরুণ প্রজন্মকে নেতিবাচকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। রাজনীতিতে তরুণদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটছে না। এসব কারণে তরুণরা নিজেদের দায়িত্ববোধ বা করণীয় সম্পর্কেও জানার সুযোগ পাচ্ছে না।

শনিবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে টিসিবি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপের আলোচনায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। অনুষ্ঠানে প্যানেল সদস্য ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ এবং মায়ার সহ-প্রতিষ্ঠাতা শাহানা সিদ্দিকী।

অনুষ্ঠানে এক দর্শকের প্রশ্ন ছিল, বাংলাদেশে বর্তমানে যে ধরনের রাজনীতি চলছে, তা তরুণ প্রজন্মের চিন্তা-ভাবনা ও আশা-আকাঙ্ক্ষাকে কতটা ধারণ করতে পারছে?

উত্তরে ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, “তরুণ প্রজন্ম একটি নিরাপদ, সুশৃঙ্খল জীবন চায়। তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তাটাও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বর্তমানে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তরুণ প্রজন্মকে নেতিবাচকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।”

শাহানা সিদ্দিকী বলেন, “আইন-কানুন বা অনেক ধরনের স্বাস্থ্যসেবায় তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ বা চাহিদাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। রাজনীতিতে নিজের অধিকার ও দায়িত্ব জানাটাও গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে অনেক বড় ঘাটতি রয়েছে তরুণ প্রজন্মের জ্ঞানের।”

আসাদুজ্জামান রিপন বলন, “দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে চিন্তা-ভাবনা আমাদের রাজনীতিকদের মধ্যে থাকা উচিত, সেটা নেই। রাজনীতিকদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়ে যাওয়া রাজনীতিকদের জন্য ভালো না। এটি আমরা উপলব্ধি করছি এবং এ থেকে উত্তরণেরও চেষ্টা করছি।”

বর্তমানের রাজনীতি তরুণদের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে পারছে না বলে অনুষ্ঠানের ৯৯ ভাগ তরুণ মত দেন।

দর্শকদের থেকে এক তরুণী বলেন, “রাজনীতিতে তরুণদের আশা-আকাঙ্ক্ষার বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেয়া হয় না।”

আরেক তরুণ দর্শক বলেন, “রাজনীতিতে তরুণদের ভূমিকা রাখার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জোর করে তাদের ওপর রাজনৈতিক মত চাপিয়ে দেয়া হয়। রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে অংশ নিতে তাদের বাধ্য করা হয়।”

শাহরিয়ার আলম বলেন, “রাজনীতি সমগ্র বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার তরুণদের কথা চিন্তা করেই কাজ করে যাচ্ছে।” তার মতে, সব সময় সরকারের পক্ষে মানুষের চাহিদা বা আগ্রহ বোঝা সম্ভব হয় না। এ জন্যই সম্প্রতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি মানতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন রাস্তা পর্যন্ত গড়িয়েছে।

অনুষ্ঠানে আরেকটি প্রশ্ন ছিল- বাংলাদেশে শিক্ষার সবগুলো স্তরে যে মান এখন রয়েছে, তা ভবিষ্যতে দেশের জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে কি যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আপনারা মনে করেন?

উত্তরে আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, “শিক্ষকদের একটি সঠিক জীবনমান দিতে না পারলে তারা কেন এ পেশায় আসবে? তাহলে শিক্ষার্থীরা কি করে সঠিক শিক্ষা পাবে? উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কিন্তু এখন সেই অর্থে রাজনীতি নেই। শিক্ষকরা সরাসরি দলবাজিতে নেমে গেছেন। ভালো শিক্ষকেরও অভাব আছে।”

শাহানা সিদ্দিকী বলেন, “বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তির যে ধারা, এদেশ কিন্তু সেদিক থেকে পিছিয়ে আছে। আমাদের শিক্ষকরা সেদিকে একেবারেই মনোযোগী না। তারা অনেক বেশি মনোযোগী কনসালটেন্সি নিয়ে।” তার মতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের আন্তরিকতা কতটুকু, সেটি বড় প্রশ্ন।

নাজনীন আহমেদ বলেন, “শিক্ষার মান এখনো অনেক পিছিয়ে তা নিয়ে প্রশ্নের সুযোগ নেই। আমাদের উপকরণগত মান উন্নয়ন হলেও সিস্টেম ও মানগত দিক থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। শিক্ষকদের আন্তরিকতারও অভাব আছে। প্রাইভেট টিউশনিই শিক্ষকদের মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিস্থিতি এমন যে, কোনো অভিভাবক কত বেশি টাকা ব্যয় করতে পারছেন তার ওপর নির্ভর করছে তার সন্তান কত ভালো ফল করবে।”

শাহরিয়ার আলম বলেন, “শিক্ষার বর্তমান মান ভবিষ্যতের বাংলাদেশের জন্য যথেষ্ট নয়। শিক্ষা খাতে গুণগত মানকে জবাবদিহির মুখোমুখি না আনলে কিন্তু কখনোই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে না।”

অনুষ্ঠানে আরেক দর্শক প্রশ্ন করেন- নানা ক্ষেত্রে ইনোভেশন বা উদ্ভাবনে যেসব দেশ এগিয়ে, আধুনিক বিশ্বে তারাই উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে তরুণরা উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে সরকারের কতটুকু সহযোগিতা পাচ্ছে?

উত্তরে শাহানা সিদ্দিকী বলেন, “ইনোভেশনের ইতিহাস কিন্তু পুরোনো। আর তাছাড়া টেকনোলজি সিস্টেম সম্পর্কে নিজেকে তৈরি করাটাও জরুরি।”

আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, “বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপচয়, দুর্নীতি বন্ধ করে প্রযুক্তি খাতে আরো বেশি প্রণোদনা দেয়া দরকার সরকারের। তাহলে উদ্ভাবনী কাজে অনেকে আগ্রহী হবেন।”

শাহরিয়ার আলম বলেন, “উদ্ভাবনী কাজে উৎসাহ দিতে প্রযুক্তির সুবিধাসহ সরকার নানা উদ্যোগ নিচ্ছে।”

বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন ও বিবিসি বাংলার যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠানটি প্রযোজনা করেন ওয়ালিউর রহমান মিরাজ এবং উপস্থাপনা করেন আকবর হোসেন।

Featured বাংলাদেশ