৯/১১-এর জেরে আর কত রক্ত ঝরবে?

৯/১১-এর জেরে আর কত রক্ত ঝরবে?

৯/১১ সারা বিশ্বকে বদলে দেওয়ার দিনের নাম। ছিনতাই করা যাত্রীবাহী বিমান নিয়ে এ দিনটিতে uiaosdklasdযুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সরাসরি এই অতর্কিত হামলায় পৃথিবীর মহা শক্তিধর বলে পরিচিত এ দেশটির সব অহংকার ধসে পড়ে। নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার নামে একদা পরিচিত বিশ্ব বাণিজ্যকেন্দ্রের ওপর হামলে পড়া বিমানে মাটির সঙ্গে মিশে যায় স্থাপনাটি। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা স্থাপনা পেন্টাগনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আরেকটি ছিনতাই হওয়া যাত্রীবাহী বিমান। খোদ হোয়াইট হাউসের দিকে ধাবিত পৃথক আরেকটি বিমান মাঝপথে ভূপাতিত হয় যাত্রীদের প্রতিরোধের মুখে। বিশ্বের ইতিহাসে এমন সমন্বিত সন্ত্রাসী হামলা এর আগে আর কখনো ঘটেনি।

এ দিনটিতে তিন হাজারের মতো লোকের প্রাণপাত ঘতে। ভয়াল ১১ সেপ্টেম্বরের ১৩টি বছর চলে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে নানা জিজ্ঞাসা ও প্রশ্নের মধ্য দিয়ে ৯/১১-এর ১৪ বছর পূর্তির দিনটিকে স্মরণ করা হচ্ছে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ঘটে যাওয়া ঘটনায় বদলে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর জের ধরে বদলে গেছে বিশ্ব। বদলে গেছে বিশ্বের রাজনীতি। বিশ্ব রাজনীতির নতুন বিভাজন শুরু হয়েছে ৯/১১-এর জের ধরে। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ বলেছিলেন, হয় তুমি আমার সঙ্গে, নয় তুমি আমার বিপক্ষে।

আমেরিকার সমস্ত গোয়েন্দা নজরদারি ফাঁকি দিয়ে কীভাবে ৯/১১-এর হামলার ঘটনা ঘটেছিল, এ নিয়ে বহু জিজ্ঞাসা আজও অনেক মানুষকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। বিশ্বের শক্তিধর বলে পরিচিত আমেরিকার অহংকার চ্যালেঞ্জ করা এ সন্ত্রাসী হামলায় দুই হাজার ৭৯৪ জনের মৃত্যুর ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে নিহত হয়েছেন আমাদের বাংলাদেশের লোকজনও। সরকারি রেকর্ড অনুযায়ী, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলায় নিহত বাংলাদেশিরা হচ্ছেন নুরুল হক মিয়া ও শাকিলা ইয়াসমিন দম্পতি, শাহাজান মিয়া, আবুল কাসেম চৌধুরী, সাদেক আলী, আশফাক আহমেদ, নাভিদ হোসেন, সাব্বির আহমেদ, সালাউদ্দিন চৌধুরী ও ওসমান গনি।

এখনো মনে করা হয়, নিহত ব্যক্তির সংখ্যা আরও বেশি। ভয়াবহ এ হামলার দায় যাদের ওপর বর্তায়, তাদের ধর্মীয় পরিচয় বড় হয়ে ওঠে। আল-কায়েদার মতো জঙ্গি সংগঠনকে এ হামলার জন্য দোষী করা হয়। আফগানিস্তান থেকে পরিচালিত এ হামলার পাল্টা জবাব দিতে যুক্তরাষ্ট্র মাঠে নেমে পড়ে। তালেবান সরকারকে উৎখাত করা হয়। ইরাক-আফগানিস্তানের সরকার উৎখাত করার পর দেশ দুটির কর্তৃত্ব পরোক্ষভাবে যুক্তরাষ্ট্রের দখলে চলে যায়। পর্যায়ক্রমে ইরাকি নেতা সাদ্দাম হোসেন, আল-কায়েদার প্রধান ওসামা বিন লাদেন, লিবিয়ার নেতা মোয়াম্মার গাদ্দাফিসহ আরও কয়েকজন নেতাকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্র-ঘোষিত সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে সারা বিশ্বের বিভক্তি আজ প্রকাশ্য। দেশে দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এখনো বিরাজমান। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার জের ধরে ইরাক-আফগানিস্তানের মাটিতে প্রায় সাত হাজার মার্কিন সৈন্যের প্রাণহানি ঘটেছে। আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়ায় আজও এ ঘটনার জের চলছে। স্থানীয় লাখো মানুষের মৃত্যু এবং স্থানান্তরে পাল্টে গেছে বহু জনারণ্য। মধ্যপ্রাচ্য থেকে, আফ্রিকার দেশগুলো থেকে চলমান শরণার্থীর ঢল আজ ইউরোপের দিকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এমন শরণার্থী-সমস্যা বিশ্বকে আর মোকাবেলা করতে হয়নি। বলা হয়, সবই ঘটছে ২০০১ সালের ভয়াল ১১ সেপ্টেম্বরের জের ধরে।

এই একটি দিনের ঘটনায় আমেরিকাও বদলে গেছে। দেশের নিরাপত্তা নিয়ে আমেরিকাকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে এ দিনের পর থেকে। সব ধর্মের, সব বর্ণের দেশ হিসেবে আমেরিকার যে সমাজ ছিল, তাও বদলে গেছে এ দিনটির পর থেকে। আমেরিকার মুসলমানেরা অভিযোগ করছেন, তাঁদের ওপর অভ্যন্তরীণ নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। দেশের নাগরিকদের ওপর বিভক্তি এনে দিয়েছে ভয়াল ৯/১১। ঘটনার ১৩ বছর পর বিশ্ব থেকে আল-কায়েদার অনুসারীদের নিশ্চিহ্ন করা যায়নি। খোদ স্বদেশেই গড়ে ওঠা জঙ্গিদের নিয়ে উদ্বিগ্ন এখন আমেরিকা।

বিশ্ব বাণিজ্যকেন্দ্রের ধসে পড়া গ্রাউন্ড জিরোতে গড়ে উঠেছে ফ্রিডম টাওয়ার। দালানের উচ্চতার দিক থেকে টুইন টাওয়ারকে ছাড়িয়ে যাওয়া ফ্রিডম টাওয়ারেই সেপ্টেম্বর ১১ মেমোরিয়াল। বেদনা ও বিস্ময়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ এ দিনটিকে স্মরণ করে থাকে। আজও করছে। বিশ্বকে পাল্টে দেওয়া এ দিনটি আসলেই যুক্তরাষ্ট্রের মতো সারা বিশ্বের মানুষের কাছে প্রশ্নটি জাগ্রত হয়, একটি দিনের ভয়াবহ ঘটনা কোথায় নিয়ে যাবে আমাদের? এর জের ধরে আর কত রক্ত ঝরবে? আর কত জনারণ্য পাল্টে যাবে? সন্দেহ, সহিংসতা ও সংঘাত পেরিয়ে শান্তির জন্য আর কতটা পথ পাড়ি দিতে হবে বর্তমান বিশ্বকে?

Featured আন্তর্জাতিক