ওষুধের দাম কিছুটা বেড়েছে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ওষুধের দাম কিছুটা বেড়েছে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ওষুধের দাম কিছুটা বেড়েছে বলে স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক। তিনি বলেন, ‘খুচরা দোকানিদের আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না’।

বুধবার ওষুধ শিল্প সমিতি, ওষুধ আমদানিকারক সমিতি ও ওষুধের মূল্য নির্ধারণ কমিটির সঙ্গে বৈঠককালে মন্ত্রী একথা বলেন।

ওষুধের দাম বৃদ্ধি সংক্রান্ত সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশের প্রেক্ষিতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওষুধ পরিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল কালাম আজাদ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আমির হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের শুরুতে ওষুধ পরিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমি মাঠ পর্যায়ে গিয়ে ওষুধের দাম যে বেড়েছে, এর কোনো সত্যতা পাইনি।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এক বোতল সিরাপের দাম ছিল ৩২ টাকা। এখন তা কিভাবে ৬৫ টাকা হলো? এতো দাম বাড়া কোনোভাবেই ঠিক নয়। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা দাম বাড়তে পারে। কিন্তু এতো বেশি দাম নেওয়া কাম্য নয়।’

মন্ত্রীর বক্তব্যের পর ওষুধ শিল্প সমিতির নেতা এসএম শফিউজ্জামান বলেন, ‘বিশ্বে ওষুধের দাম সবচেয়ে সস্তা বাংলাদেশে। এর চেয়ে সস্তা ওষুধ আর কোনো দেশে নেই। আমি নিজে ওষুধ কিনতে গিয়ে দেখেছি, যে ওষুধের এক ফাইল সিঙ্গাপুরে এক হাজার ডলারে কিনতে হয়, তা বাংলাদেশে পাওয়া যায় মাত্র ৩৬০ টাকায়।’

তিনি বলেন, ‘ওষুধের দাম বেড়েছে, অস্বীকার করবো না। বোতলের দাম বেড়েছে, কাস্টমস ডিউটি বেড়েছে। তাই কিছু ওষুধের দাম বেড়েছে।’

এর উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘সিঙ্গাপুরে একজন মন্ত্রীর বেতন ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। একজন সচিব-যুগ্ম সচিবের বেতন ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। তাদের সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা চলে না। আপনারা যদি বিদেশে গিয়ে এক ডলারের ওষুধ ৫০ ডলারে বিক্রি করতে পারেন, তাতে আমাদের আপত্তি নেই।’

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস’র নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘প্রতি বছর ওষুধের দাম সমন্বয় করার নিয়ম রয়েছে। ডলারের দাম বাড়লে প্রতি মাসেও দাম সমন্বয় করার নিয়ম রয়েছে। এসব নিয়ম থাকা সত্ত্বেও আমরা দাম বাড়াই না। সংবাদপত্রের প্রতিবেদন দেখলে মনে হয়, কোনো কোনো ওষুধের দাম ৫ থেকে ১০ হাজার শতাংশ বেড়েছে। একটা ওষুধের দামও বাড়েনি।

গণমাধ্যম পুরোপুরি মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করছে। যে ওষুধ বাংলাদেশ ৮ টাকায় বিক্রি করি, সে ওষুধ কানাডায় ৮৪ টাকায় বিক্রি হয়। এসব দেখে দু:খ হয়, বাংলাদেশে কি ওষুধ বিক্রি করা উচিত।’

তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমে আর ভরসা রাখতে পারি না। সবকিছুতেই তারা নেতিবাচক। তাই ওষুধ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা গণমাধ্যমকে কোনো কাজে ব্যবহার করতে চান না। এ ধরনের নেতিবাচক সংবাদে রফতানি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যখন একটি বিদেশি প্রতিনিধি দল ওষুধ কেনার ব্যাপারে কথা বলতে এসেছেন, তখন গণমাধ্যমে ওষুধের দাম নিয়ে লেখা ব্যাপক ক্ষতি বয়ে আনবে। তারা বাংলাদেশ থেকে ওষুধ না কিনে ভারত বা অন্য কোনো দেশে চলে যাবেন। গণমাধ্যমের এসব খবরে কারোরই লাভ হচ্ছে না। কোনো কোনো ওষুধের দাম ১৮ বছরে ৩০ পয়সা বাড়িয়েছি। এমন নজিরও আমাদের রয়েছে।’

নাজমুল হাসান পাপনের বক্তব্যের জবাবে যুগান্তরের সাংবাদিক মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, ‘গণমাধ্যম যদি মিথ্যা সংবাদই পরিবেশন করে থাকে, তবে তাতে আপনাদের ক্ষতি হওয়ার কথা নয়।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, ‘ওষুধ কোম্পানিগুলো দাম না বাড়ালেও খুচরা বিক্রেতারা ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছেন। এসব খুচরা বিক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’

জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘ওষুধ পরিদফতরের ৫ হাজার কিংবা ৫০ হাজার লোক নিয়োগ দিয়েও এর দাম খুচরা পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। কিছু নকল ওষুধও তৈরি হচ্ছে। এগুলো কে দেখবে ওষুধ পরিদফতর নাকি পুলিশ?।’

অর্থ বাণিজ্য