টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কারণে এ খাতের বিদেশি বিনিয়োগ পরিস্থিতি নষ্ট হয়েছে। এমন অভিযোগ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে এসব অভিযোগ করেন কমিটির সভাপতিসহ একাধিক সংসদ সদস্য। মন্ত্রণালয়ের সচিবও এ অভিযোগ করেন।
কমিটি আরো মনে করে, বিটিআরসি চারটি মোবাইল ফোন অপারেটরের লাইসেন্স নবায়নের কাজ দুই বছরেও শেষ করতে পারেনি। ফলে তারা বিনিয়োগ বন্ধ রেখেছে। বিটিআরসির কারণেই অপারেটররা আদালতে যেতেও বাধ্য হয়েছে।
এর ফলে অপারেটরদের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই কমে গেছে বলেও অভিযোগ করেছে সংসদীয় কমিটি।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীনফোন, বাংলালিংক, রবি এবং সিটিসেলের দ্বিতীয় প্রজন্মের (টু জি) লাইসেন্স নবায়ণের কার্যক্রম সংক্রান্ত আলোচনায় এসব বক্তব্য উঠে আসে।
সূত্র জানায়, ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) জিয়া আহমেদ বৈঠকে বলেন, ‘মোবাইল ফোন অপারেটররা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো আচরণ করছে। তারা লাভ নিয়ে যাচ্ছে আবার স্থানীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কাজ চালাচ্ছে।’
এর প্রেক্ষিতে টেলিযোগাযোগ সচিব সুনীল কান্তি বোস বলেন, ‘এটি দেখার দায়িত্ব আপনার বা আমার নয়। এটি দেখার জন্যে সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় আছে; বাংলাদেশ ব্যাংক আছে। তাছাড়া অপারেটররা হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে, লাভ তো তারা নিতেই পারে। এ বিষয়ে সরকারের নীতিমালা আছে। অহেতুক অপারেটরদের সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি না করে বরং খাতকে বিনিয়োগ বান্ধব করা প্রয়োজন।’
এ পর্যায়ে কথা টেনে নেন কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, ‘বিটিআরসি একাই বিনিয়োগ পরিস্থিতি নষ্ট করেছে। তাদের কারণে গত তিন বছরে আর কোনো বিনিয়োগ আসেনি।’
বিটিআরসি চেয়ারম্যান ব্যাখ্য দেওয়ার চেষ্টা করলে ইনু বলেন, ‘এমন কিছু কর্মকর্তার কারণেই পদ্মা সেতুর কাজ পিছিয়ে গেছে। অনেক বিনিয়োগও আটকে গেছে।’
সুনীল কান্তি বোস আরো বলেন, “বিটিআরসি’র আচরণ এতোটাই ঔদ্ধত্যপূর্ণ যে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ তারা আমলে নেয় না। বরং পাল্টা আরো একটি চিঠি পাঠিয়ে দেয়। টাকা আদায়ের নামে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে যে অপারেটররা কোর্টে যেতে বাধ্য হয়েছে। ফলে অপারেটররা এখন সরকারের গ্রিপের বাইরে চলে গেছে।’
বৈঠক শেষে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে হাসানুল হক ইনু সাংবাদিকদের বলেন, ‘দ্বিতীয় প্রজন্মের লাইসেন্স নবায়নের সমস্যা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দ্রুত লাইসেন্স দিয়ে বিনিয়োগ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’
অন্যদিকে বৈঠক শেষে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যানও মোবাইল ফোন অপারেটরদের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে তুলনা করার কথা স্বীকার করেন।
কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু’র সভাপতিত্বের বৈঠকে কমিটির সদস্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজি উদ্দিন আহমেদ, নজরুল ইসলাম বাবু, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং মোয়াজ্জেম হোসেন রতন অংশ নেন।