পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই ৯ বছর, শাবি ছাত্রলীগের কর্মীসভা বৃহস্পতিবার

পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই ৯ বছর, শাবি ছাত্রলীগের কর্মীসভা বৃহস্পতিবার

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) শাখা ছাত্রলীগের কর্মী সমাবেশ হবে বৃহস্পতিবার। এতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য নেতারা উপস্থিত থাকবেন। তাই এ সমাবেশকে ঘিরে শাবি ছাত্রলীগে যেমন দৌঁড়ঝাপ চলছে, তেমনি বিরাজ করছে উত্তেজনাও।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ১২টি গ্রুপের অধিকাংশ নেতাই পূর্ণাঙ্গ কমিটির দাবিতে একমত। কারণ গত ৯ বছর ধরে শাবি ছাত্রলীগে পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার। বিশেষ অতিথি থাকবেন বর্তমান সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ। আর প্রধান বক্তা থাকবেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম।

এছাড়া কর্মী সমাবেশে বিশেষ বক্তা থাকবেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নাঈম হাসান। সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন শাবি ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান চৌধুরী সুমন।

একদিকে কর্মী সমাবেশকে স্বাগত জানিয়ে বুধবার দুপুরে ক্যাম্পাসে মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।

অপরদিকে ছাত্রলীগ নেতা অঞ্জন রায়ের নেতৃত্বাধীন প্রজন্ম’৭১, হাফিজ-আবিদ ও পলাশ গ্রুপ কর্মী সমাবেশের সঞ্চালনার দায়িত্ব থেকে শাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান আসাদকে অব্যাহতি দিতে আহ্বায়ক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে। স্মারকলিপিতে ১৩৫ জন ছাত্রলীগ কর্মীর স্বাক্ষর রয়েছে।

সূত্র জানায়, ২০০৩ সালের ২৭ মার্চ শাবি শাখা ছাত্রলীগের সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়। আলী আশরাফুল কবিরকে সভাপতি ও মাসুম বিল্ল‍াহ চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট ওই কমিটি অনেক আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেলেও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে কেন্দ্র থেকে বার বার চেষ্টা করেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া যায়নি। এতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েন নানা গ্রুপে। নিজ নিজ নামে গ্রুপ তৈরি করে ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন অধিকাংশ নেতা।

বিভিন্ন অনাকাক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ১৮ জুলাই ২০০৩ সালের গঠিত কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। পরে ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীলতা থেকে ফেরাতে গত বছরের ১৬ এপ্রিল তিন মাস মেয়াদী সাত সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।

ছাত্রলীগ নেতা সামছুজ্জামান চৌধুরী সুমনকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়করা হলেন- নাঈম হাসান, আসাদুজ্জামান আসাদ, কামরুজ্জামান খান সুইট, মাহিবুল হাসান মুকিত, আতিকুর রহমান ও হাফিজুর রহমান।

আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হলে শাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক নাঈম হাসান কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি হন। পরে তিনি তার গ্রুপের দায়ভার তুলে দেন একই গ্রুপের কর্মী তুহিন ও সম্পদের হাতে।

এছাড়া গত বছরের ১ আগস্ট দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয় আরেক যুগ্ম-আহ্বায়ক হাফিজুর রহমানকে।

এ নিয়ে সাত সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি এখন ৫ সদস্য নিয়েই চলছে।

আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর ছাত্রলীগের আতিক, জুয়েল, রাশেদ-সৈকত, পলাশ ও চয়ন-উজ্জ্বল গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। ভেঙ্গে পড়ে চেইন অব কমান্ড। আর ৩ মাস মেয়াদি আহ্বায়ক কমিটির ১১ মাস হয়ে গেলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়নি।

এদিকে, গত ১১ জানুয়ারি শাবিতে ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষের সময় শাবি শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সকল গ্রুপিং-বিভেদ ভুলে এক হয়ে কাজ করলেও এখন আবার তাদের মধ্যে ফাটল দেখা দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৮ ফেব্রুয়ারি শাবি ছাত্রলীগে চয়ন-উজ্জ্বল গ্রুপ নামে নতুন আরো একটি গ্রুপের সৃষ্টি হয়।

এ নিয়ে সুমন, আসাদ, হাফিজ-আবিদ, অঞ্জন রায়ের নেতৃত্বাধীন প্রজন্ম’৭১, মুকিত, আতিক, জুয়েল, তুহিন-সম্পদ, রাশেদ-সৈকত, সুইট ও পলাশ গ্রুপ মিলে শাবিতে ছাত্রলীগের মোট গ্রুপের সংখ্যা দাঁড়ায় ১২টিতে। পদ বঞ্চিতরা কিছুদিনের মধ্যে আরো কয়েকটি নতুন গ্রুপ খুলতে পারেন বলে একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে। অবশ্য নতুন গ্রুপ সৃষ্টির পেছনে শাবি ছাত্রলীগের অনেক নেতার প্রত্যক্ষ ইন্ধন রয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার করতে প্রতিনিয়ত মরিয়া হয়ে উঠছে ছাত্রলীগের গ্রুপগুলো। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আসাদ ও পলাশ গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। কারণ গত বছর ছাত্রলীগের আসাদ গ্রুপের কর্মী পলাশ একই গ্রুপের বেশকিছু কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে নতুন একটি গ্রুপ খোলেন। নতুন গ্রুপ খোলাই ওই হাতাহাতির কারণ বলে জানা গেছে।

শাবি ছাত্রলীগের প্রজন্ম’৭১ গ্রুপের নেতা অঞ্জন রায় বলেন, ‘সংগঠনকে শক্তিশালী করে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে রুখতে ত্যাগী-পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের দিয়ে জরুরি ভিত্তিতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা উচিত।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাবি ছাত্রলীগের পদ বঞ্চিত অনেক নেতা-কর্মী জানান, ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষের পর বর্তমানে শাবি ছাত্রলীগ দুঃসময় অতিবাহিত করছে। এমন সময়ে যোগ্যদের দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জোর দাবি জানান তারা।

শাবি ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সামছুজ্জামান চৌধুরী সুমন বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ কমিটির ব্যাপারে আমরা এখনো কেন্দ্রের নির্দেশনা পাইনি। আর কেন্দ্রের নির্দেশনা না পেলে এ ব্যাপারে কিছুই বলা সম্ভব নয়।’

এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগের মুঠোফোনে কয়েকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

রাজনীতি