তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, গণতন্ত্র অপরাধীদের হালাল করার ফর্মূলা না। গণতন্ত্রের কপাট বন্ধ নয়, উন্মুক্ত। কিন্তু যুদ্ধাপরাধী-জঙ্গিবাদী-মৌলবাদী-আগুনসন্ত্রাসী-খুনী অপরাধীদের জন্য গণতন্ত্র কপাট কখনই খোলা ছিল না। তিনি বলেন, সামরিক শাসন বিরোধী দীর্ঘ গণতান্ত্রিক সংগ্রাম এবং ৯০-এর ঐতিহাসিক গণঅভ্যূত্থানের জনগণের সংগ্রামের কাছে সামরিক শাসনের ধারার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের বন্ধ কপাট খুলে যায়। তবে গণতন্ত্রের মুক্ত কপাট দিয়ে চিহ্নিত গণতন্ত্র বিরোধী শক্তি খুনী-দুর্নীতিবাজ-লুটেরা-সা¤প্রদায়িক শক্তি-জঙ্গিবাদী ও মৌলবাদী শক্তি, যুদ্ধাপরাধীরা গণতন্ত্রের বাগানে প্রবেশ করে গণতন্ত্রের সাজানো বাগান নষ্ট ও তছনছ করা শুরু করে দেয়।
আজ রবিবার মন্ত্রণালয়ের তথ্য অধিদফতরের পিআইপি সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সন্মেলনে এসব কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার ‘গণতন্ত্রের বন্ধ কপাট খুলে দিন’ বক্তব্যের বিষয়ে সরকারের বক্তব্য উপস্থাপনের লক্ষ্যে সংবাদ সন্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় প্রধান তথ্য কর্মকর্তা তছির আহাম্মদ ও সিনিয়র উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
এ সংবাদ সন্মেলনে তথ্যমন্ত্রী উদাহরণ হিসেবে তিনি ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা-হত্যা, কিবরিয়া হত্যা-আহসান উল্লাহ মাষ্টার হত্যা-মঞ্জুরুল ইমাম হত্যা-মমতাজ হত্যাসহ অসংখ্য রাজনৈতিক হত্যা, ১৭ আগস্টের দেশব্যাপী বোমা হামলা, রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে হামলা, যশোরে উদীচি মঞ্চে হামলা-হত্যা, সিপিবির জনসভায় বোমা-হত্যা, মেলা, পীর-ফকিরের মাজারে হামলার ঘটনা তুলে ধরেন। মাসের পর মাস ধরে ঘোষণা দিয়ে যাত্রীবাহী বাসে বোমা হামলা, সাধারণ যাত্রীদের পুড়িয়ে মারা বীভৎস আগুনসন্ত্রাস চলে বলেও মন্ত্রী অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সরকার গঠন করার পর, সংবিধান থেকে জঞ্জাল অপসারণ ও যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর থেকেই গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার জন্য মরিয়া আক্রমণ শুরু হয়।
বেগম জিয়ার এই বক্তব্য গণতন্ত্রের জন্য নয়, তার মনের এই খেদোক্তি ‘আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে ব্যর্থতা থেকে উৎসারিত’ উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, তার এই কথা বলার মাধ্যমেই প্রমাণ করেছেন যে, দেশে অবাধ গণতন্ত্র বিরাজ করছে, মতপ্রকাশের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। কোথায় গণতন্ত্র অবরুদ্ধ, কোথায় গণতন্ত্রের কপাট বন্ধ বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি পাল্টা প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, গণতন্ত্র মানে যদি আইনের শাসন হয়, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হয়, গণমাধ্যম ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হয়, বাক-মুক্তির মত প্রকাশের স্বাধীনতা হয়, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির শাসন হয়, সংবিধান