বসুন্ধরা গ্রুপকে শ্রীলঙ্কায় বিনিয়োগ করার আহ্বান

বসুন্ধরা গ্রুপকে শ্রীলঙ্কায় বিনিয়োগ করার আহ্বান

বসুন্ধরা গ্রুপকে শ্রীলঙ্কায় বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত শ্রীলঙ্কার হাই কমিশনার সারাথ কিউরাগোডা।

শুক্রবার সকালে মেঘনায় বসুন্ধরা পেপার মিল ইউনিট-১ এ শ্রীলঙ্কার গভর্নমেন্ট প্রিন্টিং ডিপার্টমেন্টে কার্বণ লেস পেপার রফতানি কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

শ্রীলংকার গর্ভনিং ডিপার্টমেন্টে মোট ৪৮ মেট্রিক টন কার্বনলেস পেপার রপ্তানি করছে বসুন্ধরা গ্রুপ।

সারাথ কিউরাগোডা বলেন, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি দুটি বন্ধুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নয়নের প্রক্রিয়া।

তিনি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কায় শিক্ষার হার সর্বোচ্চ। এ কারণে সেখানে কাগজের চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। লেখা এবং পড়া উভয় কাজের জন্য আমাদের কাগজের প্রয়োজন হচ্ছে। এক্ষেত্রে বসুন্ধরা গ্রুপ সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে।’

শ্রীলঙ্কার গভর্নমেন্ট প্রিন্টিং ডিপার্টমেন্ট আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছিল। সেখানে বসুন্ধরা গ্রুপ তাদের যোগ্যতায় কাজ পায়।

শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশের বিনিয়োগ কম। বসুন্ধরা গ্রুপের এক্ষেত্রে বড় ধরনের বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশেও শ্রীলঙ্কার বিনিয়োগ অনেক কম বলে জানান সারাথ কিউরাগোডা।

বসুন্ধরা গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শ্রীলঙ্কায় অনেক আগে থেকে বসুন্ধরা কাগজ রফতানি করছে। তবে সেগুলো ছিল বেসরকারি পর্যায়ে। এই প্রথমবারের মতো সরকারি পর্যায়ে কাগজ রফতানি করা হচ্ছে।

তিনি জনিনি, প্রথম রফতানি হয় টিস্যু পেপার। এরপর প্রায় ১০০ মেট্রিক টন কাগজ রফতানি করা হয়। এই প্রথমবারের মতো কার্বন লেস পেপার রফতানি হচ্ছে।

মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা সঠিক উৎপাদন এবং বাণিজ্যে বিশ্বাসী। এ রফতানির ফলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে।’

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ভারতে এ ধরনের শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা ‍পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশকে সে রকম শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার জন্য শ্রীলঙ্কা সরকারের কাছে আহ্বান জানান তিনি।

বসুন্ধরা পেপার মিল ইউনিট ১ এর প্রকল্প প্রধান গোপাল চন্দ্র মজুমদার বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের শ্রীলঙ্কায় এটি প্রথম বা শেষ রফতানি নয়। শ্রীলঙ্কায় কাগজের আরও বড় বাজার তৈরি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

ভারত, নেপাল, দুবাই ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসুন্ধরার কাগজ রফতানি হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনের মিনিস্টার কাউন্সিলর এজি আবেশেহারা, হাইকমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি ডাব্লিউ আই পি কোরে, বসুন্ধরা পেপার মিলের ইউনিট ২ এর প্রকল্প প্রধান এবিএম ইয়াসিন ও বসুন্ধরা পেপার মিলের হেড অব ট্রেডিং খায়রুল খান

‌উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার বসুন্ধরা পেপার মিলের তিনটি ইউনিট ঘুরে দেখেন। কাগজ উৎপাদনের বিভিন্ন প্রক্রিয়া দেখে তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।

উল্লেখ্য, সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব উপায়ে পেপার ও টিস্যু পেপার তৈরি করছে দেশের সর্ববৃহৎ কাগজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা পেপার মিল।

বসুন্ধরা পেপার মিলের তিনটি ইউনিট ঘুরে দেখা গেছে, এসব মিল থেকে যেমন কোনো ধরনের বর্জ্য নিঃসরিত হয় না, তেমনি পরিবেশের জন্যে ক্ষতিকর কোনো ধোঁয়াও বের হয় না। বসুন্ধরা আধুনিক প্রযুক্তি ইফ্যুলেন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ইটিপি) ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশ বান্ধব কাগজ উৎপাদন করে আসছে। এর আগে দেশে এ ধরনের পরিবেশ বান্ধব কাগজের উৎপাদন ছিল না।

এ পদ্ধতিতে বারবার পরিশোধনের মাধ্যমে পানি এবং ধোঁয়ার সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হয়।

বসুন্ধরা পেপার মিলে যে ধোঁয়া বের হয়, তাকে শক্তিতে রুপান্তরিত করা হয়। বায়ু দূষণ যেন না হয়, সে ব্যাপারেও খেয়াল রাখা হয়। এ ছাড়াও বর্জ্য পানি পরিশোধিত করে আবার ব্যবহার করা হয়।

