আইএসে যা করছেন নারীরা

আইএসে যা করছেন নারীরা

জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএসে নারীর যোগদান নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে। এর পেছনে কারণটা কী? কীভাবে নারীদের প্রলুব্ধ করে দলে ভেড়াচ্ছে আইএস! সেখানে গিয়ে নারীরা করছেনই বা কী?sdfsdrewer
এসব প্রশ্ন সামনে রেখে এ ব্যাপারে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি অনলাইন। প্রতিবেদনে নারীর ক্ষেত্রে আইএসের দ্বৈতনীতি অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে।
প্রথমত, আইএস নারীকে পণ্য হিসেবে বিবেচনা করে। তারা নারীদের বিক্রি করে, পুরস্কার হিসেবে যোদ্ধাদের উপহার দেয়।
ইরাকের মসুল থেকে পাওয়া ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, জঙ্গিরা ইয়াজিদি মেয়েদের নিয়ে দরদাম করছে। ওই মেয়েদের অনেকে ছিল অপরিণত বয়সের।
এখনো আইএসের হাতে প্রায় দুই হাজার ইয়াজিদি নারী জিম্মি রয়েছেন। তাদের কাছ থেকে অল্প কিছু নারী পালাতে পেরেছেন। সম্প্রতি পালিয়ে আসা একজনের ভাষ্য, আইএস তাঁদের বিক্রির জন্য রাখত। দলে দলে যোদ্ধারা তাঁদের কিনতে আসত। কোনো কাকুতি-মিনতিতেই কিছু হতো না।
এ গেল একদিকের কথা। অন্যদিকে বিভিন্ন স্থান থেকে নিজেদের নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডে যেসব মুসলিম নারী আসেন, তাঁদের নিয়ে আইএসের বড় ধরনের পরিকল্পনা আছে। এই পরিকল্পনার মূলে রয়েছে তাদের কথিত ‘খেলাফত রাষ্ট্র’ গড়ে তোলা।
কিংস কলেজ লন্ডনের ইসলামিক স্টাডিজের বিশেষজ্ঞ ক্যাথেরিন ব্রাউনের ভাষ্য, তারা (আইএস) চায় নারীরা তাদের সংগঠনে যোগ দিক। তারা নারীদের তাদের নতুন রাষ্ট্রের ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করে। তারা নাগরিক চায়।
এই বিশেষজ্ঞের ভাষ্যমতে, কৌতূহলী ব্যাপার হলো, সবাই আইএসের হত্যাযজ্ঞ নিয়ে কথা বলে। কিন্তু এর বিপরীতে তারা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তারা একটি নতুন রাষ্ট্র সৃষ্টি করতে চায়। তারা খুব করে চায়, ওই কাল্পনিক রাজনীতির অংশ হিসেবে নারীরা যোগ দিক।
জিহাদিদের মনোভাব সম্পর্কে গভীর অন্তর্দৃষ্টি থাকা আল-কায়েদার সাবেক সদস্য আইমেন দীনের বিশ্বাস, নারীদের প্রতি আইএসের দৃষ্টিভঙ্গি আল-কায়েদা বা তালেবানের চেয়ে অনেক ভিন্ন। ভিত্তিসহ একটি স্থায়ী সমাজ গড়তে চায় আইএস। ইসলামিক স্টেটের জন্য পরিবার গড়তে তারা ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্য এশিয়াসহ সমগ্র মুসলিম সমাজ থেকে নারী সদস্য টানছে।
আইএসের খেলাফতে আসার জন্য অনলাইনে বিভিন্ন ভাষায় আহ্বান জানানো হচ্ছে। এই ডাকে নারীদের সাড়া দেওয়ার হার বাড়ছে।
আইমেন দীনের ভাষ্য, এখানে এক ধরনের ভাববিলাসী উপাদান আছে। তবে আইএসে নারীর জীবন সুখের নয়, একটা দুর্বিষহ জীবন।
তালেবান বা আল-কায়েদার থেকে ব্যতিক্রম হলো, আইএস তাদের দলে যোগ দেওয়া অনেক পশ্চিমা নারীদের সামাজিক গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত করে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে নরওয়ের গবেষক মাহ-রুখ আলী আইএসে নারী ও প্রচারণা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। তাঁর ধারণা, অনলাইনে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া আইএসের একটি উদ্দেশ্যপূর্ণ কৌশল। তালেবান ও আল-কায়েদার চেয়ে আইএস নারীদের অনেক বেশি সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করছে।
মাহ-রুখ আলী বলেন, প্রতিদিন টুইটারে আইএসের পক্ষে প্রায় এক লাখ টুইট পোস্ট হয়। এর মধ্যে অনেক টুইটই পশ্চিমা সমাজ থেকে আইএসে যোগ দেওয়া নারীদের কাছ থেকে আসে বলে প্রতীয়মান হয়।
আইমেন দীনের ভাষ্য, নারীরা আইএসের অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। এর মধ্যে রয়েছে চিকিৎসাসেবা, শিক্ষাদীক্ষার কাজ, খাজনা সংগ্রহ। ইসলামিক স্টেটের টিকে থাকার জন্য নারী অপরিহার্য।

Featured আন্তর্জাতিক