গুজরাটে সেনা মোতায়েন

প্যাটেল সম্প্রদায়ের বিক্ষোভ ও সহিংসতার মুখে ভারতের গুজরাট রাজ্যে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। রাজধানী গান্ধীনগর ও আহমেদাবাদসহ রাজ্যের বড় শহরগুলোয় বর্তমানে সান্ধ্য আইন জারি রয়েছে। মুলত কোটা সংরক্ষণ ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী হিসেবে নথিভুক্তির দাবিতে এ বিক্ষোভ ও সহিংসতার সুত্রপাত ঘটে। বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের গুলিতে কমপক্ষে তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ভারতীয় গণমাধ্যমে এ সংবাদ জানা যায়।
এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গুজরাটে অব্যাহত সহিংসতার মুখে সবার প্রতি শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোয় মোতায়েনের জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীর প্রায় ১০ হাজার জওয়ানকে সেখানে পাঠিয়েছে। ইতিমধ্যে গান্ধীনগর ও প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র আহমেদাবাদে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। আহমেদাবাদ, জামনগর, পাটান, সুরাট ও মোহসেনা শহরে সান্ধ্য আইন জারি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় র‌্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স, রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের পাঁচ হাজারের বেশি জওয়ান আহমেদাবাদ, সুরাট, মোহসেনা, ভিষ্ণগড়, উনঝা, রাজকোটসহ অন্য শহরগুলোরojhoasdsa গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সড়কে অবস্থান নিয়েছে।
গুজরাটে প্যাটেল সম্প্রদায়ের বিক্ষোভ থেকে চলমান সহিংসতার সূত্রপাত। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী (ওবিসি) হিসেবে নথিভুক্তি ও সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোটার দাবিতে প্যাটেলরা দু’সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ করছে। গুজরাটসহ ভারতের আটটি রাজ্যে প্যাটেল সম্প্রদায়ভুক্ত নাগরিকের সংখ্যা ২৭ কোটি। বেকারত্ব ও নানা কারণে হতাশায় নিমজ্জিত প্যাটেলদের ক্ষোভকে কেন্দ্র করে এবারের আন্দোলনের ডাক দিয়েছে পাতিদার আনামত আন্দোলন সমিতি (পিএএস)। বিক্ষোভের নেতা যুবক হার্দিক প্যাটেল এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। গত মঙ্গলবার বিকালে আহমেদাবাদের জিএমডিসি মাঠে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি আমরণ অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এর কিছুক্ষণ পরই গুজরাট পুলিশ সেখানে লাঠিচার্জ ও হার্দিক প্যাটেলকে গ্রেফতার করে। তারপর থেকে রাজ্যের উত্তরের জেলাগুলোয় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। আহমেদাবাদে অর্ধশতাধিক গাড়িতে অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি কয়েকটি সরকারি ভবন ও বিপণিকেন্দ্রে ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভকারীরা বেশ ক’টি পুলিশ ফাঁড়িতেও অগ্নিসংযোগ করে। পুলিশ লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে বলে সরকারি কর্মকর্তারা জানান।
হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, আহমেদাবাদে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের গুলিতে গত মঙ্গলবার রাতে তিনজন নিহত হয়েছেন। পুলিশের একজন পদস্থ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘বাস্ত্রাল এলাকায় পুলিশের গুলিতে দুজন মারা গেছেন। এছাড়া ঘাটলোদিয়া এলাকায় একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।’ রাজকোটে বিক্ষুব্ধ জনতা কেন্দ্রীয় কৃষি প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় এমপি মোহন কুণ্ডুরিয়ার দুটি কার্যালয় পুড়িয়ে দেয়। মোহসেনা শহরে বিক্ষোভকারীরা রাজ্যের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রজনী প্যাটেলের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। হার্দিক প্যাটেলের ডাকে গতকাল বুধবার গুজরাট রাজ্যজুড়ে বন্ধ পালিত হয়। অবশ্য গ্রেফতারের ১ ঘণ্টা পর পুলিশ হার্দিক প্যাটেলকে ছেড়ে দেয়।
অন্যদিকে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী আনন্দিবেন প্যাটেল সবার প্রতি শান্ত থাকার ও সহিংসতা পরিহারের আহ্বান জানিয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের ওপর লাঠিচার্জের ঘটনার তদন্ত হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রজনী প্যাটেল বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে এবং এজন্য দায়ী পুলিশ সদস্যদের শাস্তি দেয়া হবে। রাজ্য সরকার সহিংসতা মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তা চেয়েছে। কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রজনাথ সিং বলেছেন, গুজরাট পরিস্থিতি সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার সব রকম সহায়তা করতে প্রস্তুত। রজনাথ সিং গতকাল একাধিকবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আনন্দিবেন প্যাটেলের সঙ্গে কথা বলেছেন।
বর্তমানে গুজরাট কার্যত অচল রয়েছে। রাজ্যের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেশির ভাগ অফিস গতকাল বন্ধ ছিল। আহমেদাবাদসহ বড় শহরগুলোয় মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। আহমেদাবাদ, সুরাট ও রাজকোটে রাজ্য সরকার আগেই বাস র্যাপিড ট্রানজিট সার্ভিস বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। বন্ধ ও সান্ধ্য আইন চলাকালে গতকাল পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ার ঘটনা ঘটে বলে হিন্দুস্তান টাইমস জানায়। গুজরাট পুলিশের মহাপরিচালক পিসি ঠাকুর বলেছেন, বিক্ষোভকারীরা নয়টি থানা ও তিন ডজন যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করেছে। সহিংসতা মোকাবেলায় ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে রাজ্যের বিজেপিদলীয় মুখ্যমন্ত্রী আনন্দিবেন প্যাটেলের পদত্যাগ দাবি করেছেন গুজরাটের বিরোধীদলীয় নেতা শঙ্কর সিং ভাগেলা।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গতকাল টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বক্তৃতায় সবার প্রতি সহিংসতা পরিহার ও শান্ত থাকার আহ্বান জানান। গুজরাটি ভাষায় দেয়া ওই বক্তৃতায় মোদি বলেন, আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব।

Featured আন্তর্জাতিক