ফেসবুককে কেন্দ্র করে চোর ধরা এবং তারপর তাকে নৃশংসভাবে শাস্তি দেবার এক ‘আন্দোলন’ গড়ে উঠেছে পেরুতে। কথিত ‘চোর’দের ধরে তাদের উলঙ্গ করে বেদম মারধর, এমনকি নারীদের নগ্ন করে রাস্তায় ঘোরানোর মতো শাস্তির ভিডিও পোস্ট করা হচ্ছে ফেসবুকের এসব ‘চোর ধরা’ পেজে।
ব্যাপারটার শুরু হুয়ানকায়ো শহরে এক বাড়িতে এক চুরির ঘটনা থেকে। সিসিলিয়া রডরিগেজ নামের এক মহিলা তার প্রতিবেশীর বাড়িতে চুরি করে পালাবার সময় পাড়ার লোকদের নিয়ে চোরকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন, এবং তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। কিন্তু কিছুদিন পর তিনি জানতে পারেন যে সেই চোর ছাড়া পেয়ে গেছে। ‘তার পরই আমরা ঠিক করলাম যে এর পরের বার চোর ধরা পড়লে তাকে আর পুলিশকে খবর দেয়া হবে না, বরং আমরা নিজেরাই চোরকে শাস্তি দেব’ বলছিলেন সিসিলিয়া।
যে কথা সেই কাজ। তার একটি ফেসবুক পেজ খুললেন- যার নাম ‘চাপা তু চোরো’ বা ‘আপনার চোরকে ধরুন’। এতে পোস্ট করা হতো চোরকে ধরে শাস্তি দেবার খবর ও ছবি।
বিস্ময়ের ব্যাপার হলো অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এরকম শতাধিক পেজ খোলা হলো ফেসবুকে- এবং এখনো খোলা হচ্ছে। তবে এদের নামগুলো ভয়াবহ রকমের নিষ্ঠুর।
যেমন একটির নাম ‘ওকে পঙ্গু করে দাও’, ‘ওর হাত কেটে দাও’ বা ‘ওকে খোঁজা করে দাও’। এই চোররা আসলেই অপরাধী নাকি নির্দোষ- তার কোন বিচার না করেই তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উস্কে দিচ্ছে পেজগুলো।
এগুলোতে এমন সব ছবি বা ভিডিও থাকে অত্যন্ত ভয়াবহ। একটিতে দেখা যাচ্ছে, একজন কথিত চোরকে উলঙ্গ করে তাকে চাবুক মারা হচ্ছে। আরেকটি একটি কিশোরকে এমন বেদম পেটানো হচ্ছে, যাতে তার মুখ বিকৃত হয়ে যাচ্ছে।
আরেকটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একজন নারীকে উলঙ্গ করে ফেলা হচ্ছে তার পর তাকে রাস্তায় ঘোরানো হচ্ছে, তার গলায় ঝোলানো হয়েছে ব্যানার- ‘আমি চোর’। কিন্তু এসব ভিডিও নিয়ে পেরুতে কাইকে নাখোশ বলে মনে হচ্ছে না। এর কারণ কি?
সিসিলিয়া নিজেই বলছেন, এর কারণ এ দেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর আন্থা খুবই কম, রাষ্ট্র আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না।
পেরুর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে লুইজ পেরেজ গুয়াদালেপে স্বীকার করেন, তার পুলিশ বাহিনীর ক্ষমতা খুবই সীমিত। তিনি চান, চোর লোকে ধরছে ধরুক কিন্তু তাদের যেন পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়।
কিন্তু ফেসবুকে এসব ‘চোর ধরা’ পেজ আর শাস্তির ভিডিও দেখলে মনে হয় তার কথা কেউ কান দিতে আগ্রহী নয়। সূত্র : বিবিসি বাংলা