বসুন্ধরা পেপার মিলে তৈরি কাগজের জন্যে কোনো ধরনের দেশীয় পাল্প (মণ্ড) ব্যবহার করা হয় না।

গোপাল চন্দ্র মজুমদার বলেন, বিদেশ থেকে পাল্প নিয়ে আসা হয়। কারণ, দেশে পাল্প তৈরি করতে হলে অনেক বন উজাড় করতে হবে, যাতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।

তিনি জানান, ১ টন কাগজ উৎপাদনের জন্যে প্রায় ১০০ টন পানি লাগে। এ পানি বর্জ্য হয়ে যেন নদী বা জলাশয়ে গিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করতে না পারে, সেজন্য পানিকে পরিশোধন করে ব্যবহার করা হয়। এর ফলে পানির অপচয়ও কমে।

তিনি বলেন, পরিশোধন প্রক্রিয়ায় সব মিলিয়ে প্রায় ৯৯ শতাংশ পানি ব্যাবহার করা হয়।

বর্তমানে দেশের বেশিরভাগ কাগজই পরিশোধন করে তৈরি করা হয়। কিন্ত বসুন্ধরার কাগজ দেশি মণ্ড থেকে নয়, বরং বিদেশ থেকে আমদানি করা মণ্ডে তৈরি করা হয়।

অফসেট এবং রাইটিং পেপার তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় একেবারে ফ্রেস মণ্ড। কোনো ধরনের পুরনো নিউজপ্রিন্ট বা ময়লা দেওয়া হয় না। এ কারণে বসুন্ধরার পেপার দেখতে এতো শুভ্র।

গোপাল চন্দ্র মজুমদার জানান, বছরে বসুন্ধরার ৩টি মিলে গড় উৎপাদন ৩৬ হাজার টন পেপার।

তিনি বলেন, সর্ববৃহৎ কাগজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের কাগজ আধুনিক মেশিনে তৈরি হচ্ছে সব ধরনের উন্নতমানের কাগজ ও কাগজজাত পণ্য। এসবের মধ্যে রয়েছে ফেসিয়াল টিস্যু, পকেট টিস্যু, টয়লেট টিস্যু, ন্যাপকিন পেপার, কিচেন টাওয়েল, ক্লিনিক্যাল বেডশিট, হোয়াইট প্রিন্টিং ও রাইটিং পেপার, লাইনার ও মিডিয়া পেপার, স্যানিটারি ন্যাপকিন, বিড়ি ও সিগারেট পেপার, এমজি পোস্টার পেপার, অফসেট পেপার, নিউজপ্রিন্ট পেপার, এ-ফোর পেপার, স্টিফেনার, অ্যালু-ফয়েল পেপার, কার্বনলেস পেপার, আর্ট পেপার, কোটেড ও আনকোটেড বোর্ডসহ অনেক ধরনের কাগজ।

ইউনিট-২ এর মিল-২ এ উৎপাদন করা হয় লাইনার এবং প্যাকেজিং পেপার। এসব মিলিয়ে দিনে গড়ে ৭০ থেকে ১০০ টন উৎপাদন হয়। এখানের কোনো ধরনের বায়ু দূষণ হয় না। কারণ ধোঁয়াকে পরিশোধন করে শক্তিতে রুপান্তর করা হয়। এছাড়াও পানির পিএইচ এর ব্যাপারেও সতর্ক থাকা হয়।

শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ এবং সর্বাধুনিক টিস্যু পেপার মিলও বসুন্ধরা পেপার মিল-৩।

বর্তমানে ৫টি মেশিনে প্রায় ২০০ টন কাগজ উৎপাদন করে ইউনিট-৩। এর মধ্যে ১০০ টন টিস্যু। বাকি ১০০ টন অন্যান্য।

তিনি আরো জানান, সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, মানুষের হাতের স্পর্শ ছাড়াই তৈরি হয় বসুন্ধরা টিস্যু। সম্পূর্ণ কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে উৎপাদন করা হয়।

মাসে ৩ হাজার টন টিস্যু তৈরি করার ক্যাপাসিটি আছে বসুন্ধরা গ্রুপের। কিন্তু বাংলাদেশে চাহিদা রয়েছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টনের। ইতিমধ্যে দেশের বাইরেও রফতানি হচ্ছে এ টিস্যু।

বসুন্ধরা টিস্যু মিল মূলত ২ ধরনের টিস্যু উৎপাদন করে। একটি হচ্ছে টয়লেট টিস্যু, আরেকটি ফেসিয়াল টিস্যু। ফেসিয়াল টিস্যু তৈরিতে কোনো ধরনের পরিশোধন করা হয় না বলেও জানান তিনি।

কারণ, এটি পরিচ্ছন্ন এবং স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তৈরির ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এটি অনেক নরম এবং আরামদায়ক।

বসুন্ধরা গ্রুপ শিল্পোদ্যোগের সময় সব সময়ই পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি খেয়াল রাখে বলেও জানান গোপাল চন্দ্র মজুমদার।

অর্থ বাণিজ্য