আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত

আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত

বাংলাদেশের বান্দরবানে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দিনের মতো অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ জানিয়েছেন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে বিতাড়িত করা পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে।okasdasd
বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাতকারে জনাব আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের মাটি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যবহার করতে দেয়া হবেনা এবং এটাই আমাদের অভিযানের লক্ষ্য।
তিনি জানান ঘটনাটি যেখানে ঘটছে সেটি অত্যন্ত দুর্গম এবং সে কারণে ওই এলাকাটির ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এখনো যায়নি। যদিও ইতোমধ্যে ১১০ কিলোমিটারের মতো দুর্গম এলাকায় আমাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে।
আরাকান আর্মি কারা ?
বিবিসি বার্মিজ বিভাগের প্রধান টিন থা সোয়ে বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক বিশ্লেষনে বলেন, ধারণা করা হয় আরাকান আর্মির সদস্য সংখ্যা হবে দু হাজারের মতো। আমরা ঠিক জানি না এদের সংখ্যা আসলেই দুহাজার কিনা। এই আরাকান আর্মি কিন্তু গঠিত হয় কাচিন বিদ্রোহীদের সংগঠন কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স অর্গানাইজেশনের সহযোগিতায়।
তিনি বলেন, আরাকান আর্মি মনে করে আরাকানিরা বঞ্চনার শিকার মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকার আরাকানের উন্নয়নে কিছুই করেনি। বেশিরভাগ আরাকানিও তাই মনে করে। আরাকানের তরুণদের প্রায় নব্বুই শতাংশই এদের সমর্থন করে এমন কথা আমরা শুনেছি। এদের তৎপরতা মিয়ানমার বাংলাদেশ সীমান্তের খুব দুর্গম কিছু এলাকায়। ফলে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে সেরকম কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে না। আর রসদপত্রের জন্য এদের মূলত নির্ভর করতে হয় বাংলাদেশের ওপর।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আরাকান আর্মিকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ সহায়তা করে, এমন কোন কথা আমরা শুনিনি। কিন্তু এমন কথা আমাদের বলা হয়েছে যে, সীমান্তে এরকম একটা গোষ্ঠীর তৎপরতা বাংলাদেশের স্বার্থের পক্ষে যায়। কারণ তারা বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মাঝখানে একটা বাফার, অর্থাৎ একটা ঢাল হিসেবে কাজ করে। এই তত্ত্ব আসলে কতটা সত্য জানি না। তবে মিয়ানমার বাংলাদেশ সীমান্তে দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠী কাজ করে। একটি হচ্ছে এই আরাকান আর্মি, অপরটি হচ্ছে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন বা আরএসও। দুটিই ক্ষুদ্র গোষ্ঠী। কিন্তু যেহেতু তারা সীমান্তেই বেশি তৎপর, কাজেই ধরে নেয়া যায় সেখানে তারা কোন ধরণের সুরক্ষা পায় অথবা বাংলাদেশ তাদের তৎপরতা নিয়ে মোটেই মাথা ঘামাতে চায় না।
তিনি বলেন বাংলাদেশ আর্মি কেন এখন হঠাৎ করে এই গোষ্ঠীর ব্যাপারে বেশি নজর দিচ্ছে তা তারা জানেননা।
তবে তারা যেটা সন্দেহ করেন সেটা হলো মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সরকারের যে যুদ্ধবিরতি চলছে, মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট চাইছেন নভেম্বরের নির্বাচনের আগে সেই যুদ্ধবিরতির চুক্তি চূড়ান্ত করতে। আরাকান আর্মিসহ মোট তিনটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী এই যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে নেই।
তিনি বলেন, এমন একটা জল্পনা আছে যে, এই শান্তি চুক্তির আলোচনার কারণে মিয়ানমারের সরকার হয়তো বাংলাদেশ সরকারের সাহায্য চায় এদের দমনে। সেটাই হয়তো একটা কারণ যে এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশে এখন যৌথ অভিযান চলছে।
রাঙ্গামাটিতে আটক ১
বাংলাদেশের রাঙামাটির একটি উপজেলা থেকে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সদস্য সন্দেহে একজন যুবককে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অং ইউ ইয়াই রাখাইন নামের ওই যুবককে আটক করা হয়।
অতিরিক্ত নাজমুল হাসান জানান, রাজস্থলীর একটি খামার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি তালাবন্ধ কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়। তাকে এখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
তার কাছ থেকে কয়েকটি আরাকান আর্মির পোশাক, পোশাকের কাপড়, তিনটি ল্যাপটপ ও ক্যামেরা পাওয়া গেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
বুধবার বান্দরবানের থানচিতে বিজিবি এবং মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মির মধ্যে গোলাগুলির পর ঐ এলাকায় বিজিবি ও সেনাবাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এরপর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সন্ধানে পার্বত্য জেলাগুলোয় অভিযান শুরু করা হয়।
সূত্র: বিবিসি বাংলা।

Featured বাংলাদেশ