সীমান্তে প্রতিদিন হাজার হাজার অভিবাসীর চাপে উদ্বিগ্ন হাঙ্গেরি সামরিক মহড়া শুরু করেছে। অভিবাসীর স্রোত ঠেকাতে সার্বিয়ার সাথে সীমান্তে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
সার্বিয়ার সংবাদ মাধ্যমের সূত্রে বলা হচ্ছে, গত ২৪ ঘন্টায় রেকর্ড পাঁচ হাজার আশ্রয়প্রার্থী হাঙ্গেরির সীমান্তে হাজির হয়। তার মধ্যে হাজার তিনেক লোক হাঙ্গেরিতে ঢুকেও পড়েছে।
অন্যদিকে জার্মানি থেকে কিছু বেশ আশ্রয় প্রার্থী সুইডেনে যাওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। ডেনমার্ক পুলিশ তাদের বাধা দিচ্ছে।
মাত্র গত বুধবারেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক লাখ ষাট হাজার শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার কথা ঘোষণা করার পর আজ নতুন করে শরণার্থীদের ঢল নেমেছে ইউরোপের দিকে।
সার্বিয়ান টেলিভিশনের খবর অনুযায়ী গত ২৪ ঘন্টাতেই তাদের সীমান্ত দিয়ে ঢুকেছে পাঁচ হাজার নতুন শরণার্থী। এদিকে হাঙ্গেরির সেনাবাহিনী সীমান্তে শরণার্থীদের ঢল সামলাতে পুলিশকে সহায়তার উদ্দেশ্যে মহড়া দিতে শুরু করেছে।
দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে সার্বিয়া থেকে প্রতিদিন শত শত শরণার্থী হাঙ্গেরিতে ঢুকছে। কিন্তু এদের সামলাতে গিয়ে পুলিশকে এখন হিমসিম খেতে হচ্ছে। হাঙ্গেরিতে আসা শরণার্থীরা সেখান থেকে উত্তরে অস্ট্রিয়া এবং জার্মানিতে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
হাঙ্গেরির দক্ষিণপন্থী সরকার যারা অবৈধভাবে সে দেশে ঢুকছে তাদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য আইনেরও উদ্যোগ নিয়েছে। গ্রীসের লেসবস দ্বীপের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া যে শরণার্থীরা একই পথে জার্মানি বা অন্যান্য দেশে যাওয়ার কথা ভাবছিলেন, এসব খবরে তারা এখন চিন্তায় পড়েছেন।
সিরিয়া থেকে পালিয়ে আসা ওমর বলছিলেন, ‘আমরা শুনেছি হাঙ্গেরি এমাসের ১৫ তারিখের পর সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ করে দেবে। এরপরও যদি কেউ হাঙ্গেরিতে ঢুকে, তাকে জেলে ঢোকানো হবে। এ খবরে আমরা দুশ্চিন্তায় পড়েছি, কারণ আমার ফিরে যাওয়ার কোনও পথ নেই। এখন যদি সামনেও যেতে না পারি, তাহলে জানি না কী হবে!’
এদিকে ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে শরণার্থী সংকটের মোকাবেলা করতে হলে ইউরোপকে অনেক কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হতে হবে।
তুরস্ক সফরে গিয়ে তিনি বলেছেন, এক্ষেত্রে ইউরোপের নেতাদের মৌলিক ইউরোপীয় মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার কথা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।
ডোনাল্ড টাস্ক বলেন, ওই সফর থেকে তিনি ইউরোপীয় নেতাদের জন্য এমন কিছু বার্তা নিয়ে আসবেন, যা তাদের সামনের দিনগুলোতে শরণার্থী সংকটের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে।
তাঁর কথায়, ‘অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত হয়তো নিতে হবে, কিন্তু ইউরোপের ঐক্য এবং সংহতি বজায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
কিন্তু এই ঐক্যের আহ্বান সত্ত্বেও ইউরোপের প্রতিটি দেশ তাদের মত করেই শরণার্থীদের সামলাতে তাদের মত করে পদক্ষেপ নিচ্ছে।
জার্মানি থেকে শরণার্থীরা যেন সুইডেনে যেতে না পারে, সেজেন্য ডেনমার্ক গতকাল তাদের ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল। আজ ট্রেন চলাচল শুরু হলেও সেগুলোতে তল্লাসি চালানো হচ্ছে।
অন্যদিকে জার্মানির ভাইস চ্যান্সেলর জিগমার গ্যাব্রিয়েল বলেছেন, ইইউ মাত্র এক লাখ ৬০ হাজার শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সাগরে এক ফোঁটা পানির সমতুল্য।
সূত্র: বিবিসি বাংলা।