ইউরোপের পথে পথে সিরীয় শরণার্থী ঢলের ছবি দেখে অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে আরব দেশগুলো এদের জন্য কী করছে? বিশেষভাবে উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিল বা জিসিসিভুক্ত দেশ সৌদি আরব, বাহরাইন, কুয়েত, কাতার, ওমান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত– তাদের দরজা এসব শরণার্থীর জন্য বন্ধ রেখেছে বলে অনেকেই এখন ক্ষুব্ধ।
যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তা গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস’র মাইকেল স্টিভেন্স এক নিবন্ধে লিখছেন, তবে এত সমালোচনার পরও জিসিসি দেশগুলো সিরিয়ার শরণার্থীদের জন্য কিছুই করেনি এটা বলা যায় না।
ব্যক্তি পর্যায়ে এরা অনেক কিছুই করছেন। যেমন, কাতার পেট্রোলিয়াম’র কর্মচারীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে তাদের বেতন থেকে প্রতি মাসে তারা কিছু অর্থ সিরীয় শরণার্থীদের জন্য দান করবেন।
দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে উপসাগরীয় দেশগুলো এ পর্যন্ত মোট ৯০ কোটি ডলার দিয়েছে। কিন্তু খাদ্য বা ওষুধপত্রের মত সাহায্যের বাইরে শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার প্রশ্নে আরব দেশগুলো বেশ নীরব। এর পেছনে কারণ কী?
উপসাগরীয় দেশগুলো সিরিয়দের ঢুকতে দিয়েছে মূলত অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে। সৌদি আরব বলছে ২০১১ সাল থেকে তারা মোট ৫,০০,০০০ সিরিয় নাগরিককে চাকরি দিয়েছে। কিন্তু দলে দলে শরণার্থী এসে হাজির হলে তারা কী করবে? উপসগারীয় দেশগুলিতে এ সম্পর্কে কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। এর পেছনে একটা ব্যাখ্যা সম্ভবত হতে পারে এই যে এসব দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা হারানোর প্রশ্নে একটা গভীর শঙ্কা কাজ করে।
২০১২ সালে সিরিয়ার লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে দিয়ে এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে সুন্নি-প্রধান উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে ইরান-পন্থী সিরীয় গোষ্ঠীগুলোর একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।
বিশেষভাবে সৌদি আরব, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমীরাতের আশঙ্কা প্রেসিডেন্ট আসাদের অনুগত দলগুলো উপসাগরীয় দেশগুলোতে ঢুকে পড়ে গোলযোগ তৈরি করতে পারে।
হাজার হাজার সিরীয় শরণার্থীকে দেশে ঢুকতে দিলে উপসাগরীয় দেশগুলোর জনসংখ্যার ভারসাম্য বিনষ্ট হতে পারে বলে একটা আশঙ্কা রয়েছে। ইইই এবং কাতারের নাগরিকদের মোট সংখ্যা এই দুটি দেশে যত বাসিন্দা রয়েছেন তার মাত্র ১০%। বাদবাকি সবাই বিদেশি।
পূর্ণকালীন চাকরির অনুমতি থাকলেই কেবলমাত্র বিদেশিদের এসব দেশে ঢুকতে দেয়া হয়। আর এই পদ্ধতির মাধ্যমেই উপসাগরীয় দেশগুলো নিজেদের নাগরিকদের প্রাধ্যাণ্য বজায় রাখে। তা না হলে প্রতিবেশী আরব দেশ কিংবা দক্ষিণ এশীয় শ্রমিকরা এসে তাদের ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।
কাজের বৈধ অনুমতি ছাড়া, কিংবা নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই, হাজার হাজার বিদেশি চলে আসছে, এই ভাবনাটাই উপসাগরীয় দেশগুলোর জন্য চরম অস্বস্তির ব্যাপার।
সিরিয়ান শরণার্থীরা উপসাগরীয় দেশগুলোর সামাজিক গঠনের প্রতি যে হুমকি হিসেবে দেখা দিতে পারেন, তার মোকাবেলা করার মত কোন পরিকল্পনা এই দেশগুলোর নেই। আর পশ্চিমা বিশ্বসহ অন্য কোন দেশ এই শঙ্কা দূরে করতে পারবে এমন সম্ভাবনাও কম।
উপসাগরীয় দেশের ক্ষমতাসীন রাজপরিবারগুলোর ওপর জনমতের প্রভাব যথেষ্ট সীমিত। ফলে সে ধরনের কোন চাপও যে খুব একটা কাজ করবে এমন সম্ভাবনাও কম। সূত্র : বিবিসি বাংলা