যুদ্ধাপরাধ মামলায় বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ বেআইনী: ট্রাইব্যুনাল

যুদ্ধাপরাধ মামলায় বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ বেআইনী: ট্রাইব্যুনাল

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন’৭৩ অনুযায়ী কোনও বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ করা যাবে না বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিজামুল হক নাসিমকে স্বপদ থেকে সরে যেতে বৃটেনের তিন আইনজীবী যে চিঠি দিয়েছেন তা প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা গোলাম আরিফ টিপু সোমবার ট্রাইব্যুনালের নজরে আনলে ট্রাইব্যুনাল এ কথা জানান।

ট্রাইব্যুনালে বিচারপতি হিসেবে এ সময় উপস্থিত ছিলেন এটিএম ফজলে কবীর এবং এ কে এম জহির আহমেদ।

এ বিষয়ে দেলওয়ার হোসেন সাঈদীকে সোমবার এজলাসে হাজির করা হয়।

বিদেশি আইনজীবী নিয়োগের বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি জানান, তার আইনজীবীদের পরামর্শ দিতেই বিদেশি এ তিন আইনজীবীকে নিযোগ দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন- যুগোশ্লাভিয়া এবং রুয়ান্ডার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আইনজীবী স্টিভেন কে কিউসি, ব্রিটিশ আইনজ্ঞ জন কামেহ ও টবি ক্যাডম্যান।

তাদের সঙ্গে আপনার যোগাযোগ রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সাঈদী ট্রাইব্যুনালকে জানান, আমরতো তাদের সঙ্গে যোগাযোগের কোনও সুযোগ নেই। তাদের সঙ্গে মূলত আমার আইনজীবীরাই যোগাযোগ করে থাকেন।

পরে সাঈদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, তার সঙ্গে বিদেশি এ আইনজীবীদের কখনও কথা হয়নি।

সাঈদীদের জিজ্ঞাসাবা শেষে ট্রাইব্যুনাল জানান, বিদেশি এ আইনজীবীরা বাংলাদেশের নাগরিক নয়, তারা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলেরও সদস্য নন। তাই তারা কোনভাবেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন না। কারণ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ৭৩ অনুযায়ী কোনও বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ করা যাবে না।

ট্রাইব্যুনাল আরও জানান, এ তিনজন আলজাজিরা টিভিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনাল নিয়ে ইন্টারভিউ দিয়েছেন এবং বিভিন্ন আর্টিক্যাল লিখেছেন। যা ট্রাইব্যুনালকে বিতর্কিত করেছে। তাই এ তিনজনের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ড বারের আচরণ বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

আদেশ ঘোষণার পর রাষ্ট্রপক্ষের কৌশলী সৈয়দ হায়দার আলী ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিদের বলেন, আপনারা আজ যে আদেশ দিয়েছেন সেটি স্বাধীন দেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থায় মাইল ফলক হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

এর আগে ৮ নভেম্বর ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হককে তার পদ থেকে অবিলম্বে সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে ব্রিটিশ তিন আইনজীবী ই-মেইলের মাধ্যমে একটি চিঠি পাঠান। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটককৃত মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে বিদেশি তিন আইনজীবী এ চিঠি পাঠান।

এ তিন আইনজীবী চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সঙ্গে আপনার সরাসরি সম্পৃক্ততা এ ট্রাইব্যুনালের গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। বিষয়টি আমরা আগেই উত্থাপন করেছিলাম।’

চিঠিতে বলা হয়, ‘এ তদন্ত কমিশন আমাদের মক্কেল মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ১৯৯৩ সালে তদন্ত কাজ চালিয়েছিলো। আমরা মনে করি তদন্ত কমিশনের সঙ্গে আপনার এ সম্পৃক্ততা ট্রাইব্যুনালের গ্রহণযোগ্যতা এবং স্বাধীনতা ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। এ অবস্থায় আমাদের মক্কেল এ ট্রাইব্যুনালের কাছ থেকে ন্যায় বিচার পাওয়ার বিষয়ে দারুণভাবে উদ্বিগ্ন।’

চিঠিতে আরও বলা হয়, ‌‘ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, গণতদন্ত কমিশন তদন্ত শেষে যে প্রতিবেদন এবং ডকুমেন্ট জমা দিয়েছিলো তার ওপর নির্ভর করবে তারা। আর এ তদন্ত কমিশনের সঙ্গে আপনার সরাসরি সম্পৃক্ততা এ আদালতের গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। তাই আপনার প্রতি আমরা পূর্ণ সম্মান জানিয়ে অনুরোধ করছি, আপনি চেয়ারম্যান পদ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিন।’

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর