সমুদ্রসীমা বিজয়ে সংসদে ধন্যবাদ প্রস্তাব দাবি

সমুদ্রসীমা বিজয়ে সংসদে ধন্যবাদ প্রস্তাব দাবি

মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে আন্তর্জাতিক রায়কে সাধুবাদ জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের সদস্যরা। একইসঙ্গে ওই সফলতার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে সংসদে আনুষ্ঠানিকভাবে ধন্যবাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফজলুল আজিম ও জাসদের মইন উদ্দিন খান বাদল পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে এ নিয়ে বক্তব্য রাখেন। এ সময় এমপিরা টেবিল চাপড়ে তাদের ওই বক্তব্যে সমর্থন দেন। এ সময় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী।

উল্লেখ্য, গত বুধবার সমুদ্র আইনবিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের (ইটলস) সভাপতি জোসে লুই জেসাস ওই রায় পড়ে শোনান। এর ফলে উপকূল থেকে বঙ্গোপসাগরের ২শ’ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে অধিকার প্রতিষ্ঠা হলো বাংলাদেশের।

এ ছাড়া ২শ’ নটিক্যাল মাইল ছাড়িয়ে মহীসোপানের বাইরের সামুদ্রিক সম্পদে বাংলাদেশের নিরঙ্কুশ ও সার্বভৌম অধিকার সুনিশ্চিত হলো। সালিসি আদালতে দুই বছরের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে সমুদ্রসীমা বিরোধের রায়টি দেওয়া হয়।

অধিবেশনের শুরুতে ফজলুল আজিম বলেন, ‘মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের দেশের সমুদ্র সীমান্ত নিয়ে বিরোধ দীর্ঘদিনের। গতকাল জানতে পেরেছি সকল দিক বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক আইনের আলোকে রায় দিয়েছে ইটলস। এটা সুন্দর ও ন্যায্য রায় হয়েছে। ভারতের সঙ্গেও সমুদ্র সীমানা নিয়ে আমাদের বিরোধ রয়েছে। আমরা আশা করি বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী ভারত এ রায়ের আলোকে বাস্তবকে স্বীকার করে আন্তর্জাতিক আইন মেনে সুষ্ঠু সমাধান করবে।’

এরপরই বক্তব্য রাখেন মইনউদ্দিন খান বাদল। তিনি বলেন, ‘সংসদ প্রত্যাশা করে সংসদ সদস্যরা নির্মোহ দৃষ্টিতে কথাবার্তা বলবে। তবে আমরা তা বলি না। গতকাল বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির জন্য একটি শ্রেষ্ঠ দিন ছিল। বর্তমান ভূখণ্ডের দ্বিগুণের ও সমুদ্রসীমা আমাদের সার্বভৌমত্বের অধীনে যোগ হয়েছে। এটা সাদামাটা কোনো ব্যাপার নয়। এটা অনেক বড় সাফল্য।’

তিনি বলেন, ‘১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ সমুদ্রসীমার প্রশ্নে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এরপর অনেক রাজা-মহারাজা ক্ষমতায় ছিলেন। তাদের কেউই এ নিয়ে সামন্যাতম দৃষ্টিপাত করেননি। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ নিয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এরপরই দেশের জন্য এ ধরনের বড় সাফল্য আসলো।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে। অনেকে অনেক কথা বলেন। তবে এ ধরনের সাফল্যের জন্য সংসদের উচিত প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো। আমি সংসদের পক্ষ থেকে তাদেরকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে অভিনন্দন জানাতে চাই।’

জাসদের এই নেতা আরো বলেন, ‘ভবিষ্যতে দেশের অস্তিত্বের জন্য আমাদের ওই সমুদ্রে যেতে হবে। এর আগে ফ্রিগেট ও মিগ-২৯ কেনা নিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বহু সমালোচনা শুনেছি। অনেকে অস্ত্র বিশেষজ্ঞ সেজে মন্তব্য করেছেন, এ দুটি কেনার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশের বারোটা বাজিয়েছেন। কিন্তু এসব ঠিক নয়। মিয়ানমারের সঙ্গে যখন উত্তেজনা দেখা দেয় তখন ফ্রিগেটের উপস্থিতি ও মিগ এর শক্তি ওইদিন দেখানো হয়েছে। এতে মিয়ানমারকে তিনবার ভাবতে হয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে লড়বে কি না।’

তিনি আরো বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আদালতের ওই রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমারকে সুন্দর কথা বলেছেন। তিনি তাদের বলেন, ‘এতে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন হবে।’

এরপর এ নিয়ে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া। তিনি বলেন, আমাদের ধারণা ছিল এ নিয়ে সংসদে একটি ধন্যবাদ প্রস্তাব আনা হবে। যদি ওই রায় আমাদের বিরুদ্ধে যেত তাহলে বিরোধীদলীয় নেত্রী বলতেন, আমরা ওই সমুদ্রসীমা মিয়ানমারের কাছে বিক্রি করে দিয়েছি। অথচ এ ধরনের সাফল্যের পরও বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি আপনার চেয়ার থেকে ওই প্রস্তাব আসা উচিত। সমুদ্রসীমা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর পদক্ষেপের পর শেখ হাসিনা ঝুঁকি নিয়ে এ উদ্যোগ নিয়েছেন।’

এ সময় সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেন, ‘বিজয়ের সংবাদটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে একটু পরে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন।’

বাংলাদেশ