চলতি হজ মৌসুমে পবিত্র নগরী মক্কায় কাবাঘরকে ঘিরে থাকা জনাকীর্ণ মসজিদুল হারামে এক দুর্ঘটনায় অন্তত ৮৭ জন নিহত হয়েছেন। এতে ৪০ বাংলাদেশী নাগরিকসহ কমপক্ষে ১৮৪ জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় তীব্র ঝড়ের মধ্যে একটি ক্রেন ছিঁড়ে গেলে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় মক্কা শরিফে প্রচণ্ড বৃষ্টিও হচ্ছিল। সৌদি আরবের সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে দুর্ঘটনার খবর নিশ্চিত করলেও এর কোন কারণ জানানো হয়নি। বিভিন্ন গণমাধ্যমের ছবিতে বিশাল আকৃতির লাল রঙের একটি ক্রেনের অংশ ও মসজিদটির ছাদ ধসে পড়ার দৃশ্য দেখা গেছে। গত কয়েকদিন ধরে মাঝেমধ্যেই মক্কাসহ সৌদি আরবের বিভিন্ন স্থানে শক্তিশালী ঝড় আঘাত হানছে। সঙ্গে ভারি বৃষ্টিপাতও হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, খারাপ আবহাওয়ার কারণেই ক্রেন ছিঁড়ে পড়ার ঘটনাটি ঘটেছে।
দুর্ঘটনার সময় মসজিদে উপস্থিত শমসুদ্দিন আহমেদ নামে এক বাংলাদেশী বলেন, মাগরিবের আগে প্রচণ্ড বালু ঝড় শুরু হয়। এ সময় হঠাৎ ক্রেনটি ভেঙে পড়ে। আমাদের চোখের সামনে অসংখ্য মানুষকে হতাহত হতে দেখেছি। এটিকে একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে বিশাল আকৃতির ক্রেনটি মসজিদের চতুর্থ তলার ছাদে ভেঙে পড়ে। এ সময় মসজিদটি মুসল্লিতে ভর্তি ছিল। ৬টা ৩০ মিনিটে মাগরিবের নামাজের কয়েক মিনিট আগে ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনার পরপরই কয়েক ডজন এম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে ছুটে যায় এবং কর্তৃপক্ষ দ্রুত এলাকাটি ঘিরে ফেলে। ঘটনার আগে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত শুরু হয়। ভারি বৃষ্টিতে রাস্তা তলিয়ে যাচ্ছিল। ওই সময়ই দুর্ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার পর উপস্থিত মুসল্লিদের মধ্যে প্রচণ্ড হুড়োহুড়ি শুরু হয়। অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এদিকে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় কোনো বাংলাদেশী নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে আহতদের মধ্যে অন্তত ৪০ জন বাংলাদেশী রয়েছেন। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি জানান, আহত ৩ জনকে হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়েছে এবং তাদের একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এর মধ্যে এক জনের নাম জানা গেছে; তার নাম চান মিয়া। তবে বিস্তারিত পরিচয় জানাতে পারেননি তিনি।
প্রসঙ্গত পবিত্র কাবা শরিফ ঘিরে বিশ্বের বৃহত্তম এ মসজিদ মুসলমানদের কাছে মহাপবিত্র স্থান। প্রতি বছর ৩০ থেকে ৪০ লাখ লোক এ মসজিদে হজ পালন করতে সমবেত হন, যাদের মধ্যে লাখখানেক বাংলাদেশীও রয়েছেন। পক্ষান্তরে গত বছর থেকে মসজিদুল হারাম ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নকাজ করছে সৌদি সরকার। হাজিদের জায়গা সংকুলানের জন্য এই সম্প্রসারণ কাজ করা হচ্ছে। ছিঁড়ে পড়া ক্রেনটি মসজিদুল হারামের সম্প্রসারণ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছিল।