গুজরাটে সহিংসতায় নিহত ৬, সেনা তলব

গুজরাটে সহিংসতায় নিহত ৬, সেনা তলব

ভারতের গুজরাটে কোটার দাবিতে প্যাটেল সম্প্রদায়ের আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় আজ বুধবার ছয়জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচজন পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানে সেনা তলব করা হয়েছে বলে দ্য হিন্দুর খবরে বলা হয়েছে।yagsdias
আহমেদাবাদ, সুরাট, মেহসানা, বিশনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। এসব এলাকাসহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। উত্তর গুজরাটে উত্তেজিত জনতা একজন মন্ত্রী ও দুজন আইন প্রণেতার কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। দুটি ব্যাংকের এটিএম বুথেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গুজরাটের আহমেদাবাদে কোটার দাবিতে প্যাটেল সম্প্রদায়ের আন্দোলন গতকাল মঙ্গলবার সহিংস বিক্ষোভে রূপ নিলে পরিস্থিতি সামাল দিতে কারফিউ জারি করা হয়। আহমেদাবাদ ও সুরাটের বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ জারির পাশাপাশি কয়েকটি এলাকায় মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট সেবা স্থগিত করা হয়েছে। আজ বুধবার এনডিটিভি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইনের খবরে এ কথা জানানো হয়।

বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, চাকরি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে অধিক সুযোগ নিশ্চিত করার কোটার দাবিতে ভারতের গুজরাটে প্যাটেল সম্প্রদায়ের তিন লাখের বেশি মানুষ গতকাল বিক্ষোভ করেছে। আহমেদাবাদে এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ২১ বছর বয়সী হার্দিক প্যাটেল। নিম্ন বর্ণের কয়েকটি গোষ্ঠীসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হলে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি সহিংস রূপ ধারণ করে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিজ রাজ্য গুজরাটে মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ প্যাটেল সম্প্রদায়ের। এই সম্প্রদায়ের লোকজন হীরক প্রক্রিয়াজাত করার শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। অনেকে হীরকের ব্যবসা বা কৃষিকাজে যুক্ত। অর্থনৈতিকভাবে তারা যথেষ্ট প্রভাবশালী। বিক্ষোভকারীদের ভাষ্য, নিম্ন বর্ণের জন্য কোটার বিধান রাখায় প্যাটেল সম্প্রদায়ের লোকজনকে অসুবিধায় পড়তে হয়। শিক্ষা ও চাকরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই অসুবিধার মুখোমুখি না হওয়ার জন্যই তারা কোটার দাবি জানাচ্ছে।

প্যাটেল সম্প্রদায়ের বিক্ষোভকারীদের ভাষ্য, ভারতের জটিল সামাজিক কাঠামোতে কোটা প্রথা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অন্যদের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। কলেজে ভর্তি বা ছোট ও মাঝারি মানের শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে গেলে এই প্রথার কারণে অনেককে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়।

পেশায় ব্যবসায়ী হার্দিক প্যাটেল সমবেত জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের এই আন্দোলন কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নয়। সরকার যদি আমাদের দাবি না মানে, তাহলে ২০১৭ সালে এই রাজ্যে আর পদ্ম ফুটবে না।’

মূলত এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে হার্দিক প্যাটেল গুজরাটে ২০১৭ সালে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিজেপির ভাগ্যে কী ঘটতে পারে, সে দিকে সতর্ক করে দিয়েছেন। গুজরাটে বিজেপির সঙ্গে প্যাটেল সম্প্রদায়ের সম্পর্কটা এত দিন ভালোই ছিল। তাই প্যাটেলদের দাবি না মানলে বিজেপির নির্বাচনী প্রতীক পদ্ম যে হালে পানি পাবে না, সে সমীকরণটি মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন হার্দিক প্যাটেল।

ভারতে অনগ্রসর সম্প্রদায়ের জন্য ওবিসি কোটা আছে। এই কোটার মাধ্যমে রাষ্ট্র অনগ্রসর সম্প্রদায়কে শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সুযোগ করে দেয়।

গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আনন্দিবেন প্যাটেল। যিনি এই সম্প্রদায়েরই। তবে কোটার দাবিতে প্যাটেলদের আন্দোলনের সঙ্গে একমত নন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আন্দোলনকারীদের দাবি প্রত্যাখ্যান করে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন।

হার্দিক প্যাটেল মুখ্যমন্ত্রীর এই আহ্বানে সাড়া দেওয়ার ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখাননি। তিনি বলেন, তাঁর (মুখ্যমন্ত্রী) এই আহ্বানের কোনো মানে নেই। এটি বিক্ষোভে শুধু বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে। তিনি যদি এ ব্যাপারে আন্তরিক হন, তবে তাঁকে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু ঘোষণা দিতে হবে।

Featured আন্তর্জাতিক