২২ গজের ক্রিকেটে অনেকবারই বিশ্বের মানচিত্রে ইতিহাসের ধারক হয়েছে বাংলাদেশ। আরও একবার এদেশের ক্রিকেট চেতনা ঐতিহাসিক গৌরবের অধিকারী হতে যাচ্ছে বুধবার। ‘আমরাও পারি’ নামক জাগরণী স্লোগান নিয়ে সমাজের অবহেলিত, বঞ্চিত শারীরিক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে ঢাকায় আন্তর্জাতিক টি-২০ টুর্নামেন্ট শুরু হচ্ছে এদিন। সারা বিশ্বে শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারদের নিয়ে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হচ্ছে এটিই প্রথমবার। ক্রিকেটের মূলধারার বাইরে আয়োজিত টুর্নামেন্ট দিয়ে নতুন ইতিহাসই গড়ছে বাংলাদেশ।
অনন্য যৌথ এই উদ্যোগে অংশীদার থাকছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, বিসিবি ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস (আইসিআরসি), বিকেএসপি। পাঁচ জাতির এই টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে ইংল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও স্বাগতিক বাংলাদেশ। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বুধবার সকালে টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ লড়বে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
শারীরিকভাবে সক্ষম মানুষরাই সাধারণত ক্রিকেট খেলাটা খেলে থাকেন। তবে শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষরাও সবরকম সীমাবদ্ধতাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে ক্রিকেটের গন্ডিতে শামিল হতে পারেন। প্রচলিত সামাজিক কুসংস্কার, বৈষম্যের বেড়াজাল ভেঙে অফুরান প্রাণশক্তির প্রদর্শনী দিয়ে ব্যাট-বলের লড়াইয়ে মেতে উঠতে পারেন প্রতিবন্ধীরা। মিরপুর স্টেডিয়ামে কাল সেই চেষ্টারই বাস্তব সুনিপুণ মঞ্চায়ন হবে। তারাও হতে পারেন দেশের প্রতিনিধি। আন্তর্জাতিক বিশ্বে দেশের পতাকাকে গৌরাবান্বিত করতে পারেন শারীরিক প্রতিবন্ধীরা।
শারীরিক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে বিরাজমান সব ধারণাকে এক ফুৎকারে উড়িয়ে দিতেই আইসিআরসি টি-২০ টুর্নামেন্ট মাঠে গড়াচ্ছে। মঙ্গলবার মিরপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিসিবির সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলও (আইসিসি) টুর্নামেন্টের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে। টুর্নামেন্ট চলাকালীন আইসিসির ডেভলপমেন্ট অফিসার বাংলাদেশ সফর করবেন। বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুলেরই এসময় আইসিসির প্রতিনিধি হয়ে ঢাকায় থাকার কথা। কাল প্রথম ম্যাচটা মিরপুরে হলেও ফাইনালসহ ৩-১০ সেপ্টেম্বর টুর্নামেন্টের বাকি সব ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে বিকেএসপিতে।
টুর্নামেন্টের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “খুব ভালো লাগছে এখানে যুক্ত হতে পেরে। আমাকে রাখার জন্য বিসিবিসহ সবাইকে ধন্যবাদ। আমাদের প্র্যাকটিস চলছে তারপরও চেষ্টা করবো টুর্নামেন্টের খেলা দেখার। তাদের সমর্থন প্রয়োজন। শুধু বাংলাদেশ নয় সারা পৃথিবীতেই প্রতিবন্ধীদের জীবনকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে এই টুর্নামেন্ট। বাংলাদেশসহ অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে শুভকামনা জানাচ্ছি। এটা দেখে কিছুটা হলেও শারীরিক প্রতিবন্ধীরা অনুপ্রাণিত হবে।”
এদিন সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আইসিআরসির হেড অব ডেলিগেশন ক্রিস্টিন চিপোলা ও ফিজিক্যাল রিহ্যাবিলিটেশন প্রজেক্ট ম্যানেজার গার্ড ভ্যান ডে ভ্যালডে। সংবাদ সম্মেলনে টুর্নামেন্টের ট্রফি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী বাংলাদেশ দলের জার্সি উন্মোচন করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে প্রতিবন্ধীদের ক্রিকেট নিয়ে কাজ শুরু করে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড। পরে ২০১৩ সালে ঢাকায় আইসিআরসি প্রথম প্রয়াস চালায়। সে বছর মার্চে ট্যালেন্ট হান্ট কার্যক্রমের পর একটি তিন দিনের ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৪ সালের নভেম্বরে বিসিবি, বিকেএসপি, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় যুক্ত হয় এই কার্যক্রমের সঙ্গে। সবার মিলিত চেষ্টার প্রতিফলন কাল শুরু হতে চলা মাইলফলক শারীরিক প্রতিবন্ধীদের আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট।