হাত দুটো ছড়ানো, সাইডলাইন ধরে দৌড়, গোলের উৎসবে সেই পেটেন্ট স্টাইল। বের্নাবাওয়ে বুধরাতে দর্শকদের মাতিয়ে দেওয়া ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর নতুন নাম এখন ‘দ্য বিস্ট’।
লা লিগায় পাঁচ গোলের রকেটের ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ফের হ্যাটট্রিক। শাখতার দনেস্ককে গুঁড়িয়ে। লিওনেল মেসিকে টপকে গিয়ে। সিআর সেভেনের নতুন নাম এখন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ‘টপ স্কোরার।’
পারতপক্ষে ম্যাচের পর সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলেন। বুধবার ছবিটা অন্য। সাক্ষাৎকার দিলেন। স্বীকার করলেন হ্যাটট্রিক করলেও এই শাখতার সেই শাখতার নয়। মাঠের আগুন ছোটানোর পরক্ষণেই মাঠের বাইরে সমর্থক, সতীর্থ, মিডিয়ার কাছে বরফের মতো শান্ত, নম্র। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর নতুন নাম এখন, ‘ফায়ার অ্যান্ড আইস।’
বের্নাবাওয়ে রিয়াল মাদ্রিদের ৪-০ শাখতারকে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ অভিযান শুরু করার ক’য়েক ঘণ্টায় এমনই কিছু মায়াবী ফ্রেম দেখল বিশ্ব। যে ম্যাচে লিওলেন মেসির ৭৭ গোলের রেকর্ড চুরমার করে রোনাল্ডো ৮০ গোল করে এখন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা। অথচ কিছু দিন আগেই রব উঠেছিল, ‘ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ফুরিয়ে যাচ্ছেন। ফর্ম হারাচ্ছেন।’ মরসুমের প্রথম চারটে ম্যাচে সিআর সেভেন গোলহীন থাকার পর এ কথা বলছিলেন অনেকেই। তাদের ব্যঙ্গাত্মক জবাবও দিয়ে গেলেন রোনাল্ডো, ‘‘আগে আমি খারাপ ছিলাম। কিন্তু এখন ভালো। দুটো ম্যাচে আটটা গোল করলাম যে।’’
সমালোচকদের তোপ দাগার আগুনটা জ্বলে উঠেই নিভে গেল সতীর্থদের প্রসঙ্গ উঠতে। সিআর সেভেন এবার নরম, কমনীয়, ‘‘সতীর্থরা আমার উপর বিশ্বাস রাখে। তাই আমায় বেশি পাস বাড়ায়। সেই পাস থেকেই আমি গোলগুলো করি।’’ দলের কথা বলতেই আবার ফুটে উঠল আত্মবিশ্বাস, ‘‘আমরা ভালো ফর্মে আছি। ডিফেন্স মজবুত। শাখতারও ভালো খেলেছে। বল দখলও ভাল রেখেছিল ওরা। কিন্তু গোলকিপারের ভুলে বেঞ্জিমা প্রথমে গোলের সুযোগটা পেয়ে গিয়েছিল। তার পর ওদের লালকার্ড দেখাটা আমাদের সুবিধে করে দিয়েছে।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘আমরা অনেক সুযোগ তৈরি করতে পেরেছি, দুটো গোল পেনাল্টি থেকে এল, আমি তিনটা গোল পেলাম। তবে এই শাখতার আসল শাখতার নয়। ঘরের মাঠে ওরা অনেক বেশি বিপজ্জনক।’’ কোনো ভণিতা নেই, বাড়িয়ে বলা নেই, নিরপেক্ষ, সৎ বিশ্লেষণ।
আর টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচেই হ্যাটট্রিকের অনুভূতি? ‘‘জানতাম এটা আসবে। কোনও চাপ ছাড়াই। মিথ্যে বলব না, নিজেকে নিয়ে খুব আনন্দ আর গর্ব হচ্ছে, দু’ ম্যাচে আটটা গোল করতে পেরে।’’ তবে দু’একটা ম্যাচে নয়, এই মরসুমে তাঁর লক্ষ্যটা ঠিক কী সেটাই স্পষ্ট করে দেন রিয়াল রকেট, ‘‘আমার টার্গেট গোটা মরসুম ভাল খেলা। টিমকে জেতানোটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, স্প্যানিশ লিগ ট্রফিটা জেতা। আশা করছি আমার গোলগুলো দলকে সাহায্য করবে। আত্মবিশ্বাসটা রয়েছে। এ ভাবেই খেলে যেতে চাই।’’
চ্যাম্পিয়নরা তো এ ভাবেই ভাগ করে নেন কৃতিত্বটা। সতীর্থদের সঙ্গে, সমর্থকদের সঙ্গে। যাঁর কৃতিত্বের লম্বা লিস্টে মেসিকে টপকানোর পাশাপাশি এখন রিয়ালের কিংবদন্তি রাউলের রেকর্ড ভাঙার হাতছানি।
রাফা বেনিতেজের কাছে প্রশ্নটা রাখা হয়েছিল। আপনার কোচিংয়ে সেরা কি রোনাল্ডো? ২৪ ঘণ্টা আগে ঠিক এই প্রশ্নটাই রাখা হয়েছিল বার্সেলোনা কোচ লুইস এনরিকের সামনে। আর এনরিকে বলেছিলেন, মেসি ইতিহাসের সেরা। বেনিতেজ অবশ্য বলেছেন সিআর সেভেন তাঁর ছাত্রদের মধ্যে অন্যতম সেরা। তবে এই মুহূর্তে বিশ্বসেরা ফুটবলার যে রোনাল্ডোই সেটা এক কথায় স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। কে বলবে বেনিতেজ কোচ হয়ে আসার কথা শুনেই সিআর সেভেন নাকি রিয়াল ছাড়ার কথা পর্যন্ত ভেবেছিলেন এক সময়।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর নতুন নাম এখন, ‘অজাতশত্রু’।