ইভিএম নিয়ে নতুন ইসির শম্বুকগতি

ইভিএম নিয়ে নতুন ইসির শম্বুকগতি

ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মাত্র এক মাস বাকি থাকতে সংশয় তৈরি হয়েছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে।

নির্বাচন কমিশন দুই কর্পোরেশনে সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের এক হাজার ভোট কক্ষে ইভিএম ব্যবহারের কথা বলে আসলেও ব্যাটারির দাম বেড়ে যাওয়ায় এখনো ইভিএম তৈরির কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি।

ইভিএম নিয়ে কমিশনকে সহযোগিতা দিয়ে আসা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) আইআইসিটির পরিচালক অধ্যাপক লুৎফুল কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নতুন নির্বাচন কমিশন আসার পর দেড় মাস সময় পার হয়েছে। ডিসিসি নির্বাচনও ঘনিয়ে আসছে। চীন থেকে ব্যাটারি আনতে আমাদের সময় লাগবে। ইভিএমের বিষয়টি মনে হয় ভালোভাবে খেয়াল করছেন না তারা।”

ঢাকার এক হাজার ভোট কক্ষে সুষ্ঠুভাবে কাজ চালাতে অন্তত ১১ শ’ যন্ত্র তৈরি রাখা দরকার বলে মনে করে ইন্সটিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন- আইআইসিটি। গত কয়েকটি স্থানীয় নির্বাচনে আইআইসিটির তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে তৈরি ইভিএমই ব্যবহার করা হয়েছে।

লুৎফুল কবীর জানান, ইভিএমের ব্যাটারির দাম আগের তুলনায় প্রায় দুইশ’ টাকা করে বেড়েছে। সব মিলিয়ে ডিসিসি নির্বাচনের জন্য ইভিএম তৈরিতে প্রায় ১৪ লাখ টাকার বাজেট দিয়েছে আইআইসিটি।

কিন্তু স¤প্রতি কমিশনের সভায় একজন সদস্য ‘এতো দামে’ ব্যাটারি কেনার বিরোধিতা করেন বলে জানান একজন নির্বাচন কমিশনার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কমিশনার বলেন, “দাম নিয়ে আপত্তি ওঠায় ইভিএমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে একটু বিলম্ব হচ্ছে।”

এই প্রেক্ষাপটে ডিসিসিতে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়টি ধীরে ধীরে জটিল হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন লুৎফুল কবীর।

“নতুন ইসিকে ইভিএম দেখতে হবে, মাঠে দেখাতে হবে। পরীক্ষা করতে হবে। এগুলো ঠিকমতো গুছাতে হবে। একদিকে সময় কমছে, অন্যদিকে সিদ্ধান্ত পেতে বিলম্ব হচ্ছে। একটু তো ক্রিটিক্যাল হয়ে যাচ্ছেই।”

অবশ্য সিদ্ধান্ত নিতে এই দেরির কারণে ঢাকায় ইভিএম ব্যবহারে কোনো সমস্যা হবে বলে কমিশন মনে করছে না।

নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলছেন, অন্য স্থানীয় নির্বাচনগুলোর ধারাহিকতায় ডিসিসিতেও এক দশমাংশ ভোটকক্ষে ইভিএম ব্যবহার করতে চান তারা।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “প্রযুক্তিতে এগিয়ে যেতেই হবে। নতুন আসায় আমরা একটু সময় নিয়েছি। তবে শিগগিরই কার্যাদেশ দেওয়া হবে।”

২৯ মের মধ্যে ডিসিসির দুই ভাগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এপ্রিলের মাঝামাঝি তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে ইসির। ৩৮ লাখ ৫৪ হাজারের বেশি ভোটারের এই এলাকায় প্রায় দুই হাজার ভোট কেন্দ্রে ১০ হাজারেরও বেশি ভোট কক্ষ থাকবে।

বিগত নির্বাচন কমিশন চট্টগ্রামে একটি ওয়ার্ডে, নারায়ণগঞ্জে এক তৃতীয়াংশ এলাকায়, কুমিল্লায় পুরো সিটি কর্পোরেশনে এবং নরসিংদী পৌর উপ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে সাফল্য পেয়েছে।।

বকেয়া ৫৫ লাখ টাকা

গত তিনটি স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের যান্ত্রিক খরচ বাবদ প্রায় ৫৫ লাখ টাকা এখনো ছাড় দেয়নি ইসি। বিগত নির্বাচন কমিশনের সময় এ অর্থ পায়নি আইআইসিটি।

এ কারণে স¤প্রতি এ অর্থ পরিশোধের জন্য নতুন ইসিকে অনুরোধ জানানো হয়েছে আইআইসিটির পক্ষ থেকে।

লুৎফুল কবীর বলেন, “আমরা সব সময় তাগিদ দিচ্ছি। ইসি থেকে বলা হয়েছে, অর্থ ছাড়ের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।”

জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিতেও ধীর গতি

জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের জন্য প্রটোটাইপ তৈরির প্রস্তাব নিয়ে ইসি অগ্রসর হলেও শিগগিরই চুক্তি হচ্ছে না বলে একজন নির্বাচন কমিশনার জানান।

বিগত প্রধান নির্বাচন কশিনার (সিইসি) এ টি এম শামসুল হুদার সভাপতিত্বে কমিশনের সভায় ইভিএমের প্রটোটাইপ তৈরির প্রস্তাব অনুমোদিত হয় গত ২২ ডিসেম্বর। এতে বলা হয়, ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারির মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ২০১২ সালের মে মাসের মধ্যে প্রটোটাইপিং-এর কাজ শেষ করতে হবে।

কিন্তু নতুন কমিশন এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না দেওয়ায় ‘আপাতত কোনো অগ্রগতি নেই’ বলে লুৎফুল কবীর জানান।

প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করলেও সরকার তাতে সমর্থন দিয়ে আসছে। গত ১ ফেব্র“য়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে জানান, আগামী সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারে নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহায়তা দেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে ইসির সর্বশেষ অবস্থান জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, প্রতিটি ইভিএমের জন্য ৪০-৪৫ হাজার টাকা করে ধরলে সংসদ নির্বাচনে দুই লাখের বেশি যন্ত্রের জন্য বিশাল অংকের বাজেট দরকার।

“এতো বড় ব্যয়ের সিদ্ধান্ত ইসি এককভাবে নিতে চায় না। একটু সময় নিয়ে ইভিএমের সিদ্ধান্ত নিলেও কোনো অসুবিধা হবে না। তাছাড়া সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের আগে রাজনৈতিক ঐকমত্যও দরকার। ডিসিসি নির্বাচনের পর ইসি এ বিষয়ে ভাববে।”

বাংলাদেশ