ভূমধ্যসাগরে ২টি নৌকাডুবির ঘটনায় নিহতদের মধ্যে অন্তত ৬ জন বাংলাদেশি রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তিউনিসিয়া থেকে বাংলাদেশের লিবিয়া দূতাবাসের চার্জ দ্যা এফেয়ার্স মোজাম্মেল হক গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এ ৬ জনের মধ্যে অন্তত দুজন শিশুও রয়েছে এবং তাদেরকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ডুবে যাওয়া নৌকা দুটির আরোহীদের মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ, পাকিস্তান, সিরিয়া ও মরক্কোর নাগরিক ছিলেন। ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশী প্রায় ৫০০ মানুষকে নিয়ে ইটালি হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টায় লিবিয়ার জোওয়ারা শহরের কাছে ভূমধ্যসাগরে বৃহস্পতিবার নৌকা দুটো ডুবে যায়।
জানা যায়, যুদ্ধ বিধ্বস্ত লিবিয়ার অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাস কাজ করছে তিউনিসিয়া থেকে। আর যে উপকূলে নৌকা ডুবেছে, সে জোওয়ারায় আছেন বাংলাদেশ দূতাবাসের লেবার কাউন্সেলর আশরাফুল ইসলাম। টেলিফোনে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, একটি নৌকায় মোট ৫৪ জন বাংলাদেশি ছিলেন। লাইফ জ্যাকেট থাকার কারণে তাদের মধ্যে ৪৬ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এ হিসেবে ওই নৌকার আরও দুজন বাংলাদেশি নিখোঁজ রয়েছেন বলে ধারণা করছেন দূতাবাস কর্মকর্তারা। তবে ডুবে যাওয়া অন্য নৌকায় কোনো বাংলাদেশি ছিলেন কি না, সে বিষয়ে কোনো তথ্য তারা পাননি।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, এক নৌকা থেকে উদ্ধার ৩১ বাংলাদেশিকে লিবিয়ার পুলিশ আটক করেছিল। তাদের মধ্যে দুটি পরিবারকে আমরা আইনি সহায়তা দিয়ে ছাড়িয়ে এনেছি। অন্য বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রেও সহায়তা দেওয়া হবে। আর মোজাম্মেল হক জানান, যাদের উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে দুটি পরিবার সিরত থেকে ইটালি যাওয়ার চেষ্টা করছিল। দীর্ঘদিন ত্রিপলিতে থাকলেও যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে তারা সিরতে সরে যেতে বাধ্য হন এবং ঝুঁকির কথা জেনেও সাগর পথে ইউরোপে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, লেবার কাউন্সেলর আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল উদ্ধার বাংলাদেশিদের চিকিৎসা ও মানবিক সহায়তার দিকটি দেখভাল করছেন। এছাড়া সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য দূতাবাস একটি সেল খুলেছে দূতাবাস।
বিবিসির খবরে বলা হয়, প্রথম যে নৌকাটি থেকে সাহায্য চেয়ে সংকেত পাঠানো হয়, তাতে প্রায় ১০০ জন মানুষ ছিলেন। আর ঘণ্টাখানেক পর ডুবে যাওয়া দ্বিতীয় নৌকায় ৪০০র বেশি আরোহী ছিলেন বলে বিবিসির খবরে জানানো হয়। রেড ক্রিসেন্ট কর্মকর্তা ইব্রাহিম আল আতৌশির বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, তারা এ পর্যন্ত ৮২ জনের মৃতদেহ পেয়েছেন। ১৯৮ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে জীবিত অবস্থায়। এখনও ২০০ জনের বেশি নিখোঁজ রয়েছেন।
লিবিয়ার কোস্ট গার্ডের বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়, উদ্ধারকর্মীরা নৌকা দুটি থেকে ১৯৮ জনকে উদ্ধার করতে পারলেও অনেকেই নৌকাডুবির সময় ভেতরে আটকে ছিলেন। উদ্ধার করা অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে ১৪৭ জনকে ত্রিপোলির পশ্চিমে সাবরাথায় একটি ‘ডিটেনশন সেন্টারে’ নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে রয়টার্সের খবরে জানানো হয়েছে।
এর আগে গত শনিবার লিবিয়া উপকূল থেকে ৪ হাজার ৪০০ অবৈধ অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়। আর গত বুধবার লিবিয়া উপকূলে দুর্ঘটনায় পড়া একটি জাহাজের খোলে ৫১ জনের লাশ পাওয়া যায়। ওই জাহাজ থেকে ৪০০র বেশি মানুষকে জীবিত উদ্ধার করে সুইডিশ কোস্ট গার্ড। ওইদিনই ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার করা হয় অন্তত ৩ হাজার মানুষকে।
জাতিসংঘ বলছে, এ সময় অন্তত ১ লাখ অবৈধ অভিবাসী ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইটালিতে পৌঁছাতে পেরেছেন। আরও এক লাখ ৬০ হাজার মানুষ ইউরোপে ঢুকেছে গ্রিস হয়ে। ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপমুখী অভিবাসনের ভয়ঙ্কর চেষ্টায় হাজারো মানুষের মৃত্যুর খবর গত ২ বছরে বহুবার সংবাদের শিরোনাম হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম আট মাসেই সাগরে ডুবে অন্তত ২ হাজার ৪০০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জাতিসংঘের তথ্য।