চলতি মাসেই পাইকারি ও জুনের মধ্যে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে চায় সরকার। এরই মধ্যে দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি সমূহের সূত্রে জানা গেছে।
বিদ্যুতের পাইকারি (বাল্ক) দাম ইউনিটপ্রতি ৪১ পয়সা বাড়ানোর প্রস্তাব এরই মধ্যে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) জমা পড়েছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের এ প্রস্তাবের বিষয়ে আগামী ১৯ মার্চ গণশুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
তরল জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে বিদ্যুতের পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের বিদ্যুতের দাম পুনরায় বাড়ানো হচ্ছে। এই মাসে বিদ্যুতের পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ানো ঘোষণা আসতে পারে বলে বিইআরসি সূত্র জানিয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, তরল জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে দাম বাড়ানোর কথা বললেও প্রকৃত অর্থে বেসরকারি পর্যায়ে এই খাতের যে বিনিয়োগ হয়েছে, সেই বিনিয়োগের টাকা পরিশোধ করতেই এই দাম বাড়ানো হচ্ছে।
জানা গেছে, পাইকারি দাম বাড়ানোর নিকট সময়ে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাবনা তৈরি করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে পিডিবি ও পিডিবির নিয়ন্ত্রণাধীন সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোকে গোপন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ইতিমধ্যে কোম্পানিসমুহ প্রস্তাবনা তৈরির কাজ শুরু করেছে, যা আগামী মাসেই জমা দিবে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এর চেয়ারম্যান সৈয়দ ইউসুফ হোসেন বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি সম্পর্কে বাংলানিউজকে বলেন, ‘আগামী ১৯ তারিখে গণশুনানি হবে, আশাকরছি দ্রুত সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানো প্রসঙ্গে বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ালে গ্রাহক পর্যায়েও বাড়নোর যৌক্তিকতা সৃষ্টি হয়।’
এখন পর্যন্ত গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর কোনো প্রস্তাবনা পাননি বলেও জানান তিনি।
পিডিবি দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে বলা হয়েছে, চলতি মাস থেকে সেচ লোডসহ গ্রীস্মকালীন চাহিদার কারণে ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো যথাক্রমে ৩০ শতাংশ এবং ৬০ শতাংশ প্লান্ট প্যাক্টরে চালানোর প্রয়োজন হবে। এতে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় ৪১ পয়সা বৃদ্ধি পাবে।
ফলে বর্তমান উৎপাদন ব্যয় ৫ টাকা ২৯ পয়সার স্থলে ৫ টাকা ৭০ পয়সায় দাড়াবে। এর ফলে গড় মাসিক জ্বালানি ব্যয় প্রায় ১৪১ কোটি টাকা বৃদ্ধি পাবে বলেও প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে।
২০১২ সালের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে বর্ধিত তরল জ্বালানি ব্যয় বাবদ অতিরিক্ত ৫৬৪ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এই কারণে মার্চের শুরু থেকে পাইকারি বিদ্যুতের দাম সব ক্ষেত্রে ইউনিটপ্রতি ৪১ পয়সা করে বাড়ানো প্রয়োজন।
চিঠিতে আরও বলা হয়, বর্তমানে গড় পাইকারি বিদ্যুতের দাম তিন টাকা ৪৭ পয়সা। বর্ধিত জ্বালানি ব্যয়সহ উৎপাদন ব্যয় ৫ টাকা ৭০ পয়সা হচ্ছে। ফলে পাইকারি বিদ্যুতে ইউনিটপ্রতি ঘাটতি হয় এক টাকা ৯৬ পয়সা।
বিইআরসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ১৯ তারিখ গণশুনানির খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পাইকারি বিদ্যুতের দাম ঘোষণা দেওয়া হবে। পাইকারি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পক্ষকালের মধ্যে গ্রাহক পর্যায়েও বাড়ানোর সম্ভবনা রয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বর্তমান মহাজোট সরকার, এর আগে চারবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। জ্বালানি তেল আনতে সরকারি ব্যাংকগুলো এলসি না খোলা, কঠিন শর্তে বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার কারণে এই খাতে বেসরকারি উদ্যোক্তারা নতুন করে বিনিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছেন।
সরকার এখনই বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কাছে থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের বিল পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে। এই কারণেই বিদ্যুতের দাম আবারো বাড়ানোর জন্য সরকাররে নীতি নির্ধারক পর্যায়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানান বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা। এছাড়া বিশ্বব্যাংক এই সেক্টরের ভর্তুকি কমানোর জন্য চাপ দিয়ে আসছে।
২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর বিইআরসি পিডিবির সকল ধরনের পাইকারি বিদ্যুতের দাম দুই ধাপে ৩৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ বাড়ায়। পাইকারি মূল্যের প্রথম ধাপে ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ১৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ এবং দ্বিতীয় ধাপে ২০১২ সালের এক ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪. ৩৭ শতাংশ বাড়ানো হয়।
বর্তমান সরকারের সময়ে প্রথমবার বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি পায় ২০১০ সালের মার্চ মাসে। পরে পুনরায় ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আবারও দাম বাড়ানো হয়। একই বছরের ডিসেম্বর মাসে আরেক দফা বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০১২ সালের এক ফেব্রুয়ারি বিদ্যুতের নতুন মূল্যহার কার্যকর করা হয়।