‘১ম শ্রেণিতে ভর্তি হতে পরীক্ষা কেনো?’

‘১ম শ্রেণিতে ভর্তি হতে পরীক্ষা কেনো?’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন রেখে বলেন, আমার বোধগম্য হচ্ছে না, ১ম শ্রেণিতে ভর্তি হতে শিশুকে কেনো পরীক্ষা দিতে হবে। তিনি বলেন, ক্লাস ওয়ানে ছাপানো প্রশ্নপত্র দিয়ে পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হবেopadasd' কেন? যখনই একটা শিশুর ভর্তির বয়স হবে, তখনই তাকে ভর্তি নিতে হবে। শিক্ষা তার মৌলিক অধিকারগুলোর একটি। নির্দিষ্ট বয়স হয়ে গেলে শিশুরা স্কুলে ভর্তি হয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। তবে তাদের ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার যৌক্তিকতা নেই।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসের উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন তিনি। দিবসটি পালনের ৫০তম বর্ষপূর্তিতে এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘সাক্ষরতা আর দক্ষতা, টেকসই সমাজের মূলকথা’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুকে যদি লেখাপড়া শিখেই স্কুলে ভর্তি হতে হয় তাহলে স্কুল কি পড়াবে। দেশকে নিরক্ষরতামুক্ত ও ১৬ কোটি মানুষকে মানবসম্পদে রূপান্তরের মাধ্যমে মানবপুঁজি হিসেবে গড়ে তোলতে হবে। তিনি সংশ্লিষ্টদের বলেন, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন-২০১৪ এর আলোকে যথাযথ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করুন, ব্যাপক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করুন। আপনাদের সকল কাজে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সমর্থন ও সহযোগিতার দ্বার অবারিত থাকবে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে আরও বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত, সুখী-সমৃদ্ধ দেশ, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসাবে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির নিজস্ব বর্ণমালায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন এবং সংশ্লিষ্ট ভাষা জ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য ১ হাজার কোটি টাকার শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছি। নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে সাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন, দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে ৪৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ সাক্ষরতা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আমরা শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা শিক্ষা ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছি। প্রতিবন্ধীদের সক্ষমতা বিকাশে প্রতিবন্ধী স্কুল করেছি। পরীক্ষার ক্ষেত্রে তাদের আধা ঘন্টা সময় বাড়িয়ে দিয়েছি। তিনি বলেন, অনুন্নত জনপদ এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অধ্যূষিত ৫২টি জেলার ১৪৮টি উপজেলায় আমরা ১ হাজার ১৪০ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ২১ হাজার ৬২৩টি ‘আনন্দ স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেছি। ফলে হতদরিদ্র ও ঝরেপড়ার শঙ্কাগ্রস্ত শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা গড়ার। জাতির পিতা বিশ্বাস করতেন, একটি শিক্ষিত প্রজন্ম ছাড়া সোনার বাংলা গড়া সম্ভব নয়। তাই জাতির পিতা ১৯৭২ সালে কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তিনি ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ এবং ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭২৪ জন শিক্ষকের পদ সরকারিকরণ করেন। তিনি বলেন, শিক্ষা আইন-২০১৪ এর আলোকে যথাযথ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করুন, ব্যাপক কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও আপনাদের সব কাজে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবার জন্য শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৫ সালে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার ঘোষণা রাখা হয়। ২০১১ সালের মধ্যে বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী শতভাগ শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তি আমরা নিশ্চিত করেছি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে ৩২ কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯২৩টি নতুন পাঠ্যবই বিতরণ করেছি। পাশাপাশি প্রাথমিক পর্যায়ে ছাত্রছাত্রীদের ঝরেপড়া রোধে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। মিড-ডে মিল চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, উপবৃত্তির সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়িয়ে আমরা ৭৮ লাখ ১৭ হাজার ৯৭৭ জনে উন্নীত করেছি। ৯৬টি দারিদ্র্যপীড়িত উপজেলার ২৯ লাখ শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুষ্টিমান সম্পন্ন খাদ্য বিতরণ করা হচ্ছে।

Featured অন্যান্য