ও আইন অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়, তাহলে গণতন্ত্র কিভাবে অবরুদ্ধ কিংবা গণতন্ত্রের কপাট বন্ধ থাকে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্রের কপাট খোলাই আছে। গণতন্ত্র অবরুদ্ধও নয়। অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে জঙ্গিরা। গণতন্ত্রের খোলা দরজা দিয়ে আগুনসন্ত্রাসী-নাশকতাকারীদের নিয়ে পেট্রোল বোমা ও গ্রেনেড ছুড়তে ছুড়তে বেগম জিয়া নিজেই গণতন্ত্রের চৌকাঠের ওপারে চলে গেছেন। গণতন্ত্রের কপাট খোলাই থাকবে। কিন্তু আগুনসন্ত্রাসী-জঙ্গিরা চৌকাঠের ওপারেই থাকবেন। ‘বিএনপি কখনও সন্ত্রাসের রাজনীতি করেনি এবং সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয়ও দেয়নি’ বেগম জিয়ার এই বক্তব্য ডাহা মিথ্যা উল্লেখ করে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, আগুনসন্ত্রাস-নাশকতা-অন্তর্ঘাত গণতন্ত্রের কোন সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে কি-না । তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের বন্ধ কপাট খুলে দেয়ায় কথা বললেও বেগম জিয়া নিজেই নিজেকে গণতন্ত্রের কপাটের বাইরে নিয়ে গেছেন। আজ উনি এক কাঁধে আগুনসন্ত্রাসী আরেক কাঁধে যুদ্ধাপরাধী-জঙ্গিবাদী-মৌলবাদীদের নিয়ে গণতন্ত্রের কপাট দিয়ে আবারও গণতন্ত্রের বাগানে ঢোকার কথা বলছেন। এ যে ভূতের মূখে ‘রাম-নাম’।
গণতন্ত্র আগুনসন্ত্রাসী-যুদ্ধাপরাধী-জঙ্গিবাদী-মৌলবাদী-সন্ত্রাসবাদী-খুনী-অপরাধীদের হালাল করার ফর্মূলা না-কি, গণতন্ত্র মানে আইনের শাসন, ন্যায় বিচার – আবারো প্রশ্ন রেখে তথ্যমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্র, অপরাধী যেই হোক, তাকে হালাল করে না। বেগম খালেদা জিয়া, যুদ্ধাপরাধী- জঙ্গিবাদী-মৌলবাদীদের হাত ধরে আগুনসন্ত্রাস-নাশকতা-অন্তর্ঘাতের পথে ওয়ানওয়ে টিকেট কেটে গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ধ্বংসের পথে যাত্রা করেছিলেন। তিনি বলেন, উনি রিটার্ন টিকেট সাথে নেননি। কারণ গণতন্ত্র ধ্বংস করে, সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ধ্বংস করে, অস্বাভাবিক সরকার, অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরিই ছিল তার লক্ষ্য। আগুনসন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, গ্রেনেড হামলা ও যুদ্ধাপরাধী রক্ষার ভূমিকা, খালেদার সব পরিচয়কে আড়াল করে দিয়েছে। এই ধরনের অপরাধী গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য কি-না প্রশ্ন রাখেন মন্ত্রী।
তথ্যমন্ত্রী পচাঁত্তর পরবর্তি সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ’৭৫ এর পরবর্তী দীর্ঘ সামরিক শাসন ও সামরিক শাসনজাত রাজনৈতিক দলের শাসনামলে সামরিক ফরমান, সামরিক আইন, সংবিধানে চরম অগণতান্ত্রিক সংশোধনীসমূহ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাহীনতা, সংসদের সার্বভৌমত্বহীনতা, সংবাদপত্রসহ বাক-ব্যক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের ক্ষেত্রে স্বাধীনতাহীনতা, নানা ধরণের অগণতান্ত্রিক কালাকানুন, গণতন্ত্রের কপাট শুধু বন্ধ করেই রেখেছিল না, গণতন্ত্র ও দেশের উপর জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসেছিল।