জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে যোগ দিতে আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্ক যাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, নানা কারণে আসন্ন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ অধিবেশনের প্রধান আলোচ্য বিষয় হবে- সহিংস চরমপন্থার উত্থান, শরণার্থী সংকট, জাতিসংঘের সংস্কার এবং জলবায়ূ পরিবর্তন। পাশাপাশি এ অধিবেশনে সহ¯্রাব্ধ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং জাতিসংঘ সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা চূড়ান্ত করা হবে।
মাহমুদ আলী বলেন, আগামি ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এ অধিবেশনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘৭০ বছরে জাতিসংঘ কর্মপরিকল্পনার লক্ষ্যে নতুন অঙ্গীকার।’ তিনি বলেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনের যোগদানের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত নিউইয়র্ক সফরে থাকবেন। তিনি ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন এবং ১ অক্টোবর পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করবেন। তিনি বলেন, নিউইয়র্ক সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুবই ব্যস্ত সময় কাটাবেন। তিনি শীর্ষ সম্মেলনের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে অংশ নেবেন এবং কো-চেয়ারম্যান থাকবেন।
এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানিয়ে মাহমুদ আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও উপদেষ্টা সমন্বয়ে গঠিত ৬০ সদস্যের সরকারি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন। একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলও এ সফরে তাঁর সঙ্গে থাকবেন। এবারের অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ সম্মান ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত করা হবে। জলবায়ূ পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর সক্রিয় ভূমিকা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে এ বিশেষ পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
টেকসই উন্নয়ন সম্পর্কিত শীর্ষ সম্মেলনের সমাপনী দিনে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হাতে এ পুরস্কার তুলে দেয়া হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এর পাশাপাশি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নির্মাণে যুগান্তকারী উদ্যোগের জন্য অন্য একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) পুরস্কারেও ভূষিত করা হবে। তিনি বলেন, এবারের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে সক্রিয়ভাবে অংশ নেবেন। ২৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী ইউএন সামিট ফর দ্য এডাপসান অব দ্য পোস্ট- ২০১৫ ডেভেলপমেন্ট এজেন্ডা’র প্লেনারি সেশনে ভাষণ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বংলাদেশের অগ্রাধিকারগুলো তুলে ধরবেন এবং এমডিজি অর্জনের সাফল্যের ধারায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অঙ্গীকার ও প্রত্যয়ের কথা পুনর্ব্যক্ত করবেন। মাহমুদ আলী বলেন, রূপকল্প ২০২১-এর আলোকে সপ্তম পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে সরকার ইতোমধ্যে যে কার্যক্রম শুরু করেছে সে বিষয়েও তিনি আলোকপাত করবেন এবং এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশের প্রত্যাশাগুলো তুলে ধরবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২৬ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রীর সাথে ‘ফস্টারিং সাসটেইনেবল ইকোনোমিক গ্রোথ, ট্রান্সফরমেশন এন্ড প্রমোটিং সাসটেইনেবল কনজামসন এন্ড প্রডাকশন’ শীর্ষক সংলাপে যৌথ সভাপতিত্ব করবেন। এশিয়া-প্রশান্ত অঞ্চলের অন্যতম সরকার প্রধান হিসেবে তাকে এ বৈঠকে যৌথ-সভাপতিত্ব করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ৩০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক অধিবেশনে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য রাখবেন। প্রতিবারের মতো এবারো প্রধানমন্ত্রী বাংলায় বক্তৃতা দেবেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়ন, অভিবাসী শ্রমিকের অধিকার আদায়, দারিদ্র্য দূরীকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা ও সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্যের কথা তুলে ধরবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। একই সাথে তিনি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কিছু সুনির্দিষ্ট বক্তব্য উপস্থাপন করবেন।