বিশ্ব এথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপের আকর্ষণীয় ইভেন্ট ১০০মিটার দৌঁড় ইভেন্টে আজ শনিবার মুখোমুখি হচ্ছেন সময়ের আলোচিত জ্যামাইকান স্প্রিন্টার উসাইন বোল্ট ও বিতর্কিত মার্কিন তারকা জস্টিন গ্যাটলিন। শনিবার বেইজিংয়ের ট্র্যাকে ১০০ মিটারের হিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এ ২ হাই বোল্টেজ তারকা। বেইজিংয়ের ঐতিহাসিক স্টেডিয়াম বার্ড নেস্টে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকে ৩টি স্বর্ণপ্রদক জয়ের মধ্যদিয়ে বিশ্ব এথলেটিকসে একক আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছেন বোল্ট। ২০০৮ সালের সে অলিম্পিকের পর থেকে ২০১১ সালে দিগুতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব প্রতিযোগিতার ১০০ মিটারে অংশগ্রহণের সময় পায়ের পাতার ইনজুরিতে পড়ার আগে পর্যন্ত ১০টি ব্যক্তিগত ইভেন্টে অংশ নিয়ে ৯টিতেই স্বর্ণপদক জিতে নিয়েছেন বোল্ট।
এদিকে মার্কিন এথলেট গ্যাটলিন এমন এক ক্রীড়াবিদ যিনি ডোপ টেস্টে মাদক গ্রহনের বিষয়টি ধরা পড়ে ২ দফা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছেন। ২০০৬ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়েছে গ্যাটলিনকে। ২০০৪ সালে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণপদক জয়ের পর ২০০৫ সালে হেলসিংকিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব প্রতিযোগিতায়ও স্বর্ণপদক জয় করেছিলেন গ্যাটলিন। এরপরই ডোপ টেস্টে ধরা পড়েন তিনি।
নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ২০১২ সালে ৬০ মিটার বিশ্ব ইনডোরে স্বর্ণপদক জয়ের মাধ্যমে আলোচনায় ফেরা গ্যাটলিন লন্ডন অলিম্পিকের ১০০ মিটার ইভেন্টে জিতে নেন ব্রোঞ্জ পদক। এরপর মস্কোতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব প্রতিযোগিতায় তিনি জয় করেছেন রৌপ্য পদক। যদিও বোল্টের সঙ্গে হেড টু হেড লড়াইয়ে ৬-১ ব্যবধানে পিছিয়ে রয়েছেন গ্যাটলিন। তবে পরিসংখ্যানকে খুব একটা পাত্তা দিচ্ছেন না বোল্ট। তিনি জানেন অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনের সুযোগ নিশ্চিত করেছেন গ্যাটলিন।
বোল্ট বলেন, প্রতিযোগিতা মানে প্রতিযোগিতা। এখানে সব সময় কে সুযোগের সদ্ব্যাবহার করতে পারে সেই সেরা হয়। নিয়মকে মানতে হবে। তিনি তার নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ কাটিয়েই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনের সুযোগ পেয়েছেন। আমি যেমন তাকে নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নই, তেমনি পরিসংখ্যান নিয়েও আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই। কারণ (একটি প্রতিযোগিতায়) কি ঘটবে তা আপনি কখনোই আগাম জানেন না।
২০০৯ সালে ১০০ ও ২০০ মিটার ইভেন্টে বিশ্ব রেকর্ড গড়া বোল্ট জানান, তিনি তার হাড়ের সমস্যা কাটিয়ে উঠেছেন। এ ইনজুরির কারণে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে দূরপাল্লার দৌড়ে অংশ নিতে পারেননি। মৌসুমের শুরুর সমস্যা কাটিয়ে গত মাসে তিনি পরিপূর্ণভাবে ট্র্যাকে ফিরে এসেছেন। এসময় লন্ডনের ডায়মন্ড লীগে অংশ নিয়ে ৯.৮৭ সেকেন্ড সময় নিয়ে জিতে নিয়েছেন শীর্ষ পদক। তিনি বলেন, আমি আরো বেশী প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক প্রতিযোগিতা দেখতে চেয়েছিলাম। তবে প্রতিযোগিতার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে অনুশীলন।
২০১৫ সালে এসে ১০০ মিটারের এ রেকর্ডটি বোল্টকে ফের তুলে এনেছে র্যাংকিংয়ের ষষ্ঠ অবস্থানে। এই তালিকার ১ম স্থানটি অবশ্য দখল করে নিয়েছেন গ্যাটলিন। গত মে মাসে দোহায় ৯.৭৪ সেকেন্ড সময় নিয়ে ওই স্থানটি দখল করেছেন মার্কিন দৌড়বিদ। এরপর তিনি দুবার সময় নিয়েছেন যথাক্রমে ৯.৭৫ ও ৯.৭৮ সেকেন্ড। গত মাসে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে গ্যাটলিন বলেন, এ ৪ বছর দৌঁড়ানোর সময় আমার মনে হয়েছে বয়স ৩৩ বছর থেকে কমে ২৭ বছরে চলে এসেছে। যদিও নিষিদ্ধ হবার আগে আমি বেশ ক্লান্ত ছিলাম।
মার্কিন ওই অ্যাথলিট বলেন, হয়তো ক্রীড়া থেকে দূরে থাকাটা আমার জন্য ছিল আশির্বাদ। এর ফলে আমি সঠিক পথে ফিরতে পেরেছি। তবে খেলাটি থেকে দূরে থাকাটা ছিল আমার জন্য কষ্টকর। এ সময় অবশ্য আমি পর্যাপ্ত বিশ্রাম পেয়েছি এবং প্রতিপক্ষ ক্রীড়াবিদদের বেড়ে ওঠাটা অবলোকন করতে পেরেছি। হয়তো এটি আমার জন্য একটি বাড়তি সুবিধাও। এদিকে বোল্টের স্বদেশী আসাফা পাওয়েল বলেছেন, আমি যতটুকু দেখেছি, গ্যাটলিন ভাল দৌড়াচ্ছেন। সাবেক এ বিশ্ব রেকর্ডধারী অবশ্য বিশ্ব সেরা এই প্রতিযোগিতায় ব্যর্থ হয়েছেন। তবে এই মৌসুমে তিনি বেশ সপ্রতিভ আছেন।
পাওয়েল বলেন, আমি অবশ্যই প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত। এ কারণেই আমি এখানে এসেছি। যদিও আমার ব্যক্তিগত নৈপুন্য অন্যদের চেয়ে সেরা নয়, তবে নিজের সেরাটা নিয়েই আমি খুশি। আসন্ন প্রতিযোগিতায় আরেক প্রতিযোগির নাম যুক্তরাষ্ট্রেরই এথলেট টাইসন গে। তিনিও অবশ্য ডোপিং কেলেঙ্কারিতে পড়ে কাটিয়েছেন এক বছরের নিষেধাজ্ঞা। ওই ডোপ পাপিদের তালিকায় ছিলেন আসাফা পাওয়েলও। এসব আলোচনায় অবশ্য কানাডীয় ২০ বছর বয়সী দৌড়বিদ আন্দ্রে ডি গিয়াকেও বাইরে রাখা যায়না। যিনি এনসিএএ প্রতিযোগিতায় ১০০ ও ২০০ মিটারে বাতাসের অনুকূলে দৌঁড়ে যথাক্রমে ৯.৭৫ ও ১৯.৫৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে সেরা হয়েছেন। প্যান আমেরিকান গেমেও তিনি ১০.০৫ ও ১৯.৮৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে দুটি ইভেন্টেই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন।